সনেট দেব চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল

১৬ অক্টোবর, ২০১৫ ১৪:১০

দুর্গাপূজা : শ্রীমঙ্গলে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে শ্রীমঙ্গলের মন্ডপগুলোতে প্রতিমা নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে মৃৎশিল্পীসহ সংশ্লিষ্ট সকলে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার গোটা উপজেলায় সার্বজনীন ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে ১৬৩টি মন্ডপে এ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পৌরসভার মধ্যে ১৪টি ও ৩টি ব্যক্তিগত মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে এবং উপজেলার বাকি ৯টি ইউনিয়নে ১৩৮টি সার্বজনীন ও ৮টি ব্যক্তিগত মন্ডপে হবে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

সরজমিনে পরিদর্শনের সময় কারিগরদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মন্ডপগুলোতে মাটির দ্বারা প্রতিমা গড়ার কাজ প্রায় শেষের পথে। শুকানোর পর্ব শেষ হলেই রংয়ের কাজ শুরু হবে। তবে কিছু কিছু জায়গায় রংয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। অন্য দিকে আলোকসজ্জার কাজও সমান তালে এগিয়ে চলছে।

অপরদিকে প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়। শারদীয় দুর্গা পূজা সুষ্ঠ ও শান্তিপুর্ণভাবে উদযাপনের উপলক্ষে উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির বিশেষ সাধারন সভা অনুষ্টিত হয়েছে গত ১২ অক্টোবর সোমবার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শহীদুল হক এর সভাপত্তিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক চিফ হুইপ আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি।

সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব সভাপতি গোপাল দেব চৌধুরী, ডা. হরিপদ রায়, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী শিবু লাল বসু, শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম নজরুল, শ্রীমঙ্গল বিজিবি সেক্টরের অপারেশন অফিসার মেজর শাহেদ মেহের, পৌর আওয়ামীলীগ সম্পাদক অর্ধেন্দু কুমার দেব বেভুল, শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, সাতগাঁও চা বাগানের ম্যানেজার মোঃ রফিকুল ইসলামসহ আরো অনেকে। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।” হিন্দু সম্প্রদায়ের আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে সবাই মিলে মিশে কাজ করবো। নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে যার যার দায়িত্ব পালন করবো। শহরের যানজট নিয়ন্ত্রন, মোটর সাইকেল ও গাড়ীগুলোকে নিয়মিত চেকিং করা, শহর ও শহরতলীর প্রতিটি দুর্গা পূজা মন্ডপে টহলের ব্যবস্থা করাসহ আইন শৃংখলা বাহিনীকে যেসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা সেটা পালন করবেন। এছাড়াও দুরদুরান্তের যেসব পূজা মন্ডপগুলো আছে সেগুলোতে নিয়মিত ও ঘনঘন টহলের ব্যবস্থা করা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক জহর তরফদার বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে প্রায় লক্ষাধিক হিন্দু ধর্মের ধর্মাবলম্বীদের বসবাস। দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে পৌরসভাসহ গোটা উপজেলার পূজামন্ডপে পুরোদমে কাজ এগিয়ে চলছে। শ্রীমঙ্গলের দুর্গা পূজা দেখতে দুরদুরান্ত থেকে নানা ধরনের মানুষ এখানে আসেন।

শহর ও শহতলীর বড় পূজা মন্ডপগুলো হলো সার্বজনীন দুর্গাবাড়ি, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, ক্যাললিক মিশন রোডের সার্বজনীন পূজা কমিটি, মাস্টারপাড়া পূজা সংসদ, শ্রীশ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীবাড়ি, ধানসিঁড়ি পূজা সংসদ, স্বরলিপি সংঘ, পূর্বাশা সার্বজনীন দুর্গাবাড়ী, শ্রীশ্রী বারোয়ারী কালীবাড়ি, সার্বজনীন পূজা সংসদ লালবাগ।

অপরদিকে পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে আগমি ১৮ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচদিনের পূজা অর্চনাকালে যাতে কোনোরকম বিঘ্ন সৃষ্টি বা অঘটন না ঘটে সে জন্য প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। দুরদরান্তের পূজা মন্ডপের জন্য থানা পুলিশসহ অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে যাতে করে সুষ্ঠভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের দুর্গা পূজা উৎসব পালন করতে পারে। তবে দুর্গা পূজা ঘিরে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর খবর পাওয়া যায়নি।

শ্রীমঙ্গলের দুর্গা পূজা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শ্রীমঙ্গলবাসী যেন শান্তি এবং শৃংখলার সাথে আনন্দঘন পরিবেশে এই উৎসব পালন করতে পারে সে জন্য শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ পেট্রোল, মোবাইল পেট্রোল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী শিবু লাল বসু আইন শৃংখলা সভায় বলেন, শ্রীমঙ্গল হলো মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তর। এখান থেকে আমরা সাতটি উপজেলা নিয়ন্ত্রন করি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রত্যেকটি উপজেলার জন্য স্ট্যান্ডবাই কমিটি করেছি। যারা সার্বক্ষনিক কাজ করবে। একটা কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। এছাড়াও কন্ট্রোল রুমের নাম্বারে যদি সংযোগ না পান তাহলে আমার এবং আমার ইঞ্জিনিয়ারে মোবাইল নাম্বার আছে সেই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।

শ্রীমঙ্গল বিজিবি সেক্টরের অপারেশন অফিসার মেজর শাহের মেহের আইন শৃংখলা সভায় বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে গোটা জেলায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও টহল জোরদার করার জন্য বলা হয়েছে। এটা হেডকোয়াটারের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে এবং সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করছি। শুধুমাত্র শ্রীমঙ্গল নয় গোটা জেলায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করছি। সেই জন্য নিরাপত্তার জন্য দুটি প্লাটুন ছাড়াও বিজিবি সেক্টরে রিজার্ভ র্ফোস থাকবে। যাতে করে এই দুটো প্লাটুনকে সহায়তা দেওয়া যায়।

বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তারিকুল ইসলাম খান জানান, দুর্গা পূজায় বিজিবি’র জন্য জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে। সেটি আমরা হেডকোয়াটারে জানিয়েছি। হেডকোয়াটার সিদ্ধান্ত দিলে আমরা বিজিবি মোতায়েন করবো। এই বিষয়ে কিছু দিনের মধ্যেই জানিয়ে দেবে। যদি হেডকোয়াটার অর্ডার দেয় তাহলে দুটো প্লাটুন বিজিবি রাখবো। একটি প্লাটুন রাখবো শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার উপজেলার জন্য। অপর প্লাটুনটি রাখবো কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার জন্য।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত