নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ জুন, ২০২০ ১৯:২০

দক্ষিণ সুরমায় কাজ শেষের এক সপ্তাহের মধ্যেই ভেঙ্গে পড়ল সড়ক

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারস্থ বিশ্বরোড থেকে অতিরবাড়ি হয়ে বিশ্বনাথ উপজেলার মুনসিবাজারের আন্তঃযোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক। এ সড়কটি দীর্ঘদিন থেকে ভাঙ্গা থাকার পর এলাকাবাসীর দাবির ভিত্তিতে কাজ হলেও সড়কটি ফের ভেঙ্গে পড়েছে। সড়কের কাজ শেষ হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ভেঙ্গে যাওয়ায় ফের দুর্ভোগে পড়েছেন এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী প্রায় ৪০টির অধিক গ্রামের বাসিন্দা।

জানা যায়, মাসখানেক ধরে সড়কটি ভেঙ্গে পড়লেও স্থানীয় এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে কিছুটা মেরামত করে যাতায়াত অব্যাহত রাখলেও সেদিকে খেয়াল নেই কর্তৃপক্ষের। কেবল তাই না, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বার বার জানানো হলেও পরিদর্শনে যাননি সংশ্লিষ্ট কেউই।

সরেজমিনে লালাবাজারস্থ সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক থেকে ডান দিকে অতিরবাড়ি হয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভিতরে প্রবেশ করলে তেতলি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত লামাপাড়া এলাকায় বাসিয়া নদীর পাড়ে ভাঙ্গা সড়কের অংশ। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায় সড়কটি প্রথমে উভয় পাশ ভেঙ্গে মাঝখানে আনুমানিক ২ থেকে ৩ হাত জায়গা অবশিষ্ট থাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ডান পাশে স্থানীয় এলাকাবাসী ইটের সুরকী ও মাটি ভরাট করে কোনোরকম যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানান যায়, দীর্ঘদিন থেকে সড়কটি ভাঙ্গা থাকলেও এলাকাবাসীর অনুরোধে রিফাত এন্ড কোং এর মালিক আপ্তাব মিয়া নিজ উদ্যোগে প্রথমে সড়কের উভয় পাশে কিছু কাজ করিয়েছিলেন। পরে স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবির ভিত্তিতে এলজিইডির একটি প্রকল্প আসে। ফলে এলাকাবাসীর মনে আশা জাগে। দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কাটিয়ে স্বস্তি ফেরে সড়কটি নির্মাণের মধ্যদিয়ে। কিন্তু আশায় গুড়েবালি। কাজ শেষ হয়ে সপ্তাহ পেরোনোর আগেই ফের ভেঙ্গে পড়ে সড়কটি। রোজার ১০ দিন আগে থেকে সড়কে কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় রোজার প্রথম সপ্তাহেই। যার এক সপ্তাহ শেষ হতে না হতেই ফের সড়কটি ভেঙ্গে পড়ে।

সড়কটি কাজ শেষের হওয়ার সপ্তাহ না ফিরিতেই ফের ভেঙ্গে পড়ায় এলাকবাসির পক্ষ থেকে কাজে অনিয়মের বিষয়টি উল্লেখ করে এলজিইডি সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগটি দিয়েছেন রিফাত এন্ড কোং এর মালিক আপ্তাব মিয়া।

লামাপাড়া এলাকার তরুণ ইসলাম উদ্দিন জানান, প্রথমে এক পাশে গার্ড ওয়াল নির্মাণ করে পরে সড়কে মাটি ভরাট করে কাজ শুরু করেন। কিন্তু কাজ চলমান অবস্থাতেই গার্ডওয়ালটি হেলে পড়ে। কোন ধরণের ভিত্তি ছাড়াই কেবল পিলার দিয়ে গার্ড ওয়াল নির্মাণ করার কারণেই এমনটি হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। এছাড়াও তিনি বলেন, সড়কে মাটি ভরাট করা হয়েছে। কিন্তু কোনোরকম রোলার মেশিন ছাড়াই নরম মাটিতেই কোনোরকম পীচ ঢালাই করা হয়েছে।

লামাপাড়া এলাকার সাবেক মেম্বারের ছেলে আব্দুল জলিল কাজে অনিয়মের কথা উল্লেখ করে বলেন, কোনরকম কাজটি করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ৪ বালটি বালুর সাথে ১ বালতি সিমেন্ট দেয়া উচিৎ। কিন্তু এখানে ৮ বালতি বালুর সাথে ১ বালতি সিমেন্ট দেয়া হয়েছে। আমরা কাজটি সঠিক ভাবে করার জন্য ঠিকাদারকে বার বার অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি।

আব্দুল জলিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আগেই বুঝেছিলাম এটি লোকদেখানো কাজ হচ্ছে। সড়কটি টিকবে না। সবশেষ যখন সড়কটি ভেঙ্গে পড়ল তখন আমরা ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করেছি। ঠিকাদার সরেজমিন আসার কথা বলেও আসেননি। এমনকি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকেও আমরা জানিয়েছি। কিন্তু এক মাস হয়ে যাওয়ায় ভাঙ্গা দিন দিন বাড়তে থাকলেও এর কোন সমাধান হচ্ছে না।

এদিকে এ ব্যাপারে ঠিকাদার সেলিম আহমদের সাথে যোগাযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন।

তবে সড়কটি ভেঙ্গে পড়ার ব্যাপারে অবগত আছেন জানিয়ে এলজিইডি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার প্রকৌশলী আফসর আহমেদ বলেন, আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সরেজমিনে যেতে পারিনি। এখন জায়গাটি ভেঙ্গে গেলো কেন তা ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে জায়গাটি দেখে এলজিইডি'র সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের সাথে কথা বলে আবার কাজ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ঠিকাদার কাজ করে দিতে বাধ্য। তার সাথে আমাদের চুক্তি অনুযায়ী কাজ করার এক বছরের মধ্যে কোন সমস্যা হলে তাকে এটি ঠিক করে দিতে হবে।

কবে ঠিক হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই জুন মাসের মধ্যেই এটি করা হয়ে যাবে। তবে নদীতে যেহেতু পানি চলে আসছে সুতরাং কি ভাবে কি করা যায় তা স্যারের সাথে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত