
১৬ অক্টোবর, ২০১৫ ১৬:২৭
সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার দুই আসামী এখনো পলাতক রয়েছে। এই মামলার প্রধান আসামী কামরুল ইসলামকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনা হয় বৃহস্পতিবার। তবে কামরুলের ভাইসহ পলাতক দুই আসামীকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। প্রায় সাড়ে তিন মাসেও পলাতক আসামী শামীম ও পাভেলের কোনো হদিস পায় নি পুলিশ।
এদিকে রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান আজকেও অভিযোগ করেছেন পলাতক থাকা আসামী ও তাদের স্বজনরা তাকে ও এই হত্যা মামলার সাক্ষীদের হুমকী প্রদান করছে।
রাজন হত্যা মামলায় এজাহারভূক্ত ১৩ আসামীর মধ্যে কামরুলসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। তবে এদের বেশিরভাগকেই জনতা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কামরুলকে সৌদি আরব প্রবাসী বাঙালিরা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
১৩ জনের মধ্যে ১১ জন গ্রেফতারকেই সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করেছেন সিলেটের পুলিশ কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার রাতে কামরুলকে ফিরিয়ে আনার পর সিলেট মহানগর পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে পলাতক থাকা দুই আসামীকে গ্রেফতারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জানতে চান এক সাংবাদিক। এসময় মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রোকন উদ্দিন বলেন, ১৩ আসামীর মধ্যে ১১ জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা কম বড় সাফল্য নয়। খুব কম মামলার ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটেছে। এই সাফল্যের কথাও আপনারা প্রচার করেন। কেবল নেগেটিভ খুঁজবেন না।
তবে মহানগর পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান এসময় বলেন, পলাতকদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। তাদের ব্যাপারে আমরা খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি।
রাজন হত্যার পর আসামীদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা ও মামলার ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছিলো পুলিশের বিরুদ্ধে। তদন্তে এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন, মামলার বাদী এসআই আমিনুল ইসলাম, এসআই জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
অর্থের বিনিময়ে কামরুলকে বিদেশ পালিয়ে যেতে সহযােগিতারও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। শুক্রবার আদালত চত্বরে হাজির হয়ে রাজনের বাবা কামরুলকে পালিয়ে যেতে যারা সহযোগিতা করেছিলো তাদের খুঁজে বের করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাওয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ১৩ বছরের শিশু রাজনকে। ১৬ আগস্ট সিলেট মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে কামরুল ইসলাম, শামীম আহমদ ও পাভেলকে পলাতক দেখানো হয়। এদের মধ্যে কামরুল ও শামীম পরষ্পরের ভাই।
২৪ আগস্ট আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতকদের গ্রেফতারে পরোয়ানা ও তাদের মালামাল বাজেয়াপ্তের নির্দেশ জারি করেন। ২৫ আগস্ট কামরুল ইসলাম ও শামীম আহমদের মালামাল বাজেয়াপ্ত করে জালালাবাদ থানা পুলিশ। পরে পাভেলের দিরাইর বাড়িতে অভিযান হলেও বাজেয়াপ্ত করার মত তার কোনো মালামাল পাওয়া যায়নি।
মামলাটির এজাহারভূক্ত আসামিরা হলেন, কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে কামরুল ইসলাম, তার ভাই মুহিত আলম (৩২), আলী হায়দার (৩৪), শামীম আলম (২০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের অলিউর রহমান ওরফে অলিউল্লাহর ছেলে মো. জাকির হোসেন পাভেল (১৮), জালালাবাদ থানার পীরপুর গ্রামের মৃত মব উল্লাহর ছেলে সাদিক আহমদ ময়না ওরফে বড় ময়না (৪৫), পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের ছেলে নূর আহমদ ওরফে নুর মিয়া (২০), শেখপাড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন আহমদের ছেলে দুলাল আহমদ (৩০), সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরগাঁওয়ের মোস্তফা আলী ওরফে পেচার ছেলে আয়াজ আলী (৪৫), শেখপাড়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে তাজউদ্দিন আহমদ ওরফে বাদল (২৮), সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুর্শি ইসলামপুর গ্রামের মৃত মজিদ উল্লাহর ছেলে মো. ফিরোজ আলী (৫০), কুমারগাঁওয়ের মৃত সেলিম উল্লাহর ছেলে মো. আজমত উল্লাহ (৪২) ও হায়দরপুর গ্রামের মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন রুহেল (২৫)।
তাজ উদ্দিন বাদল ও রুহুল আমিন ছাড়া বাকি ৮ জন রাজন হত্যা মামলায় আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
আপনার মন্তব্য