বিশ্বনাথ প্রতিনিধি

১৩ জুলাই, ২০২০ ২১:২২

বিশ্বনাথে শিক্ষিকার আত্মহত্যা : দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

সিলেটের বিশ্বনাথে শিক্ষিকার আসমা শিকদারের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের স্বামী ও পিতার পরিবারের দাবি ‘আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ দৌলতপুর’ গভর্নিংবডির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও এক সদস্যের চাপ ও অপমান সইতে না পেরে আত্মাহুতির মতো ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিয়েছেন আসমা। এ অভিযোগে থানায় মামলাও চলমান রয়েছে।

আর স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফের পরিবারের দাবি পারিবারিক কলহের কারণেই আসমা শিকদার আত্মহত্যা করেছেন। এখন গভর্নিংবডির উপর দায় চাপিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। উভয় পক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

তবে, এই ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী।

এদিকে আসমা শিকদার নিহতের দিন থেকে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিম উদ্দিন গা ঢাকা দেয়ায় এলাকায় নানা গুঞ্জন ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, গত ৬জুলাই হারপিক পানের পর ৮জুলাই ‘আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ দৌলতপুর’র অফিস সহকারী আসমা শিকদার সীমলা (৪০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাহাড়া-দুভাগ গ্রামের ফজলু মিয়ার স্ত্রী।

ওইদিন (৮ জুলাই) বিকেলে গভর্নিংবডির সভাপতির সাথে কথা বলে তাঁর বাড়ি থেকেই দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা ও গভর্নিংবডির সদস্য আনোয়ার মিয়াকে (৪২) আটক করে পুলিশ। পরদিন ৯জুলাই নিহতের স্বামী ফজলু মিয়া বাদি হয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হাসিম উদ্দিন (৫৫) ও কমিটির সদস্য আনোয়ার মিয়াকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং ৬)। আর ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে (৯জুলাই) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।

সরেজমিন নিহত আসমা শিকদারের বাবার বাড়ি আটপাড়া গেলে তার স্বামী ফজলু মিয়া বলেন, মামলায় সভাপতিসহ অভিযুক্ত তিনজনই তার স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত মানসিকভাবে টর্চার করেছেন। আয়-ব্যয় হিসাব দিতে বার বার চাপ সৃষ্টি করেছেন। ৬জুলাই প্রতিষ্ঠানে বৈঠক শেষে আবারও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। যে কারণে তার স্ত্রী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের তিনি প্রশাসনের কাছে ফাঁসির  দাবিও করেছেন।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, মামলার প্রধান আসামি গভর্নিং বডির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফের স্ত্রী রাবেয়া রউফ বলেন, তার স্বামী স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এবং কলেজ বাস্তবায়নে আর্থিক অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করছেন। আর এ কারণেই তারা (স্বামী-স্ত্রী) গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ফিরেছেন এবং সম্প্রতি তার স্বামীকে গভর্নিংবডির সদস্যরা সভাপতি নির্বাচিত করেছেন।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি অযথা হয়রানী করতে অফিস সহকারি আসমা শিকদারের  আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় তার স্বামীকেও অন্যায়ভাবে আসামি করা হয়েছে। তিনিও মামলার হয়রানি থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও নিহতের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য উদঘাটন হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা হলে গর্ভনিংবডির সাবেক সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্য আলী আকবর মিলন বলেন, আসমা শিকদার খুবই ভালো ও জনপ্রিয় একজন শিক্ষিকা ছিলেন। তার আত্মহত্যার প্ররোচনায় যারা দায়ী, তাদেরকে সুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হোক।

একই বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের কলেজ ভবন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম খান সোহেল।

এ প্রসঙ্গে দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমির আলী বলেন, এই মৃত্যু কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি এ মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য সাংবাদিক ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।

এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. শামীম মুসা বলেন, অভিযুক্ত আসামীরাই আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য দায়ী। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত