মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

১৬ জুলাই, ২০২০ ১৬:০০

...বাট নট এ ড্রপ টু ড্রিংক

হাওরে বানভাসী মানুষের বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

বর্ষায় হাওর মানে পানি আর পানি। আদিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি। অথচ এই পানির দেশেই দেখা দেখা দিয়েছে খাবার পানির সঙ্কট। বন্যায় নলকুপ তলিয়ে যাওয়ায় খাবার পানির সঙ্কটে পড়েছেন সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার বানভাসীরা। ‌'ওয়াটার ওয়াটার এভরিওয়্যার বাট নট এ ড্রপ টু ড্রিংক' অবস্থা।

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও হাওরে মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। একদিকে বন্যায় বাড়িঘরে পানি অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানির সংকট। গত শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। অনেকেই বলছেন, ২০০৪ এর বিশাল বন্যার পর ২০২০ এর বন্যা ছিলো ভয়াবহ। এদিকে হাওরে সবদিকে পানি ও নলকূপগুলো বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি উপজেলায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল।

সরেজমিনে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ও তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় তা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে নদ-নদীতে প্রবেশ করে সেখানকার নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলোকে প্লাবিত করে। প্রতি বছর হাওরে এই সময়টা পানি থাকার কথা হলেও এবার পানির মাত্রা ছিলো বেশি। এছাড়া সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাত ও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা কবলিত হওয়ায় হাওর এলাকার মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের এলাকাগুলো থেকে পানি দ্রুত নামলেও হাওরের পানি নামছে ধীর গতিতে। যার কারণে ওই সকল হাওর এলাকার মানুষের খাবার সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সংকট রয়েছে অনেক।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া তাহিরপুর উপজেলার মল্লিকপুর, রামজীবনপুর, মারালা গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে মানুষ এখনও পানিবন্দি জীবন পার করছেন। তাদের মতোই বিশ্বম্ভরপুর উপজেলারও বাঘমারা, দুর্গাপুর, সোনাপুর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন।

অন্যদিকে বিশুদ্ধ পানির সংকট দূরীকরণে জন্য বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্যাংকের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা করছে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবান নগর গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজা বেগম বলেন, বন্যার পানি আইয়া ঘরও পানি, রান্না করার চুলা নাই এখন, পানিও যে খাইতাম ময়লা। আমরা খুব সমস্যাত পরছি বন্যায়। এখন দেখি ইকানো পানি দেওয়া অইরো তাই কলস লইয়া আছি পানি নিতাম।

একই গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর সুব্রত দাশ বলেন, আমরা ভাই দিন আনি দিন খাই, সমস্যা সব আমরার কপালেই থাকে, বন্যার পানি আমার ঘর বাড়িতে কমর পানি, পানি কমের কিন্তু খুব আস্তে আস্তে পানি নামের। এখন ঘরও ভাত নাই, চিড়া মুড়ি খাইরাম। আমরাও পিপাসা লাগে তাই পানি নিতে আইলাম। হাওরের পানি খাওয়া যায় না, গন্ধ।

তাহিরপুর উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা দিন ইসলাম বলেন, পানি আগের থাকি কিছুটা কমছে, কিন্তু আমরার ঘরও খাওয়ার ভালা পানি নাই। আশ্রয় কেন্দ্র থকি আমরারে পানি বিশুদ্ধিকরণের দুইটা ট্যাবলেট দিসে এইগুলো দিয়া বেশি অইলে দুইদিন পার করছি. আর ঘরও এই অবস্থাও নাই যে পানি ফুটাইয়া খাইতাম।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, সুনামগঞ্জে বন্যা মোকাবেলায় আমরা এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় ৪ লক্ষ পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট প্রদান করেছি। এছাড়া ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্রে নলকূপ বসিয়েছি। আমরা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর যেনো তারা টিউবওয়েল পরিষ্কার করতে পারেন সেজন্য আমরা প্রতিটি উপজেলায় ৬০০ কেজি ব্লিচিং পাউডার প্রদান করেছি।

তিনি আরও বলেন, বন্যা মোকাবেলায় আমরা ৩০০টি পাকা ল্যাট্রিন তৈরি করেছি। তাছাড়া আমাদের কাছে আরও ৬ লক্ষ পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট রয়েছে আমরা সেটি প্রয়োজন অনুযায়ী দিয়ে দিবো। তবে এবার আমরা বিশুদ্ধ পানি সংকট দূরীকরণে সুনামগঞ্জ শহর এলাকাগুলোতে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে পানি দেওয়া ব্যবস্থা করেছি, যাতে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষরা বিশুদ্ধ পানির সংকট থেকে রেহাই পাচ্ছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত