স্পোর্টস ডেস্ক

১০ জুলাই, ২০১৬ ১২:২১

মেসির আগে কি জাতীয় দলকে শিরোপা জেতাবেন রোনালদো?

আর্জেন্টাইন তারকা ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি ও পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো- এ দুজনকে বলা হয় এ গ্রহের সেরা দুই ফুলবলার। দুজনই খেলছেন স্প্যানিশ লীগে। মেসি বার্সেলোনা আর রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে। ক্লাব ফুটবলকে দুজনই দিয়েছেন অনেক, কিন্তু দেশকে একজনও দিতে পারেন নি একটা মাত্র শিরোপা।

গত কয়েক বছরে লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনাকে বেশ কয়েকবার ফাইনালে তুললেও একবারও হাসতে পারেন নি শেষ হাসি। সর্বশেষ কোপা আমেরিকা ফাইনালে চিলির বিপক্ষে হেরে যাওয়ার পর হতাশায় আর্জেন্টিনা জাতীয় দলকেই "না" বলে দিয়েছেন এ সুপারস্টার।

রোনালদোর সামনে এবার এসেছে দেশের হয়ে কোন ফাইনাল জেতার সুযোগ। স্তাডে দি ফ্রান্সে স্বাগতিক ফ্রান্সকে হারিয়ে জিততে চান দেশের হয়ে প্রথম শিরোপা। আর তা যদি সম্ভব হয় তবে এই দিক থেকে লিওনেল মেসিকে হারিয়ে দেবেন তিনি।

স্বপ্ন পূরণের বিষয়টি উল্লেখ করে রোনালদো বলেন, “ক্লাব আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমি সবকিছু জিতেছি, পর্তুগালের হয়ে কিছু জেতাটা হবে দারুণ এক অর্জন।”

“আমি বিশ্বাস করি যে এটা সম্ভব, আমার সতীর্থরাও তাই করে এবং পুরো দেশই এটা বিশ্বাস করে। আমাদের ভাবনাটা ইতিবাচক থাকতে হবে কারণ, আমি বিশ্বাস করি, রোববারই প্রথমবারের মতো পর্তুগাল বড় কোনো শিরোপা জিতবে।”

সবশেষ আটটি বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন মেসি ও রোনালদো। এর মধ্যে বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মেসি জেতেন ৫টি, রোনালদো তিনটি। রিয়ালের হয়ে এ বছরের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পর পর্তুগালকে ইউরো জেতাতে পারলে হয়ত বর্ষসেরা পুরস্কারের লড়াইয়ে মেসির সঙ্গে ব্যবধান কমাতে পারবেন রোনালদো।

২০১৫ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালেও চিলির কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। এর আগে ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারার কষ্ট মেনে নিতে হয়েছিল মেসিকে। তারও আগে ২০০৭ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল তার দল আর্জেন্টিনা।

টানা এই ব্যর্থতার হতাশা মেনে নিতে পারেননি ২৯ বছর বয়সী মেসি। চিলির কাছে এবার হেরে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক।

পেলে, দিয়েগো মারাদোনা, জিনেদিন জিদান, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, মিশেল প্লাতিনি…কিংবদন্তি এই ফুটবলারদের সবাই আন্তর্জাতিক ফুটবলে সফল। এদের সবাই দেশের হয়ে শিরোপা জয়ের উৎসবে মেতেছিলেন। এরা সবাই তাদের প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন।

চার বার কাছে গিয়েও মেসি কাঙ্ক্ষিত এই সাফল্য পাননি। রোনালদোর সামনে এই সুযোগ এসেছিল ২০০৪ সালে। কিন্তু দেশের মাটিতে সেবারের ইউরোর ফাইনালে গ্রিসের কাছে হেরে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভাঙে তার। আবার শিরোপা জয়ের খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন রোনালদো। ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরো জিততে পারলে পেলে, মারাদোনা, জিদান, বেকেনবাওয়ারদের সঙ্গে উচ্চারিত হবে তার নাম।

এদিকে, ফ্রান্সের বিপক্ষে মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাস আর পরিসংখ্যান অবশ্য পর্তুগালের জন্যে সুখের নয়। এই নিয়ে বড় কোনো টুর্নামেন্টে চতুর্থবারের মতো দেখা হতে যাচ্ছে পর্তুগাল-ফ্রান্সের। আগের তিনটি ম্যাচই ছিল সেমি-ফাইনালে-১৯৮৪ ও ২০০০ সালের ইউরো আর ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে। তিনটি ম্যাচেই হেরেছিল পর্তুগাল। সবশেষ ১০টি লড়াইয়ের সবকটি ম্যাচেই পর্তুগালের বিপক্ষে জয় পেয়েছে ফ্রান্স।”

“ফ্রান্স আমাদের চেয়ে কিছুটা ফেভারিট, কিন্তু আমি মনে করি, পর্তুগালই জিতবে।”

ফেভারিটদের মধ্যে থেকেই এবারের টুর্নামেন্ট শুরু করে স্বাগতিক ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বে নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও নকআউট পর্বে অসাধারণ খেলে ফাইনালে উঠে দিদিয়ে দেশমের দল। বিশেষ করে কোয়ার্টার-ফাইনালে আইসল্যান্ডকে ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিতে অসাধারণ ফুটবল খেলে তারা।

এর পর সেমি-ফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে ২-০ গোলে হারায় তারা। দুটি গোলই করেন ৬ গোল নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পথে বেশ এগিয়ে থাকা অঁতোয়ান গ্রিজমান।

অন্যদিকে গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই ড্র করে সেরা চারটি তৃতীয় স্থানের দলের একটি হয়ে নক-আউট রাউন্ডে উঠে পর্তুগাল। শেষ ষোলোতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল পায়নি। অতিরিক্ত সময়ে রিকার্দো কারেসমার গোলে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে তারা। এর পর পোল্যান্ডকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেন রোনালদোরা।

সেমি-ফাইনালে ওয়েলসের বিপক্ষেই কেবল কিছুটা আলো ছড়াতে পারে তারা। ২-০ ব্যবধানে জেতা এই ম্যাচে অবশ্য ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন রোনালদো। টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ ম্যাচেই নিজের ছায়া হয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা ফরোয়ার্ড ওয়েলসের বিপক্ষে দলকে এগিয়ে দেওয়া গোলটি করেন। নানির করা অপর গোলটিতে সহায়তাও করেন তিনি।

ওয়েলসের বিপক্ষে দলের ভালো পারফরম্যান্স আর এ পর্যন্ত খেলা ৬ ম্যাচে তিনটি গোল পাওয়া রোনালদোর ফর্মে ফেরার ইঙ্গিতে উচ্ছ্বসিত পুরো পর্তুগাল দল। অধিনায়ক রোনালদোর সঙ্গে তার সতীর্থরাও এখন বেশ আত্মবিশ্বাসী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত