কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

১০ জুন, ২০২০ ২১:২৬

কমলগঞ্জে আরও দুই মসজিদের নাম ভাঙিয়ে চেক গ্রহণের অভিযোগ

করোনা দুর্যোগের কারণে সারা দেশে মসজিদে আর্থিক সহায়তার ৫ হাজার টাকা চেক প্রদান করা হয়েছে। গত ৬ জুন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩৩টি মসজিদের জন্য ইমামদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের চেক বিতরণ করেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের কালেঙ্গায় ভুয়া ইমাম কেরামত আলীর পর আরও দুইটি মসজিদের নাম ভাঙিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত চেক গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আদমপুর ইউনিয়নের পূর্ব জালালপুরের বহুল পরিচিত বায়তুন নাজাত জামে মসজিদের নাম কেটে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে একজন মহিলার নামে "সিতারা বিবি জামে মসজিদ" এবং পতনঊষার ইউনিয়নের মহেশপুর করিমিয়া দাখিল মাদ্রাসা মসজিদ এর ভুয়া নাম দিয়ে সরকারি প্রণোদনার পাঁচ হাজার টাকার চেক গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ দুটি মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আদমপুর ইউনিয়নের পূর্ব জালালপুর গ্রামের মুফতি নামধারী আব্দুল জলিল অস্তিত্ববিহিন সিতারা বিবি জামে মসজিদ দেখিয়ে সে মসজিদের ইমাম সেজে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের ৫ হাজার টাকার চেক গ্রহণ  করেন। এ নিয়ে এলাকাবাসী নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে বরাদ্দকৃত চেকটির টাকা উত্তোলনে ব্যাংকে আটকিয়ে সেটি উদ্ধার করা হয়।

আদমপুর ইউনিয়নের পূর্ব জালালপুর গ্রামের বাইতুন নাজাত জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ বলেন, মুফতি আব্দুল জলিল কমলগঞ্জ উপজেলার কোন মসজিদের ইমাম নন। তিনি সম্প্রতি প্রতারণা করে বাইতুন নাজাত জামে মসজিদের নাম কেটে সিতারা বিবি জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদের নাম তালিকাভুক্ত করেন। তিনি সে মসজিদের ইমাম সেজে প্রধানমন্ত্রী অনুদানের ৫ হাজার টাকার চেক গ্রহণ করেন। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সম্মতিক্রমে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত ৮ জুন একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ফলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিতারা বিবি জামে মসজিদের নামে আসা চেকটির টাকা উত্তোলনে আটকিয়ে রাখেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১০ জুন) আদমপুরের পূর্ব জালালপুর গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিতারা বিবি জামে মসজিদ নামে কোন মসজিদের অস্তিত্ব নেই। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আব্দুল জলিল নিজেকে একজন মুফতি দাবী করেন। তাই এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মুফতি আব্দুল জলিলকে না পেয়ে তার মুঠোফোনে (০১৭১৩৮১১৩২৪) দফায় দফায় ফোন দিলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আদমপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন জানান, ভুয়া মসজিদের নামে ৫ হাজার টাকার চেক গ্রহণের বিষয়ে আমার অফিসে প্রিন্টিং মিসটেক হওয়ার কারণে সিতারা বিবি মাদ্রাসা মসজিদ এর স্থলে সিতারা বিবি জামে মসজিদ লেখা হয়েছে। উক্ত অনুদানের টাকা এখনো মসজিদ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। উক্ত মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল জলিল অনুদানের টাকার সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই।

এদিকে পতনউষার ইউনিয়নের মহেশপুর করিমিয়া দাখিল মাদ্রাসাকে মসজিদ দেখিয়ে ইমাম সেজে মাওলানা ফয়ছল আহমদ নামে এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী অনুদানের চেক গ্রহণ করেছিলেন। স্থানীয় স‚ত্রে জানা যায়, মাদ্রাসার অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠান চালু অবস্থায় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শ্রেণী কক্ষকে জোহরের নামাজ আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।  সেখানে যেকোনো শিক্ষকের ইমামতিতে নামাজ আদায় করা হয় এবং কোন নির্দিষ্ট ইমাম নেই। প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজ পড়া হয়না। এ মাদ্রাসার সামান্য কিছু দ‚রে মহেশপুর জামে মসজিদ রয়েছে। এ বিষয়ে মাদ্রাসা সুপার মাওলানা শাহ ফয়ছল আহমদ জানান, মহেশপুর করিমিয়া দাখিল মাদ্রাসার মসজিদে মাইকে আজান দেয়া হয় এবং নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়। ইসলামী ফাউন্ডেশনের অধীনে কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। মাদ্রাসা সভাপতি ও ৫নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সুবহান চৌধুরী বাবু জানান, মসজিদ বিদ্যমান আছে, প্রতিষ্ঠান চলাকালীন সময়ে ছাত্ররা নামাজ আদায় করে এবং অনেক সময় বিভিন্ন মানুষ এই মসজিদে নামাজ আদায় করে। এ দুটি চেক গ্রহণের ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।  ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন চৌধুরী বলেন, অভিযোগগুলো আমি শুনেছি। ইউএনও সাহেব একটি জরুরী কাজে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত