স্পোর্টস ডেস্ক

১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৯:০৩

সবাই সামনের কোহলির সাফল্য দেখে, পেছনের কোহলির পরিশ্রম দেখে না

ইংল্যান্ড সফরে ১০ ইনিংস ব্যাট করে রান করলেন ১৩৪। গড় ১৩.৪০। একটা ফিফটিও নেই! সেই তিনিই ঠিক পরের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া সফরে ৮৬.৫০ গড়ে করলেন ৬৯২ রান। ৮ ইনিংসে চারটি সেঞ্চুরি, একটি ফিফটি!

বিরাট কোহলি জানিয়েছেন, টেকনিকে ছোট পরিবর্তন এনেই এই বিরাট সাফল্য তিনি পেয়েছেন। আর সেই রহস্য অকপটে খোলাসাও করে দিলেন ভারত অধিনায়ক।

২০১২ সালের ইংল্যান্ড সফরে বেশ ভুগেছিলেন। দুই বছর পর আবারও যখন ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলতে গেল গেল ভারত, কোহলি মানসিকভাবে আগের সফর নিয়ে একটু বেশি দুশ্চিন্তায় ভুগেছেন। আর এটা তাঁকে আরও চাপে ফেলে দিয়েছিল।

নাসের হুসেইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোহলি বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে (২০১৪) নিজের ওপর বেশি চাপ দিয়ে ফেলেছিলাম যে আমাকে ইংল্যান্ডে রান করতেই হবে। জানি না কেন আমাদের উপমহাদেশের খেলোয়াড়দের সামনে সব সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট দেশগুলোতে পারফর্ম করলেই তবে আপনি ভালো খেলোয়াড়, না হলে নয়। আমি নিজেই অবশ্য ইংল্যান্ডে ভালো করার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম। ফলে সেখানে শুরুতে ভালো করতে না পারলে মানসিকভাবে আপনি আরও নেতিয়ে পড়বেন।’

২০১২ সালের ইংল্যান্ড সফরে তবু গড় ছিল ৩১.৩৩। ২০১৪ সালে একদম ভরাডুবি হলো। ঠিক ৫ মাস পরের সিরিজে কোহলি দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন অস্ট্রেলিয়ায়। আর এই পরিবর্তনের পেছনে আছে নিজের ভুলটাকে আবিষ্কার করা, ‘টেকনিক অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেখবেন, টেকনিক ভালো নয় এমন অনেকেই ভালো করছে কেবল ইতিবাচক মানসিকতার কারণে। আমার সমস্যা যেটা ছিল, আমি ধরে নিয়েছিলাম ওরা বেশি ইনসুইংগার দেবে, ফলে আমার পেছনের দিকটা বেশি সামনে চলে এসেছিল। সব সময়ই ইনসুইংগারের অপেক্ষায় ছিলাম জন্যই আউটসুইং খেলার মতো অবস্থায় ছিল না আমার শরীর।’

কোহলি খুব ভালো করে নিজের ভুলটা বিশ্লেষণ করেছেন, ‘আমি মাঝের স্টাম্পে দাঁড়াই সাধারণত। ফলে আমি দেখলাম, আমার পায়ের পাতা পয়েন্টের দিকে না গিয়ে কাভার পয়েন্টের দিকে যাচ্ছে। আর আমার পেছনের দিকটা আরও বেশি উন্মুক্ত হচ্ছে। বলটা বেশি দেখতে চাওয়ার জন্যই এমনটা হচ্ছিল।’ আর এ কারণে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ভুগছিলেন বারবার।

কোহলি নিজের মানসিকতা আর স্ট্যান্সের কিছু পরিবর্তন আনেন। তবে এই​ছোট পরিবর্তন আনতেই অনেক খাটুনি যে খাটতে হয়েছে, তাও জানিয়ে দিলেন, ‘এখন এই পরিবর্তনটাকে মনে হচ্ছে সহজ। কিন্তু শুরুতে তা ছিল না। দিনে তিন ঘণ্টার মতো করে রোজ ব্যাটিং করেছি। সপ্তাহের শেষে আমার হাতের পেশিতে টান পড়ে যেত। তবু টানা দশ দিনের মতো এভাবেই ব্যাটিং করেছি। গলফে বলা হয়, একটা শট ৪০০-৫০০ বার মারলেই তবে সেটা ঠিক হয়। আমার জন্যও তাই এটা ছিল অনুশীলন আর অনুশীলন। নিজের মাথার ভেতরে সব ঠিক করে নিতে চেয়েছিলাম। আমি সামনে বাড়িয়ে খেলার বদলে বলের জন্য অপেক্ষা করে খেলতে অভ্যস্ত ছিলাম।’

সবাই সামনের কোহলির সাফল্যটাই দেখে, পেছনের কোহলির পরিশ্রম, নিজের সামান্য খুঁতগুলোকেও কাটিয়ে ওঠার অন্তহীন প্রচেষ্টাকে দেখে না।
সূত্র: বিসিসিআই

আপনার মন্তব্য

আলোচিত