স্পােটর্স ডেস্ক

২৮ মে, ২০১৭ ০১:৪২

এমন ম্যাচেও হেরে গেলো বাংলাদেশ

প্রস্তুতি ম্যাচ হলেও বাংলাদেশ পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানরা দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন। বোলাররাও শুরু থেকে ছিলেন দুর্দান্ত। বাংলাদেশের জয় একসময় সময়ের ব্যাপারই ছিল। উৎসবের প্রস্তুতি ছিল টাইগার শিবির জুড়ে।

কিন্তু বিপরীত পাশের প্রতিপক্ষ যে পাকিস্তান; যাদেরকে বলা হয় ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। যেই ম্যাচে মাশরাফিদের সহজ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার কথা সেই ম্যাচেই পরাজয়ের তেতো স্বাদ গ্রহণ করে টাইগাররা। অবিশ্বাস্য জয়ে নিজেদের আনপ্রেডিক্টেবল চরিত্রের প্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি পাকিস্তানের হাত ধরেই আরেকবার প্রতীয়মান হলো যে, ক্রিকেট চরম অনিশ্চয়তার খেলা।

বার্মিংহামের এজবাস্টনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৪১ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের প্রহরই গুনছিল পাকিস্তান। কিন্তু ফাহিম আশরাফ ও হাসান আলির বীরত্বে এবং শেষদিকের নাটকীয়তায় ৩ বল ও ২ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় সরফরাজ আহমেদের দল।

পাকিস্তানের হয়ে শোয়েব মালিক সর্বোচ্চ ৭২ রান করেন। এছাড়া মোহাম্মদ হাফিজ ৪৯, আহমেদ শেহজাদ ৪৪ ও ইমাদ ওয়াসিম ৪৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে টিকিয়ে রাখেন। শেষদিকে ৩০ বলে ৪টি করে চার-ছক্কায় ৬৪ রানের দানবীয় ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে মধুর জয় এনে দেন ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ফাহিম আশরাফ। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন ১৫ বলে ২৭ রানের হার না মানা ইনিংস খেলা হাসান।

বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন মাশরাফি, তাসকিন আহমেদ, শফিউল ইসলাম, সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন।

বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে তাসকিন আহমেদের করা চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীমকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন আজহার। মাশরাফির করা পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আরেক পাক ওপেনার বাবর।

তৃতীয় উইকেটে হাফিজ ও শেহজাদ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তবে দলীয় ৭৮ রানের মাথায় সাকিবের বলে শেহজাদ বোল্ড হয়ে ফিরে গেলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। এরপর হাফিজ ও মালিকের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে সরফরাজের দল।

চতুর্থ উইকেটে হাফিজ-মালিক ৭৯ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে পাকিস্তানকে কক্ষপথে ফেরান। তবে হাফিজ ও সরফরাজ আহমেদকে দ্রুত আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন শফিউল ও মোসাদ্দেক। পাকিস্তানের রান তখন ৫ উইকেটে ১৫৮। ষষ্ঠ উইকেটে ইমাদ ও মালিক মিলে ৫৯ রানের জুটি গড়লে ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন দেখে পাকিস্তান।

তবে ২২৭ থেকে ২৪৯- এই ২২ রানের ব্যবধানে মালিক, শাদাব খান ও ইমাদকে আউট করে ম্যাচের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। কেননা, জিততে তখনো ৪৪ বলে ৯৩ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু নবম উইকেটে ফাহিম ও হাসান আলি মিলে ৪১ বলে ৯৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশের ‘ভুলে যাওয়া’ পরাজয়ের ‘স্বাদ’ উপহার দেন।

এর আগে বার্মিংহামের এজবাস্টনে টসে জয়লাভ করে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শুরুতেই সৌম্য সরকারের উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও ইমরুলের দারণ জুটিতে ম্যাচে ফিরে আসে টাইগাররা। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশকে। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৪১ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে টাইগার শিবির।

৮৮ বলে সেঞ্চুরি করা তামিম শেষ পর্যন্ত ৯৩ বলে ১০২ রান করে শাদাব খানের বলে জুনায়েদ খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। ৯টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা হাঁকান তামিম। এছাড়া ইমরুল ৬২ বলে ৬১, মুশফিক ৩৫ বলে ৪৬, সাকিব ২৭ বলে ২৩, মোসাদ্দেক ১৫ বলে ২৬ এবং মাহমুদউল্লাহ করেন ২৪ বলে ২৯ রান।

শেষদিকে তালগোল পাকিয়ে ফেলায় ৩৫০ বা তার বেশি সংগ্রহ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ৪০ বলে মাত্র ৩৯ রান তোলে টাইগাররা। টেলএন্ডারে মাশরাফি ৮ বলে ১ এবং মেহেদী হাসান মিরাজ ১৬ বলে ১৩ রান করেন। এই ধীরগতির ব্যাটিংয়ের কারণেই ৩৫০ রান করতে পারেনি টাইগাররা।

পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন জুনায়েদ খান। এছাড়া দুটি করে উইকেট নেন হাসান আলি ও শাদাব খান।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ; প্রতিপক্ষ ভারত। আজকের ম্যাচটি কোনো চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার না করলেও ৩০ তারিখে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার প্রস্তুতি ম্যাচটি সম্প্রচার করবে স্টার স্পোর্টস।

আগামী ১ জুন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। 'এ' গ্রুপে বাংলাদেশের অপর দুই প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।

অন্যদিকে পাকিস্তান রয়েছে 'বি' গ্রুপে। ৪ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের মুখোমুখি হবে সরফরাজ-আমিরের দল। গ্রুপে পাকিস্তানের অপর দুই প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ দল: ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মাশরাফি বিন মুর্তজা, সানজামুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, রুবেল হোসেন ও শফিউল ইসলাম।

পাকিস্তান দল: আহমেদ শেহজাদ আজহার আলী, বাবর আজম, ফাহিম আশরাফ, ফখর জামান, হারিস সোহেল, হাসান আলি, ইমাদ ওয়াসিম, জুনায়েদ খান, মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ হাফিজ, সরফরাজ আহমেদ, শাদাব খান, শোয়েব মালিক ও ওয়াহাব রিয়াজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত