স্পোর্টস ডেস্ক

২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৫:৩৪

বাংলাদেশের প্রশংসা করেই চাকরি হারিয়েছেন ভোগলে!

গত বছর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরুর ঠিক ১০ দিন আগে প্রতিযোগিতার ধারাভাষ্য দল থেকে বরখাস্ত হন জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে। ২০১৬ সালে ভারতীয় ক্রিকেটকে ঘিরে যত বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে, ভোগলের বরখাস্ত হওয়াটা ছিল সেগুলোর অন্যতম।

কানাঘুষা ছিল, ভারতীয় ক্রিকেট দলের কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারের তাঁর বিশেষ কিছু মন্তব্য পছন্দ হয়নি বলেই বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরপর থেকে গত এক বছরে ভোগলেকে ক্রিকেট ধারাভাষ্য কিংবা ক্রিকেট নিয়ে কোনো টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে আর দেখা যায়নি।

ভোগলেকে আসলে কেন বরখাস্ত করা হয়েছিল? ঘটনার প্রায় এক বছর পর ইকোনমিক টাইমস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার বলেছেন, কোনো ব্যাখ্যা তিনিও পাননি, ‘আমাকে আসলে কিছুই বলা হয়নি। যদি আমাকে বলা হতো তুমি সম্প্রচারের নীতিমালা ভঙ্গ করেছ, আমি হয়তো মেনে নিতাম, যদি বলা হতো তুমি মোটেও ভালো ধারাভাষ্যকার নও, আমি মেনে নিতাম সেটিও। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, কেউ সাহস করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারেনি নির্দিষ্ট এই কারণে তোমাকে বরখাস্ত করা হলো।’

ভোগলে সমস্যায় পড়েছিলেন গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়ই। বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশ–ভারত শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের পরপরই অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন একটা টুইট করেছিলেন। বিতর্কের শুরুটা সেখান থেকেই। টুইটে অমিতাভ ভাষ্যকারদের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘এরা ভারতীয় দলের হয়ে কথা না বলে বিদেশি দলকে বেশি করে প্রশংসা করে।’

অমিতাভ কারও নাম উল্লেখ না করলেও ভোগলে নিজে থেকে অমিতাভকে ‘মেনশন’ করে টুইট করে বলেন, স্টার স্পোর্টসের হিন্দি ভাষার চ্যানেলটিতে ভারতের পক্ষে দেদার বলার সুযোগ থাকলেও ইংরেজি আন্তর্জাতিক চ্যানেলে ভাষ্যকারদের নিরপেক্ষই থাকতে হয়। বিষয়টি নিয়ে তখন বেশ আলোচনাও হয়েছিল। অমিতাভের এই টুইটকে সমর্থন করে সেদিন ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও রিটুইট করেছিলেন। এর পরপরই আইপিএলের ভাষ্যকার দল থেকে বাদ পড়ে যান ভোগলে। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের প্রশংসা করেই চাকরি হারিয়েছেন ভোগলে। এখনো নিজের এই প্রিয় কাজে আর ফেরা হয়নি তাঁর।

ধারাভাষ্য বক্সে আর বসা হয় না। কাজটা নিশ্চয়ই মিস করেন। ক্রিকেটকে ভালোবেসেই যে এ কাজে আসা। ভোগলে অবশ্য জানালেন, সবচেয়ে বেশি মিস তিনি করেন টেন্ডুলকার-কুম্বলে-সৌরভ-দ্রাবিড়দের প্রজন্মটাকে, ‘টেন্ডুলকার-সৌরভদের মতো কিংবদন্তিতুল্য ক্রিকেটাররা যখন খেলত, তখন আমি ধারাভাষ্যকক্ষে কী বলছি, না বলছি, এসব নিয়ে খুব মাথা ঘামাতাম না। আমি ওদের প্রজন্মটাকে খুব মিস করি। একবার টেন্ডুলকার আউট হওয়ার পর আমি বলেছিলাম, ‘টেন্ডুলকার এমনভাবে হেঁটে ড্রেসিংরুমে ফিরছেন, যেন মনে হচ্ছে রাজ্যের সম্রাট নেমে পরিণত হয়েছেন সাধারণ মানুষে। কই তখন তো কেউ আমাকে এসে বলেনি, টেন্ডুলকার আপনার এই কথাটি পছন্দ করেননি।’

সৌরভেরও একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে ভোগলে জানিয়েছেন, এই সব কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা তাঁকে কতটা শ্রদ্ধার চোখে দেখত, ‘একবার সৌরভ আমাকে একটি ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলে। আমি সেটি না করে বলি, তুমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছ, তুমিই নাহয় বলো। উত্তরে সৌরভ আমাকে বলে, “আপনি যেন কয়টা বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকার হিসেবে ছিলেন? আপনি বলুন। কোনো সমস্যা নেই। আমি জানতে চাই, অনেক দেখার অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কী ভাবছেন।”’ সূত্র: ইকোনমিক টাইমস

আপনার মন্তব্য

আলোচিত