সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ জুলাই, ২০১৮ ০১:৫৭

ক্রোয়েশিয়ার ‘দ্বাদশ খেলোয়াড়’

বিশ্বকাপের মঞ্চে আবির্ভূত হন অনেক নতুন তারকা। যারা মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই ইঙ্গিত দিয়ে রাখেন ভবিষ্যতের নায়ক হয়ে ওঠার। তবে মাঠের লড়াইটা আসল হলেও সেটিই কিন্তু সব নয়। মাঠের বাইরে গ্যালারিতেও অনেকে আবির্ভূত হন, যারা হয়ে ওঠেন নায়ক। নিজেদের নানা ক্যারিশমা দিয়ে চলে আসেন আলোচনার টেবিলে। তেমনই একজন কলিন্দা গ্রাবার কিতারোভিচ। বিশ্বকাপের আগে নামটি হয়তো খুব বেশি মানুষ জানতই না। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপ দিয়ে এরই মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ মানেই গ্যালারিতে কলিন্দার সরব উপস্থিতি। মডরিচ-রাকিতিচ-মান্দজুকিচদের পাশাপাশি আলোচনায় পিছিয়ে নেই কলিন্দাও। যার আসল পরিচয় তিনি ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট। তবে ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচের দিন তিনি কেবলই একজন অন্তঃপ্রাণ ক্রোয়াট সমর্থক। যার কাজই হচ্ছে ম্যাচের সময়ে গ্যালারিতে উপস্থিত থেকে প্রতিনিয়ত খেলোয়াড়দের সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাওয়া। অবশ্য কলিন্দা কেবল গ্যালারিতেই উপস্থিত থেকে নয়, ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে গিয়েও খেলোয়াড়দের সঙ্গে নেচে-গেয়ে জয় উদযাপন করেন।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে ছিলেন না কলিন্দা। ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি বর্তমানে অবস্থান করছেন বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে। তবে পেশাগত কারণে মাঠে উপস্থিত না থাকলেও তার মনটা হয়তো পড়ে ছিল মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। নিশ্চয়ই ব্রাসেলসে বসে যথারীতি মারিও মান্দজুকিচের জয়সূচক গোলটিতে পাগলের মতো উল্লাস করেছেন। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার আনন্দে হয়তো গোপনে চোখের জলও ফেলেছেন। ফুটবলকে যে ভীষণ ভালোবাসেন তিনি। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার পর তিনি নিজের ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘আমার ছেলেরা, তোমরাই পারো।’ এ সময় সমর্থকদেরও অভিনন্দন জানান তিনি।

এর আগে রাশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটিই ধরা যাক, প্রতিটি গোলের পর হাত মেলাচ্ছিলেন রাশান প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে। তবে কলিন্দার আসল পাগলামি দেখা যায় অতিরিক্ত সময়ে এগিয়ে যাওয়ার পর। প্রটোকল ভেঙে নেচে ওঠেন সবার সামনেই। তবে এখানেই থামেননি, ম্যাচ শেষে কোনো আগাম খবর ছাড়াই হাজির হন খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে। মডরিচ-রাকিতিচদের সঙ্গে মেতে ওঠেন উৎসবে। দ্বিতীয়বারের মতো দেশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট বলে তো আনন্দ লুকিয়ে রাখতে পারেন না। সবার সঙ্গে মেতে উঠেছেন উদযাপনে। প্রেসিডেন্টকে এভাবে নিজেদের পাশে পাওয়া নিশ্চয় বাড়তি অনুপ্রেরণার জোগান দিয়েছে মডরিচদের মাঝে।

তবে কলিন্দার জয় উদযাপন সেদিনই প্রথম নয়। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে ডেনমার্কের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি ভিআইপি বক্সে খেলা দেখার বদলে স্ট্যান্ডে বসে খেলা দেখেছেন। জয়ের পর যথারীতি উপস্থিত হন ড্রেসিংরুমে। সেখানেও নিজে হাজির হয়ে খেলোয়াড়দের অভিনন্দিত করেন তিনি। গ্যালারিতে বিখ্যাত লাল-সাদা চেকের জার্সিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কলিন্দা মূলত আলোচনায় উঠে আসেন রাশিয়ার বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়ার জয়ের পর।

উদযাপন তো আছেই, এছাড়া খেলা দেখার জন্য জাগরেভ থেকে এসেছিলেন বিমানের ইকোনমি ক্লাসে করে, যাতে সেখানে সমর্থকদের সঙ্গে হই-হুল্লোড় করে আসতে পারেন।

সমর্থকদের মাঝেও দারুণ জনপ্রিয় কলিন্দা। রাশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে সোচিতে পৌঁছে তাকে দেখা যায় রাশান সমর্থকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে উঠতে। এ সময় বিশ্বকাপের মাস্কটসহ উপস্থিত খুদে দর্শকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায় তাকে। তার ফুটবলপ্রেম কতটা তুঙ্গে, সেটা বোঝা যায় যখন তিনি ব্রাসেলসে ন্যাটোর প্রধান কার্যালয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্রোয়েশিয়ার টিম জার্সি উপহার দেন।

তবে কলিন্দা কেবল ফুটবলের একজন অন্ধ সমর্থক নন, প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তার যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। তিনি ক্রোয়েশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। এর আগে তিনি দেশটির পররাষ্ট্র ও ইউরোপ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ইতালিয়ানসহ মোট পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে পারেন কলিন্দা।

এবার সামনে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালের অপেক্ষা ক্রোয়েশিয়ার। সেদিন হয়তো দলের খেলোয়াড়দের সমর্থন দিতে নতুন কোনো চমক নিয়ে হাজির হবেন কলিন্দা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত