শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

১৪ জুন, ২০২০ ২১:০৫

শ্রীমঙ্গলে সরকারি সড়কে কালভার্ট নির্মাণে বাধা

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সরকারি একটি সড়কে কালভার্ট নির্মাণে বাধা প্রদানের অভিযোগ ওঠেছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা বালিশিরা খাসিয়া পুঞ্জি নাগাহরি সড়ক দিয়ে দিলবর নগর, রাধানগর, জেরিন, নুরজাহানসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। এলজিইডি'র মালিকানাধীন এই সড়কে এরোনিয়া এসোসিয়েট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান কালভার্ট নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসী। তবে এরোনিয়া এসোসিয়েট সংশ্লিস্টদের দাবি, যে জায়গায় কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে তা এলজিআরডির নয়। এই জায়গা নিজেদের ক্রয়কৃত জায়গা বলে দাবী জানিয়েছে এরোনিয়া এসোসিয়েট লিমিটেড।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের ভিতর দিয়ে রাধানগর মসজিদের সামনে থেকে বালিশিরা খাসিয়া পুঞ্জি পর্যন্ত যাওয়া রাস্তার চারটি জায়গায় বাঁশের সাকো ভেঙ্গে মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে কালভার্ট নির্মানের জন্য। এগুলোর জন্য মাটি খুড়ে রডও বসানো হয়েছে। কালভার্ট নির্মানের জন্য আনা ইট, রড, পাথর, বালি বৃষ্টির পানিতে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।

রাস্তার সামনে এরোনিয়া এসোসিয়েট কয়েকটি বিলবোর্ড রয়েছে। যেগুলোতে এখানে কোন কাজ না করার নিদের্শনার কথা লেখা রয়েছে।

এলাকার প্রবীন বাসিন্দা মনতাজ মিয়া বলেন, আমরা বাপ দাদার আমল থেকে এই জায়গায় বসবাস করে আসছি। এই রাস্তাটি দিয়ে আমরা যাতায়াত করছি। এখানে সরকার থেকে আমাদের কথা ভেবে ৪টি কালভার্ট নির্মাণ করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কালভার্ট নির্মানের জন্য এখানে সব সরঞ্জাম আনার পর এখন হঠাৎ করে এরোনিয়া এসোসিয়েট লিমিটেড কাজ বন্ধ করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। এই রাস্তা যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা এই গ্রামের লোকেরা যাতায়াত করবো কিভাবে।

বিজ্ঞাপন



স্থানীয় শামসুল হক বলেন, রাস্তাটি মৃক্তিযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই ছিলো। সরকারি রাস্তা হিসেবে অর্ন্তভুক্ত হওয়ায় সরকারিভাবে কাজও হয়েছে। এই রাস্তার উপরে আগে বাশের সাঁকো ছিলো এখন কালভার্ট নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে কাজ শুরুর পর বার বার এখানে বাধা দিচ্ছে এরোনিয়া এসোসিয়েট। তারা এখানে বড় বড় করে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে কোন স্থাপনা নির্মান না করার নিদের্শনা জারি করে। আমরা এলাকাবাসী এই রাস্তার জন্য অনেক প্রতিবাদও করেছি। এখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে সব কিছু যাচাই বাছাই করে নির্মান কাজ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও বার বার এখানে কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এখন কাজটি পুরোপুরিই বন্ধ। কাজের জন্য আনা রড, পাথর বালি, ইট ইত্যাদি নষ্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, এটা শত বছরের পুরোনো রাস্তা, এখন হঠাৎ করে এরোনিয়া এসোসিয়েট ৫-৬ মাসে আগে জায়গা ক্রয় করে রাস্তাটি বন্ধ করে মানুষের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটাতে চাচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন) ভানু লাল রায় বলেন, আমি এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। আমার পূর্বের চেয়ারম্যান আফজল হক ১৯৯৯ সালের উদ্যোগে মৌলভীবাজার-৪ আসন (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) এর সাংসদ আব্দুস শহীদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) কর্মসূচীর মাধ্যমে রাস্তাটির প্রসস্তকরণ কাজের উদ্বোধন করেন। ১৯৭১ সালের পর থেকে রাস্তাটি পায়ে হাঁটার রাস্তা ছিলো। পরবর্তিতে জনগণের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে এই রাস্তাটির প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হয়। আমি গত দশ বছর যাবত চেয়ারম্যান হয়ে এই রাস্তায় সরকারি অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। এই জায়গার আগের মালিকের ইচ্ছায় এই রাস্তায় কাজ করা হয়েছিলো এবং এলজিআরডি তালিকাভুক্ত করা হয়েছিলো। এই রাস্তার উপর চারটি বাশের সাঁকো ছিলো। জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে এই জায়গার উপর কালভার্ট নির্মাণ  করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে বার বার দ্বারস্ত হওয়ার পর ৪টি কালভার্টের জন্য বরাদ্ধ পেয়েছি। এখন হঠাৎ করেই এরোনিয়া এসোসিয়েট রাস্তার পাশে জায়গা কিনে এলজিআরডির তালিকাভুক্ত এই রাস্তাটি তাদের বলে দাবি করছে এবং রাস্তাটি বন্ধ করার পায়তারা করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এরোনিয়া এসোসিয়েট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপক জুনেদ আহমেদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, এই জায়গাটি আমরা যখন ক্রয় করেছি, আমরা সকল কাগজপত্র ভুমি অফিস থেকে চেক করে নিয়েছি। এখানে কোনো রাস্তা নেই। কোন ম্যাপেও রাস্তার উল্লেখ নেই। এখন আমরা যে জায়গাটি ক্রয় করেছি সেখানে পায়ে চলার রাস্তাটি যদি আমরা মানুষের চলাচলের জন্য দান করে দেই তখন আমাদের জায়গাটি দ্বিখন্ডিত হয়ে যাবে। আমরা এই বিষয়টির সমাধানের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীকে নিয়ে কয়েকবার বসেছি। বসার পরে আমাদের যে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা আমাদের জায়গার শুরুতে ও শেষে দুইটি গেইট দিয়ে দেবো। এখানে বসবাসরতরা যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সেইভাবেই আমরা কাজ করবো। এই রাস্তায় তাদের অধিকার থাকবে। সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা এই সিদ্ধান্তটি লিখিত আকারে করবো। যাতে পরবর্তিতে রাস্তায় যাতায়াতে কারো কোন অসুবিধা না হয়। এখন হঠাৎ করে দেখলাম ঠিকাদারের লোকজন রাস্তায় মাপঝোঁক করা শুরু করেছেন। যে জায়গাটির উপর রাস্তা রয়েছে, তা পুরোটাই আমাদের ক্রয়কৃত জায়গার উপর। সার্ভেয়ার এই জায়গা মেপেছেন। তিনি মেপে এই কথা সবার সামনে বলেছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকৌশলী সঞ্জয় মোহন সরকার বলেন, এরোনিয়া এসোসিয়েট লিমিটেড দাবি করেছিলো রাস্তাটি তাদের তাই যাচাই বাছাই করার জন্য কাজটি স্থগিত ছিলো। কিছুদিন আগে মৌলভীবাজার নির্বাহী প্রকৌশলীর জায়গাটি পরিদর্শন করে গেছেন এবং সবার মতামত নিয়েছেন। এই রাস্তাটি এলজিআরডির অর্ন্তভুক্ত রাস্তা। কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন নয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত