স্পোর্টস ডেস্ক

০২ এপ্রিল, ২০১৭ ১২:২৯

হিগুয়েনকে প্রতারক ও লোভী বলছেন নাপোলি সমর্থকেরা

প্রতারক, লোভী, জুডাস এই শব্দগুলোও হয়তো গঞ্জালো হিগুয়েইনের কানে মধুর শোনাবে। এই মৌসুমেই নাপোলি ছেড়ে জুভেন্টাসে যাওয়া আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার সোমবার প্রথমবারের মতো ফিরছেন নাপোলির মাঠে, জুভের জার্সিতে। তাঁকে ‘স্বাগত’ জানাতে যেসব শব্দ ব্যবহার করছেন নাপোলি সমর্থকেরা, তার মধ্যে এগুলোই সবচেয়ে কম আপত্তিকর!

অথচ মাস কয়েক আগেও এই মাঠেই হিগুয়েইন ছিলেন নায়ক। গত মৌসুমেই নাপোলির জার্সি গায়ে লিগে ৩৬ গোল করেছিলেন, ভেঙে দিয়েছিলেন ইতালিয়ান লিগে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড। তা ভালোবাসার উঁচু বেদিটা থেকে কয়েক মাসের মধ্যেই হিগুয়েইনের এমন ঘৃণিত হওয়ার কারণ? গত মৌসুমের শেষে ওই দলবদল। আরও নির্দিষ্ট করে বললে দলবদলের ধরন!

মোটেও স্বাভাবিক ছিল না সেটি। মাদ্রিদে গোপনে হলো হিগুয়েইনের ডাক্তারি পরীক্ষা। এরপর ৯০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে তাঁকে নেপলস থেকে তুরিনে নিয়ে যায় জুভেন্টাস। নাপোলি সমর্থকদের ঠিকঠাক বিদায়ও বললেন না! এটিই খেপিয়েছে নাপোলি সমর্থকদের। ‘এক বছর ধরে ওর ফেরার অপেক্ষা করছি আমরা। ও যেভাবে গেছে, যেমন আচরণ করেছে, আমাদের সেটা মোটেও ভালো লাগেনি। ও আগে বলল, ও নাপোলিকে ভালোবাসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থের পেছনেই ছুটল। ও লোভী, প্রতারক!’—বলছিলেন ব্রুনো আলসিদি, নাপোলিতে একটি বারের মালিক।

আলসিদির ওই বারের বেদিতেই শোভা পাচ্ছে আরেক আর্জেন্টাইনের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি—ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ক্লাবের হয়ে খেলে যাওয়ার কয়েক যুগ পরও নাপোলির মানুষ তাঁকে ধরে রেখেছেন হৃদয়মন্দিরে। ক্লাবটির সমর্থক সালভাতোর রোমানো যেমন বললেন, ‘হিগুয়েইন বড় ফুটবলার। তবে আমাদের কাছে ওর কোনো মূল্য নেই। ম্যারাডোনাকেই দেখুন, নিজের হৃদয়টা আমাদের দিয়ে রেখেছে। আমাদের কাছেও তিনি সন্তের মতো। কিন্তু নাপোলির ইতিহাসে হিগুয়েইন একটা বড় শূন্য।’

শুধু শব্দবাণেই নয়, হিগুয়েইনকে নাপোলি সমর্থকেরা বিদ্ধ করছেন আরও নানা উপায়ে। টয়লেট টিস্যুতে জুভেন্টাসের জার্সি গায়ে হিগুয়েইনের ছবি ছাপিয়ে তাতে অশ্লীল সব শব্দ লিখে রাখা হয়েছে। কেন এমন বিদ্বেষ, সেটির ব্যাখ্যা দিলেন আলসিদিই, ‘ওর জুভেন্টাসে যাওয়াটাই সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার। অন্য যেকোনো ক্লাবে যেতে পারত ও, কিন্তু সবচেয়ে বড় শত্রু ক্লাবে? এটা অনেকটা রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে বার্সেলোনায় যাওয়ার মতো—পুরোপুরি বিশ্বাসঘাতকতা।’

এমনকি ম্যারাডোনাও এখানে হিগুয়েইনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্তকে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি বলেছেন, ‘ও সমর্থকদের কিছু না জানিয়ে চলে গেছে। যদি ও খুলে বলত সবকিছু, তাহলে হয়তো ওকে আরেকটু কম ঘৃণা করত সবাই।’

হিগুয়েইন অবশ্য স্কাই টিভিতে সাক্ষাৎকারে একটু দার্শনিক উত্তরই দিয়েছেন এ ব্যাপারে, ‘দলের জার্সির অবশ্যই গুরুত্ব আছে। তবে দিন শেষে অন্য পেশাগুলোর মতো ফুটবলও একটা পেশা। আর মানুষেরও স্বাধীনতা আছে যেখানে সুখী মনে হয়, সেখানে কাজ করার।’

হিগুয়েইন সুখেই আছেন। লিগে ২৯ ম্যাচে করেছেন ১৯ গোল। ২৯ ম্যাচে ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে তাঁর দলও শীর্ষে। ১০ পয়েন্ট কম নিয়ে নাপোলি তিনে। অক্টোবরে জুভের মাঠে নাপোলির বিপক্ষে লিগ ম্যাচটিতে গোলও করেছিলেন। আজও যদি গোল পান, তাহলে কী হবে?

নাপোলির জার্সি গায়ে এই মাঠে হিগুয়েইনের প্রতিটি গোলের পর নয়বার ‘গঞ্জালোওও...’ বলে চিৎকার করতেন স্টেডিয়ামের ঘোষক ড্যানিয়েলে বেল্লেনি, প্রতিবারই সমর্থকেরা তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতেন ‘হিগুয়েইন’। আজ কী হতে যাচ্ছে, তার একটা আগাম ধারণা দিয়ে রাখলেন সেই বেল্লেনিই, ‘শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবাই দুয়ো দেবে, শিস বাজাবে। ওকে ওর ভুলটা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ওর জন্য ম্যাচটা কঠিনই হবে। আমাকে মাইকেও ওর প্রতি অপমানজনক কথা বলতে অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু সেটি তো আর সম্ভব নয়।’

বেল্লেনির পক্ষে সম্ভব না হলেও সেই দায়িত্বটা পালন করতে স্তাদিও সান পাওলোর ৬০ হাজার দর্শকই যথেষ্ট।
সূত্র: এএফপি

আপনার মন্তব্য

আলোচিত