ক্রীড়া প্রতিবেদক

০৩ মার্চ, ২০২০ ২০:৫৩

শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে শেষ বলের রোমাঞ্চ জিতেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হওয়া এ ম্যাচ বাংলাদেশ জিতে নেয় ৪ রানে। এর আগে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৩২২ রান ৮ উইকেটের বিনিময়ে। আর জিম্বাবুয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ৩১৮ রান। ম্যাচ হারে ৪ রানে।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে একাদশে দুই পরিবর্তন নিয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্ত্তজা। প্রথম ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়েন অল রাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং মোস্তাফিজুর রহমান, তাদের বদলে দলে সুযোগ পেয়েছেন পেসার আল-আমিন এবং শফিউল ইসলাম।

ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেন তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। তবে ইনিংসের ৭ম ওভারে তামিমের শট মুম্বার হাতে ছুঁয়ে লাগে স্ট্যাম্পে আর সে সময় উইকেটের বাইরেই ছিলেন গেল ম্যাচে শতক হাঁকানো লিটন। আর তাতেই রান আউট হয়ে ফিরতে হয় এই ব্যাটসম্যানকে। দলীয় ৩৮ এবং ব্যক্তিগত মাত্র ৯ রানে ফিরতে হয় এই ওপেনারকে।

লিটন ফিরলে উইকেটে আসেন তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই ফিরতে হয় অদ্ভুতুড়ে রান আউট হয়ে। ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বল ফাইন লেগে ঠেলে দেন শান্ত। তবে রানের জন্য দৌড় দেননি কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা তামিম দৌড়ে চলে যান স্ট্রাইক প্রান্তে অগ্যতায় রান নেওয়ার জন্য উইকেট ছেড়ে শান্ত। কিন্তু তখন দেরি হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত দু'জনের ভুল বোঝাবুঝিতে ফিরতে হয় শান্তকে। দলীয় মাত্র ৬৫ রানে ৯ রান করা শান্তকে ফিরতে হয়।

হঠাৎ দুই উইকেট হারিয়ে যখন অস্বস্তিতে বাংলাদেশ ঠিক তখনই উইকেটে আসলেন মুশফিকুর রহিম। তামিমের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটি গড়লেন হাঁকালেন ক্যারিয়ারের ৩৮তম অর্ধশতকও। আর এরপরেই মাধেভেরের শিকার হয়ে ফিরলেন দলীয় ১৫২ রানে। আউট হওয়ার আগে মুশফিক ৫৫ বলে করেন ৫০ রান। এরপর তামিমের সঙ্গে ৪র্থ উইকেটে রিয়াদ গড়লেন শতরানের জুটি। তবে ৪৩তম ওভারে ব্যক্তিগত ৪১ রানে ফেরেন রিয়াদ। আর তাতেই ভাঙে তামিমের সঙ্গের ১০৬ রানের জুটি।

প্রায় দু'বছর পর শতকের দেখা পেলেন তামিম ইকবাল। আর শতক হাঁকিয়ে নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশের হয়ে এর আগে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগৎ রান ছিল ১৫৪। অবশ্য সেই ইনিংসটিও ছিল তামিমের আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। আর নিজের রেকর্ড ভেঙে সোমবার সিলেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগৎ রান করলেন ১৫৮। আউট হওয়ার আগে ২০টি চার আর ৩টি ছয়ে ১৩৬ বলে তামিম ইকবাল করেন ১৫৮ রান।

তামিম ফিরলে দ্রুতই ফেরেন মিরাজ (৫) মাশরাফি (১) এবং তাইজুল (০)। শেষ দিকে মিঠুনের ১৮ বলের ৩২ রানের ক্যামিওতে ৩২২ রানের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। আর জিম্বাবুয়ের সামনে ছুঁড়ে দেয় ৩২৩ রানের পাহাড়সম রানের জয়ের লক্ষ্য। রোডেশিয়ানদের হয়ে  ডোনাল্ড তিরিপানো এবং কার্ল মুম্বা ২টি করে উইকেট নেন আর একটি করে উইকেট নেন ওয়েসলি মাধেভেরে এবং চার্লটন শুমা।

বাংলাদেশকে জবাব দিতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। রেগিস চাকাভাকে (২) লিটন কুমার দাসের তালুবন্দি করে ফেরান শফিউল ইসলাম।

এরপর তিন নম্বরে নেমে আরেক ওপেনার টিনাশে কামুনহুকাম্বের সঙ্গে প্রাথমিক চাপ সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেইলর। ২৯ রানের জুটিতে সে পথে এগিয়েও যাচ্ছিলেন। তবে অসাধারণ এক ফিল্ডিংয়ে এ জুটি ভেঙে সফরকারীদের ফের চাপে ফেলে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

শফিউলে বলে মিডঅনে ঠেলে সিংলে নিতে চেয়েছিলেন টেইলর। ঝাঁপিয়ে পরে বাঁ হাতে বল ধরে দ্রুত হাত বদল করে দারুণ থ্রোতে স্টাম্প ভাঙেন মিরাজ। টেইলর তখনও উইকেটের প্রায় মাঝপথে। ২১ বলে ১১ রান করেন এ ব্যাটসম্যান।

শেষ ৪৮ বলে জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ৯৮ রান, হাতে মাত্র ৩ উইকেট। তখন পর্যন্ত তো হেসেখেলেই জেতার পথে বাংলাদেশ। কিন্তু পরের দিকে হঠাৎ স্বাগতিকদের মনে ঢুকে গেল ভয়। জিম্বাবুয়ের লোয়ার অর্ডারের ডোনাল্ড তিরিপানো আর তিনোতেন্দা মুতুমবজি যে চালিয়ে খেলে ম্যাচ প্রায় ঘুরিয়েই দিচ্ছিলেন!

অষ্টম উইকেটে এই যুগল দশের ওপর রানরেটে খেলে দলকে জয়ের বেশ কাছে নিয়ে আসেন। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ৩৪ রান। শফিউল ইসলামের করা ৪৯তম ওভারে ২ বাউন্ডারিসহ ১৪ রান তুলে নেন তিরিপানো-মুতুমবজি।

শেষ ওভারে দরকার ছিল ২০ রান, খুবই সম্ভব। আল আমিন হোসেন আসেন শেষ ওভারটি করতে, যিনি আবার ৯ ওভারে কোনো উইকেট না নিয়ে ৭০ রান দিয়ে বসেছিলেন আগে।

শেষ ওভারে শুরুটা ভালোই ছিল আল আমিনের। প্রথম বলে দিয়েছিলেন এক রান, পরের ডেলিভারি ওয়াইড। দ্বিতীয় বলে মুতুমবজিকে (২১ বলে ৩৪) লং অনে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে স্বস্তি ফিরিয়েছিলেন আল আমিন।

কিন্তু তৃতীয় বলে বড় এক ছক্কা হাঁকিয়ে দেন তিরিপানো। চতুর্থ বলে আবারও ছক্কা। শেষ দুই বলে দরকার মাত্র ৬ রান। পঞ্চম বলটি বাউন্স দেন আল আমিন। চলে যায় উইকেটের পেছনে। শেষ বলে জিম্বাবুয়ের চাই ছক্কা। স্ট্রাইকে সেট ব্যাটসম্যান তিরিপানো। কিন্তু ওই বলটি আর আকাশে তুলতে পারলেন না তিনি। এক রানেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো জিম্বাবুয়েকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত