জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৯:৪৩

ছাত্রের শরীরে গরম চা ঢেলে দেন মক্তবের শিক্ষক

সিলেটের জৈন্তাপুরে মসজিদে (মক্তব) পাঠদানের সময় এক শিক্ষক ফ্লাক্সের গরম চা ঢেলে দিয়ে ৭ বছরের শিশুর শরীর পুড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে অভিযুক্ত শিক্ষকের দাবি, দুর্ঘটনাবশত শিক্ষার্থীর গায়ে গরম চা পড়ে গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে শিশুর পরিবার।

শিশুর মা ও বাবা জানান, মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল অনুমান ৭টায় হেমু তিনপাড়া পশ্চিম মহল্লা জামে মসজিদের মক্তবে পড়তে যায় জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেপুর (হরিপুর) ইউনিয়নের হেমু মাঝপাড়া গ্রামের এখলাছ উদ্দিনের ছেলে শাহরিয়ার নাফিজ নাবিল (৭)। সে হেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। মক্তবে নাবিলকে সহপাঠীর সাথে আলাপ করতে দেখে রেগে গিয়ে মক্তবের শিক্ষক আব্দুল করিম (২৭) ফ্লাক্স হতে গরম চা এনে শিশুর শরীরে ঢেলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটির শরীর পুড়ে যায়। এই অবস্থায় মক্তবের অন্যান্য ছাত্ররা শিশুটিকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।

নাফিজের বাবা এখলাছ উদ্দিন চাকরীর সুবাধে হবিগঞ্জে থাকায় তার স্ত্রীকে বিষয়টি কাউকে না জানাতে চাপ প্রয়োগ করে এবং ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে শিশুটির মা তাকে স্থানীয় ফার্মেসিতে চিকিৎসা দেন এবং স্বামী এখলাছ মিয়াকে খবর দেন। খবর পেয়ে স্বামী ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ি ফেরেন এবং শিশু নাফিজের অবস্থা দেখে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার বিষয়ে জানতে মসজিদে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান সেই শিক্ষক এখনও পাঠদান করছেন। তাই বিষয়টি গ্রামের মুরব্বীদের জানালে এখলাছকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করা হয়। এরপর এখালাছ বিষয়টি ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল কাহির পঁচা মিয়াকে জানান। তিনি শিশুটির অবস্থা দেখে তাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন।

বিজ্ঞাপন



শিশুর পিতা আরও জানান, আব্দুল করিম শুধুমাত্র মক্তবের শিক্ষক নন তিনি অত্র এলাকার দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম হেমু মাদ্রাসায়ও শিক্ষকতা করেন। তার কাছ থেকে শিশু নির্যাতন করা আমি আশা করিনি। বর্তমানে আমার ছেলেটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছি চিকিৎসা কাজ শেষে আমি থানায় মামলা দায়ের করব।

তবে অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, আমি ইচ্ছে করে তার উপর চা ঢালিনি। ওই ছাত্র নিচে বসা ছিল, সে যখন উঠে দাঁড়ায় তখন দুর্ঘটনাবশত আমার হাত থেকে চায়ের কাপ ওই ছাত্রের উপর পরে যায়।

ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল কাহির বলেন, সকালে (বৃহস্পতিবার) শিশুর মা-বাবা তাকে নিয়ে এসেছিল। যেভাবে শিশুটির শরীরে ঝলসে গেছে, তা খুবই দুঃখজনক। ঘাড়ের চামড়া উঠে শিশুটি খুব কষ্ট পাচ্ছে। ঘটনাটি অমানবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্কুল-মাদ্রাসায় শিশুদের নির্যাতন করতে সরকারের নিষেধজ্ঞা রয়েছে।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন আলী বলেন, শিশু নির্যাতনের বিষয় নিয়ে কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। যদি অভিযোগ আসে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত