ক্রীড়া প্রতিবেদক

০৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০২

প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তা: সিলেট স্টেডিয়ামের গ্যালারির গ্রিল উঁচু করার পরামর্শ পুলিশের

নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারির নিরাপত্তা বেষ্টনি (গ্রিল) আরও উঁচু করার পরামর্শ দিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ। সিলেটের মাঠে চলমান প্রথম টেস্টে তিনদিনে দুই দর্শক মাঠে ঢুকে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এমন পরামর্শ পুলিশের। সোমবার সন্ধ্যায় বিসিবি ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে এ পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ।

প্রথমবারের মতো সিলেট স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে সিলেট টেস্টের তিন দিনের খেলা অতিবাহিত হয়েছে। তবে এ তিনদিনে মাঠে ঘটে যাওয়া তিন ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এ স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা।

সিলেট টেস্টের প্রথম দিনে নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দর্শক গ্যালারির নিরাপত্তা বেষ্টনি ডিঙিয়ে সাইফুল ইসলাম অনিক নামের সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মুশফিকুর রহিমের এক ভক্ত মাঠে ঢুকে পড়েছিল।

এরপর দ্বিতীয় দিনে খেলা চলাকালীন সময় মাঠে ঢুকে যায় একটি কুকুর। ঘটনাটি বাংলাদেশের ইনিংসের দশম ওভারে ঘটে। তখন ব্যাট করছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মমিনুল হক। ওভারের তৃতীয় বলে হঠাৎ করেই নিরাপত্তা এড়িয়ে মাঠে ঢুকে যায় একটি কুকুর। হতভম্ব হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়রাও। পরে খেলা চলাকালীনই মাঠে ঢুকে কুকুরকে বের করে আনেন নিরাপত্তারক্ষীরা।

এরপর তৃতীয় দিনে এসে স্টেডিয়ামে আবারো প্রথম দিনের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তৃতীয় দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে লিড বাড়াতে তখন ব্যাট করছিল জিম্বাবুয়ে। ঘটনাটি ঘটে খেলার ৪২তম ওভারের শেষ বলে। তখন তাইজুল ইসলামের বলে পিটার মুর আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ দল যখন উদযাপনে ব্যস্ত। তখনই পূর্ব গ্যালারির গ্রিলের বেষ্টনী ডিঙিয়ে অল্পবয়েসি এক দর্শক ঢুকে পড়ে মাঠে। পেছন পেছন এক পুলিশ সদস্য আসলেও তিনি তাকে ঠেকাতে পারেননি।

পরে বিসিবির আরও দুজন নিরাপত্তাকর্মী এসে ওই দর্শককে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যান। খেলা চলাকালীন তিনদিনের এই তিন ঘটনায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

খেলা চলাকালীন বারবার কেন এমন ঘটনা, জানতে চাওয়া হলে বিসিবি নিরাপত্তা প্রধান মেজর (অব.) হোসাইন ইমাম দায় দিলেন অপর্যাপ্ত জনবলকে, ‘বিসিবি থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন মাত্র ২০ জন। তাদের পক্ষে পুরো মাঠ কাভার করা কঠিন। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহায়তা করলে কাজটা সহজ হতো। এখানকার স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে কিছুটা ঘাটতি আছে, না হলে এমনটা হতো না।'

তবে পুলিশের দায়িত্বে গাফিলতির কথা অস্বীকার করে পরিতোষ ঘোষ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দর্শক গ্যালারিতে নিরাপত্তা গ্রিলের উচ্চতা মাত্র সাত ফুট। এরকম নিচু গ্রিল বেয়ে যে কেউই মাঠে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে। এমনকি একটি শিশুও গ্রিল বেয়ে যেকোনো সময় মাটে প্রবেশ করতে পারে। তাই গ্রিল আরেকটু উঁচু করা হলে এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

পরিতোষ ঘোষ আরো বলেন, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ম্যাচে স্টেডিয়ামে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সাড়ে চার'শ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। এখানে কোন ধরণের নিরাপত্তার ঝুঁকির আশংকা নেই। যেহেতু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে গেছে তাই মঙ্গলবার থেকে পুলিশ সদস্য বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, এই ম্যাচের আগেও সিলেটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটসহ ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় বড় আসরের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু এরকম কোন ঘটনা কখনই ঘটেনি। তবে এবারের ম্যাচটা যেহেতু টেস্ট ম্যাচ, অনেক লম্বা সময়ের খেলা তাই হয়তো আমাদের পুলিশ সদস্যরা একটা সময় একটু ক্লান্ত হতে পারেন। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছেন দর্শকরা। তবে মঙ্গলবার থেকে আমাদের পুলিশ সদস্যরা আরো সতর্ক থাকবে বলেও জানান মহানগর পুলিশের এ কর্মকর্তা।

সিলেট মহানগর পুলিশের এ কর্মকর্তা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্মকর্তাদের গ্রিলের উচ্চতা বাড়ানোর পরামর্শের পাশাপাশি, খেলা দেখতে আসা সাধারণ দর্শকদেরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত