নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:২০

সিলেটে মামলা হামলা করে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জমি দখলের পায়তারা

সিলেটের ক্যাথলিক ডায়োসিসের বিদ্যালয়ের জমি দখলের জন্য গত বৃহস্পতিবার রাতে আবার পাহারাদারদের উপর আক্রমণের চেষ্টা চালিয়েছে দখলদার চক্র। কিন্তু পুলিশের টহল থাকায় তারা কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারিনি।

সদর উপজেলার পরগনাবাজার এলাকার খুনিরচক এলাকার সিলেটের ক্যাথলিক ডায়োসিসের বিদ্যালয়ের এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা খারিজ করে দিলেও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল জোরপুর্বক জমি দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে আতংকে ও ভয়ের মাঝে জীবনযাপন করছেন ডায়োসিয়েসের সংখ্যালঘু মানুষজন।

এই জমিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে লাগানো প্রায় ৫০ টি গাছ সম্প্রতি কেটে নষ্ট করে ফেলে দখলদার চক্র এছাড়া ২৫ লক্ষ টাকাও দাবি করে তারা।

আলোচিত জায়গার পাহারাদার আলাউদ্দিন ও মামুন আহমেদ জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে যখন বিদ্যুৎ চলে যায় ঠিক তখনি ২/৩ জন দুর্বৃত্ত চাপাতি নিয়ে আমাদের বাসস্থানের কাছে অবস্থান নেয়। তখন এসময় আমরা চিৎকার করলে দুর্বৃত্তরা দুটি চাপাতি ফেলে পালিয়ে যায় ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক রিপটন পুরকায়স্থ জানান, তৎক্ষনিকভাবে পুলিশের লোকজন স্থানটি পরিদর্শন করে এবং চাপাতিগুলো উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

অন্যদিকে শুক্রবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন দলে ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফাদার যোসেফ গমেজ ওএমআই, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল করিম চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকাল স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক শাকিল প্রমূখ।

পরিদর্শন শেষে বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাথে ৫০টি গাছও নষ্ট করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির এই সুযোগে এ কাজ করা হয়েছে। এখানে বিদ্যালয় হবে। শিক্ষার্থীরা পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষার শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যৎ জীবনে তার প্রয়োগ করবে। কিন্তু কিছু দুস্কৃতিকারী পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে লাগানো প্রায় ৫০ টি গাছ নষ্ট করেছে, তাহলে বিষয়টি শুধু পরিবেশবাদী নয়, সাধারণ মানুষজনের জন্য দুঃখজনক। করোনাকালের নির্জন স্থানে গাছ নষ্ট করার পেছনে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফাদার যোসেফ গমেজ ওএমআই বলেন, বিশপের বাসভবন এবং অফিস সংলগ্ন একটি স্কুল, ক্লিনিক এবং অন্যান্য সেবামুলক কাঠামো তৈরি করতে ২০১৩-২০১৫ অর্থবছরে মোট ২.৪৫ একর জমি কেনা হয়েছিল। ক্রয়ের পরে কোন ঝামেলা না হলেও ২০১৭ সাল থেকে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের সহায়তায় একদল জমি ভূমিদস্যু এই জমিতে নজর রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তিনি জানান, উপায় না পেয়ে গত সোমবার সিলেট ক্যাথলিক ডায়োসিসের অফিস ইনচার্জ ফাদার সরোজ কস্তা, শাহপরান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন যেখানে ১৯ জনের নাম প্রকাশ করেন এবং বেশ কয়েকজন নামবিহীন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার প্রথম আসামী মো: ইছরাক আলী জানান, এই জমিটি হলো আমাদের মৌরসী সম্পদ। কাগজপত্র আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন। যদিও পরে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন আর রিসিভ করেন নি।আজ কয়েকবার ফোন দিলেও ফোনটি বন্দ পাওয়া যায়।

সিলেট ক্যাথলিক ডায়োসিসের প্রধান বিশপ বিজয় এন ডি ক্রুস বলেন, বিদ্যালয়ের নামে ২.৪৫ একর জমি সিলেট ক্যাথলিক ডায়োসিসের নামে কেনা হয়েছে। ২০১৭ থেকেই আমাদের উপর মামলা করে। মামলাতেও হেরে যায়। তারপরে থেকেই আমাদের উপর ভয়ভীতি সৃষ্টি করে এবং শেষে গিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর তারা সেখানে জোড়পুর্বক সাইনবোর্ড টাংগাতে চায়। পরে দুস্কৃতিকারীরা পিলার দিতে চায়। না পেরে তারা চারা গাছ উপরিয়ে নষ্ট করে। পুলিশ থাকা সত্বেও শেষ পযন্ত দুস্কৃতিকারীরা গতকাল রাতে আমাদের পাহারাদারদের উপর চাপাতি দিয়ে আক্রমন করার চেষ্টা করে।চতুর্থবারের মতো আমরা হামলার স্বীকার হলাম। এখন আমরা আতংকে আছি।আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা দাবী করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত