মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

০৭ আগস্ট, ২০২০ ১৩:৩৩

বাড়িতে একবছর সাজাভোগ, পেলেন আদালতের উপহার

অপরাধ করলে সাজা পেতে হয় সেটাই হল আইনের নিয়ম কিন্তু সাজা যদি হয় বাড়িতে বসে ভোগ করার তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কথা। ঠিক একইভাবে সুনামগঞ্জে মাদক মামলায় এক বছরের সাজা ভোগ করলেন পৌর শহরের হাসননগর এলাকার বাসিন্দা মো. নুর উদ্দিন ওরফে সেলিমের (৩৮)। কিন্তু তাকে আদালত জেল হাজতে না পাঠিয়ে একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে নিজ বাড়িতে থেকে ওই সাজা ভোগের আদেশ দেন। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার নুর উদ্দিনের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আদালত তার ওপর খুশি হয়ে তিনটি গাছের চারা উপহার দেন।

সুনামগঞ্জে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভদীপ পাল গতকাল বৃহস্পতিবার এই আদেশ দিয়েছেন। এদিকে বন্দিজীবন থেকে মুক্ত হয়ে খুশি বিদ্যুৎ শ্রমিক নুর উদ্দিন। তাকে ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স ১৯৬০’ মোতাবেক সাজা দেওয়া হয়েছিল। আদালতের বিচারকের আদেশে জেলা প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতে থেকে সাজাভোগ করেন নুর উদ্দিন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, নুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা ছিল। এই মামলায় গত বছরের ১০ এপ্রিল তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত কিন্তু তাকে কারাগারে পাঠানো হয়নি। বিচারক তাকে সংশোধনের জন্য জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমানের তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতে থেকে সাজাভোগের আদেশ দেন। নিয়ম মেনে পুরো এক বছরই নির্ধারিত সব শর্ত মেনে চলেন ওই ব্যক্তি। তার সাজার মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ১০ এপ্রিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে প্রবেশন কর্মকর্তা ভার্চুয়াল আদালতে ওই আসামিকে চূড়ান্তভাবে মুক্তি দিতে আবেদন করেন। এই আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার নুর উদ্দিনকে চূড়ান্তভাবে মুক্তি দেন বিচারক। একই সঙ্গে প্রবেশন কর্মকর্তার মাধ্যমে তিনটি ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণের জন্য উপহার দেওয়া হয়।

মুক্ত হয়ে মো. নুর উদ্দিন বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। বিদ্যুতের কাজকাম করে সংসার চালাই। আমি জেলে গেলে পরিবারের অন্যদের না খেয়ে থাকতে হতো। আদালতের দয়ায় জেল থেকে রক্ষা পেয়েছি। আদালতের প্রতিটি আদেশ এই এক বছর পালন করেছি। আমি আর কখনো মাদক গ্রহণ বা কোন রকমের অপরাধ করবো না।

জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান বলেন, বাড়িতে থেকে সাজা খাটার বিষয়ে নুর উদ্দিনকে শর্ত দেওয়া হয় তিনি একবছর জেলার বাইরে যেতে পারবেন না। পরিবার, প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবেন। আর কোনো অপরাধে জড়াবেন না। নিয়মিত প্রবেশন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। তিনি সব শর্ত মেনেছেন। তাই আদালত তাকে চূড়ান্তভাবে মুক্ত করে দিয়েছেন

আপনার মন্তব্য

আলোচিত