সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৮:১২

পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবিগঞ্জ

গত একদশকে হবিগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে অনেক পুকুর ও জলাশয়

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার একটি প্রতিনিধিদলের হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয় পরিদর্শন করে। গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর সরজমিনে পরিদর্শনে উঠে আসে হবিগঞ্জের পুকুর ও জলাশয় ভরাটের চিত্র। এই পুকুর ও জলাশয় ভরাটের ফলে হবিগঞ্জ পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাপার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

বাপার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন হবিগঞ্জ বাপার সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল, বাপার আজীবন সদস্য ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল, বাপা সদস্য ডা. আলী আহসান পিন্টু, পরিবেশকর্মী আবিদুর রহমান প্রমুখ।

বাপার প্রতিনিধি দলের মতে, একসময়কার পুকুরের শহর হবিগঞ্জ আজ তার ঐতিহ্য হারিয়ে পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন। বেশিদূর যেতে হবে না। কেবল গত এক দশকে হবিগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে অনেকগুলো পুকুর ও জলাশয়। সেখানে গড়ে উঠেছে অট্টালিকা, মার্কেট, ট্রাক স্ট্যান্ডসহ নানা ধরনের স্থাপনা। আবার কোনো কোনো জলাশয় ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এমনকি পুকুর ভরাট করে খোদ পৌরসভাই মার্কেট নির্মাণের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। সেজন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছ। আর সবকিছু ঘটছে সবার সামনে। দেশে পুকুর ও জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও সে আইন হবিগঞ্জে অচল। বিভিন্ন ব্যক্তির পাশাপাশি খোদ সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হবিগঞ্জের ফুসফুস খ্যাত পুকুর ও জলাশয়গুলো ভরাট করেছেন। এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

বাপার এ প্রতিনিধিদলটি শহরের টাউন মডেল স্কুলের সামনের পুকুর, বিয়াম স্কুল সংলগ্ন জলাশয়, বিকেজিসি স্কুল সংলগ্ন দিগন্তপাড়ার পুকুর, হবিগঞ্জ হাইস্কুল সংলগ্ন নুকুল দিঘী, বাজার রেলস্টেশন সংলগ্ন জলাশয়, মাস্টার কোয়াটার এর পুকুর, চিরিয়াকান্দি এলাকায় গোপিনাথপুরের পুকুর, গার্নিং পার্ক এর প্রবেশদ্বারের পুকুরসহ বেশ কিছু পুকুর ও জলাশয় পরিদর্শন করেন।

এ ব্যাপারে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, যেকোন শহরের পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয় হচ্ছে ওই শহরের বারিপাত অঞ্চল। যা ভরাটের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ধরে রাখার ক্ষেত্রে এই জলাশয়সমূহ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। যেকোন জলাশয়কে সংস্কার করলে অল্প খরচে দৃশ্যমান উন্নয়ন করা সম্ভব। পুকুর রক্ষায় হবিগঞ্জে ইতিপূর্বে বৃহৎ সামাজিক আন্দোলনের পরও রাজনৈতিক নেতৃত্বের এমন উদাসীন দৈনতা আমাকে হতাশ করেছে। যেসকল পুকুর পুরোপুরি বা আংশিক ভরাট করা হয়েছে তা পুণঃখনন করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান পুকুরগুলো রক্ষা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

হবিগঞ্জ বাপার সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে জলাশয়গুল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী বিষয়। শুকনো মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানিরস্তর কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় রাখার ক্ষেত্রেও জলাধারগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হবিগঞ্জকে আগামিতে আরও প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য শহরের সকল পুকুর, দীঘি ও জলাশয় ভরাট বন্ধ , পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও সর্ব সাধারনের জন্য উন্মুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজন হলেও হবিগঞ্জের পরিবেশ ও নাগরিক জীবনমান সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নজরে পড়ছেনা।

বাপার আজীবন সদস্য ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, হবিগঞ্জের অনেকগুলো পুকুরের সাথে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িত। সেসকল পুকুর ভরাট করে মেরে ফেলার অর্থ হলো আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে গলা টিপে মেরে ফেলছি। পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ সভ্য মানুষের কাজ নয়। পৃথিবীর কোনো সভ্যদেশ এ কাজ করে না। হবিগঞ্জ পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান ও পুকুর-জলাশয় ভরাটে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকাই পারে বিদ্যমান পুকুরগুলোকে রক্ষা করতে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত