স্পোর্টস ডেস্ক

১৯ জুন, ২০১৬ ০২:০০

ব্যাটসম্যানদের নতুন ধরনের হেলমেট বাধ্যতামূলক করার দাবি

সোহরাওয়ার্দী শুভর আঘাত পাওয়া মাঠে থেকেই দেখেছেন হাবিবুল বাশার। তামিম ইকবাল দেখেছেন আরও কাছ থেকেই। মাঠে না থাকলেও খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। শুভর গুরুতর কিছু না হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন সবাই। তিনজনেরই দাবি, বাড়তি সুরক্ষা সম্বলিত নতুন ধরনের হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হোক।

দেড় বছর আগে ফিল হিউসের মৃত্যুর পর থেকেই মূলত হেলমেটের নিরাপত্তার ঘাটতির দিকগুলো আলোচনায় উঠে আসে। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানের দুর্ঘটনার পর অনেকেই হেলমেটের পেছন দিকেও দুপাশে বাড়তি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ হেলমেট ব্যবহার শুরু করে, যেটি সুরক্ষা দেয় ঘাড়কে।

হাবিবুল বাশারের খেলোয়াড়ি জীবনে ব্যাপারগুলো সেভাবে আলোচিত হয়নি। সেভাবে তাই প্রয়োজনও বোধ করেননি। তবে হিউসের ঘটনা দেখার পর এবং সাম্প্রতিক আরও বেশ কটি উদাহরণের পর এই হেলমেট ব্যবহার জরুরি মনে করছেন সাবেক অধিনায়ক ও এখনকার নির্বাচক।

“একটা সময় হেলমেট ছিল না। প্রয়োজনের তাগিদেই সেটা এসেছে। এখন বাড়তি সুরক্ষাযুক্ত এই হেলমেট এসেছে, কেন ব্যবহার করা হবে না? অনেক সময় ক্রিকেটাররা অনেকেই নতুন কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে চায় না। কিন্তু একটু বাড়তি সুরক্ষা যদি অনেক বড় ঝুঁকি এড়াতে পারে, তাহলে সেটি ব্যবহার অবশ্যই বাধ্যতামূলক করা উচিত।”

হিউসের মৃত্যুর পর ব্যাটসম্যানদের নিরাপত্তা-সুরক্ষা নিয়ে অনেকবারই কথা বলেছেন মাশরাফি। শুভর ঘটনার পর আরও একবার জানালেন উৎকণ্ঠা।

“ক্রিকেট খেলতে এসে জীবন ঝুঁকিতে ফেলার মানে হয় না। ক্রিকেট তো আর জীবনের চেয়ে বড় নয়। বাড়তি সুরক্ষার সুযোগ যেখানে আছে, সেটি অবশ্যই নেওয়া উচিত। আমি নিজেও বাড়তি সুরক্ষাযুক্ত হেলমেট ব্যবহার করি। কিন্তু দেখি অনেকেই করে না। এজন্যই এটা বাধ্যতামূলক করা উচিত।”

নতুন ধরনের এই হেলমেট ব্যবহার করেন তামিম ইকবালও। এটির ব্যবহার সার্বজনীন করতে বাধ্যতামূলক করার বিকল্প দেখছেন না এই ওপেনারও।

“একটি-দুটি ঘটনা ঘটলে সবাই এটি নিয়ে আলোচনা করে। পরে হারিয়ে যায়। কারও মনে থাকে না। কিন্তু দুর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না। সেটিকে মোকাবেলার জন্য তাই সবসময় প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। বাধ্যতামূলক না করলে এটি ব্যবহারে সবাইকে আগ্রহী করা যাবে না।”

নতুন ধরণের হেলমেটে অনভ্যস্ততা ও অস্বস্তির কারণে অনেকেই এটিকে এড়িয়ে যেতে চান। তবে এটি কাটিয়ে ওঠা এমন কঠিন কিছু মনে করেন না হাবিবুল।

“আমি ক্যারিয়ারের শুরুতে হেলমেট পড়তাম না। পরে হেলমেট পড়লেও গ্রিল ছাড়া পড়তাম। আস্তে আস্তে সব কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। সবই অভ্যাসের ব্যাপার, শুরু করলে হয়ে যায়।”

তামিমও শুরুর অস্বস্তিটাকে বড় করে দেখতে নারাজ।

“নতুন কিছুতে সাময়িক অস্বস্তি হবেই। সেটা কেটে যেতেও সময় লাগে না। স্রেফ কয়েকটা দিন মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার। এইটুকুতে যদি বড় ঝুঁকি এড়ানো যায়, সেটা সবারই করা উচিত আমি মনে করি।”

কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে ও বাকি ক্রিকেট বিশ্বে অনেকেই এখনও সেটি ব্যবহার করছে না। ২০১৪ সালের নভেম্বরে সব ব্যাটসম্যানের জন্য ও উইকেটের কাছে ফিল্ডিংয়ের জন্য হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে ইংল্যান্ড। ইসিবি পরে বাড়তি সুরক্ষাযুক্ত হেলমেট ব্যবহারে একটি নীতিমালাও করেছে, যেটির কেতাবি নাম ব্রিটিশ সেফটি স্ট্যান্ডার্ডস (বিএসএস)। বিএসএস মান অনুযায়ী হেলমেটের ওপরের অংশের সঙ্গে গ্রিলে ফাঁক অনেকটাই কম।

ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া নতুন ধরণের এই হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে। সম্প্রতি আইসিসি ক্রিকেট কমিটিও সুপারিশ করেছে এ ধরনের হেলমেট বাধ্যতামূলক করতে, যা নিয়ে আলোচনা হবে এ মাসের শেষে আইসিসি সভায়। মাশরাফি তাকিয়ে সেই সভাতেই।

“সবচেয়ে ভালো হয় আইসিসি যদি এটিকে বাধ্যতামূলক করে। তাহলে ক্রিকেটারদের আর এটা ব্যবহার না করে উপায় থাকবে না। ক্রিকেট বোর্ডগুলিও জোর দিয়ে দেখবে।”

এটি বাধ্যতামূলক করাই হয়ত সময়ের দাবি। শুভ সৌভাগ্যবশত বেঁচে গেছেন অল্পতে। ভাগ্য এত সুপ্রসন্ন কারও নাও হতে পারে। ক্রিকেট নিশ্চয়ই অন্য কেনো ক্রিকেটারের ফিল হিউসের মতো পরিণতি দেখতে চায় না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত