ক্রীড়া্ প্রতিবেদক

২৩ মার্চ, ২০১৬ ২১:৫৭

ভারতকে হারাতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৪৭ রান

বাংলাদেশের চাই ১৪৭ রান। তাতেই সম্পন্ন হবে ভারত বধ। টস জিতে বোলিং নিয়ে স্লো পিচের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারতে  ১৪৬ রানে বেঁধে রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলদেশ।

পিচে টার্ন আছে, এই পিচে এটাই যথেষ্ট কিনা প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে ম্যাচের শুরু থেকেই টাইগার বোলাররা দারুণ বোলিং করেছেন। সৌম্য, সাব্বিরের নেতৃত্বে ফিল্ডিংও হয়েছে দেখার মত। বিশেষ করে যেভাবে পান্ডের ক্যাচ যেভাবে নিলেন সৌম্য তা অনেক দিন মনে রাখবে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

ভারতের প্রথম উইকেট নেন কাটার মুস্তাফিজই। মুস্তাফিজের করা দ্বিতীয় ওভার থেকে ১৫ রান তোলার পর রোহিত শর্মাকে সাব্বিরের নিরাপদ হাতে ফেরান তিনি। সাকিব ফেরান ধাওয়ানকে। ম্যাচের সবচেয়ে কাঙ্খিত উইকেট নিয়েছেন অবশ্য শুভাগত হোম। ভারতের সেরা ব্যাটসম্যানকে পরিষ্কার বোল্ড করেই তাসকিনের জায়গা খেলতে যাওয়া এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।

টস জেতা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অবশেষে অষ্টমবারে সফল। টি২০ বিশ্বকাপে গ্রুপ টুয়ে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বুধবার বেঙ্গালুরুতে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। টসে জিতে আগে ফিল্ডিং করতে নেমে প্রায় সফলই বলা চলে মাশরাফি বাহিনী। কারণ বিশ্বমানের ব্যাটিং লাইন আপ নিয়েও ১৫০ ছাড়াতে পারেনি ভারত। বাংলাদেশী বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আগে ব্যাট করতে নেমে সাত উইকেটে ১৪৬ রান সংগ্রহ করেছে ভারত। সেমির স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে হলে বাংলাদেশের দরকার ১৪৭ রান। বোলাররা তাদের কাজটি করেছে ভালোমতোই, এবার ব্যাটসম্যানদের পালা।

টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই বেশ সাবলিল ঢঙে ব্যাট করতে থাকেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। রানের চাকাও দ্রুত ঘুঁড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে দুটি ছক্কার মার খেলেও শেষ বলে সাজঘরে ফেরত পাঠান রোহিত শর্মাকে। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে মুস্তাফিজকে ছক্কা হাকাতে গিয়ে সাব্বিরের হাতে তালবন্দী হন রোহিত। তিনি করেন ১৬ বলে ১৮ রান। ভারতের দলীয় রান তখন ৪২।  

সপ্তম ওভারে আবারো বাংলাদেশ শিবিরে উল্লাস। এবার সাকিব আল হাসান। সপ্তম ওভারের শেষ বলে ভারতের আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কিছুই করার ছিল না ধাওয়ানের। পুরোপুরি পরাস্ত। সাজঘরে ফেরার আগে ধাওয়ান করে যান ২২ বলে ২৩ রান। তার ইনিংসে ছিল দুটি চার ও একটি ছক্কার মার।

আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের জয়ের নায়ক বিরাট কোহলি জ্বলে উঠতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ভারতের এই পোস্টারবয়কে বেশিদূর এগোতে দিলেন না শুভাগত। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে কোহলিকে সরাসরি বোল্ড করেন বাংলাদেশের এই স্পিনার। ২৪ বলে একটি ছক্কায় ২৪ রান করেন কোহলি।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছিল সুরেশ রায়না ও হার্দিক পাণ্ডে। তবে ১৬তম ওভারে জোড়া আঘাত হেনে এই দুজনকে বিদায় করেন বাংলাদেশের পেসার আল আমিন হোসেন। ১৬তম ওভারের প্রথম বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সুরেশ রায়না। ২৩ বলে দুই ছক্কা ও এক চারে ৩০ রান করে ফেরেন রায়না। এরপর আল আমিনের দ্বিতীয় বলেই আউট হার্দিক পাণ্ডে। দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন আবারো সৌম্য সরকার। পুল শট খেলতে গিয়ে স্কয়ার লেগে সৌম্যের হাতে ধরা পড়েন পান্ডে। সাত বলে দুই চার ও এক ছয়ে ১৫ রান করেন ভারতের এই অলরাউন্ডার। ভারতের দলীয় রান তখন ১১২।

শেষের দিকে ঝড় তুলতে পারেন যুবরাজ। এমন শঙ্কা ছিল। তবে বাংলাদেশ শিবিরে এর কিছুক্ষণ পরই স্বস্তি এনে দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দলীয় ১১৭ রানের মাথায় যুবরাজকে আল আমিনের হাতে ক্যাচ বানান রিয়াদ। ৬ বলে মাত্র ৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন ভারতীয় এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান।

ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে জাদেজাকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৮ বলে ১২ রান করেন জাদেজা। শেষ পর্যন্ত ধোনি ও অশ্বিন অপরাজিত থাকলে খুব বেশি রান করতে পারেননি তারা। ধোনি ১২ বলে ১৩ ও অশ্বিন ২ বলে ৫ রান করেন। বাংলাদেশের হয়ে আল আমিন ও মুস্তাফিজুর দুটি, শুভাগত, রিয়াদ ও সাকিব পান একটি করে উইকেট।

এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলে একটিই পরিবর্তন। বাদ পড়েছেন আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচ খেলা স্পিনার সাকলাইন সজীব। তার বদলে ফিরেছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। পেটের পীড়ার কারণে গত ম্যাচে খেলতে পারেননি তামিম। তবে প্রিয় প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে ফিরলেন হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান।  

প্রথম রাউন্ডে টানা তিন জয় পেলেও বিশ্বকাপের মূল পর্বে এখনও জয় বঞ্চিত বাংলাদেশ দল। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে হার। দ্বিতীয় ম্যাচে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পরাজয়। সেমির স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে হলে ভারতের বিরুদ্ধে জয়ের বিকল্প নেই আজ বাংলাদেশের। তবে এই টি২০ ফরম্যাটে ভারতের বিরুদ্ধে জয়ের রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। বরং কিছুদিন আগে এশিয়া কাপে লিগ পর্ব ও ফাইনালে দুই ম্যাচে হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে মাশরাফিদের।

অন্যদিকে আজকের ম্যাচটি ভারতের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দুই ম্যাচের মধ্যে তারা জিতেছে একটিতে, হার বাকিটিতে। বাংলাদেশের সঙ্গে জিতলে সেমির সম্ভাবনা জিইয়ে থাকবে। হারলে প্রায় বাদ। তখন সেমিতে যেতে হলে জিততে হবে শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে, আর তাকিয়ে থাকতে হবে গ্রুপের অন্যান্য ম্যাচের দিকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত