বানিয়াচং প্রতিনিধি

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৫:০৮

বানিয়াচংয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানা তৈরি করে কৃষকলীগ সভাপতির খাস জমি দখল!

বানিয়াচং উপজেলার ১১নং মক্রম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজা ১৪ একর খাস ভূমি দখল করে রেখেছেন। এই খাস ভূমিতে বেশ কিছু দিন পূর্বে প্রশাসনের পক্ষ  থেকে লাল নিশানা দিয়ে চিহ্নিত করার পরও আজ পর্যন্ত সেখানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। মাদ্রাসা-এতিমখানা নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের খাস ভূমি দখল করে রেখেছেন  জেলা কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজা।

জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত সুলতানপুর মৌজার এসএ জেএল নং-২০০ আরএস জেএল নং-২০৫, খতিয়ান নং-১ এর দাগ নং ৯১, ৯৩ ও ১৩৩ এর মোট ১৪ একর ৪৫ শতক ভূমি বিগত ১৯৮৮ সনে এলাকার ভূমিহীনদের নামে লিজ প্রদান করে বানিয়াচং উপজেলা ভূমি অফিস। কিন্তু লিজ দেয়ার পর এ ভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করে পতিত ফেলে রাখেন ভূমিহীনরা। পরে ২০১০ সালে এলাকাবাসী ও ভূমিহীনদের মধ্যে এই ভূমি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে শফিক মেম্বার নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। ঘটনায় আসামি করা হয় এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজাকেও।

হত্যার ঘটনার বিষয়টি পরবর্তীতে সমাধান হলে এলাকার নিরীহ ভূমিহীনদের নানা প্রলোভন, ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছে পুরো ভূমিসহ কাগজপত্র নিয়ে নেন জেলা কৃষকলীগ সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজা।

সরেজমিনে ওই ভূমিতে গিয়ে দেখা যায়,হুমায়ুন কবীর রেজার ছোট ভাই মরহুম সামায়ুন কবীরের নামে “সামায়ুন কবীর হাফিজিয়া মাদ্রাসা” নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি ওই মাদ্রাসার জন্য আরেকটি নতুন ভবন গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করেছেন তিনি। অন্যদিকে পুকুরের দক্ষিণ অংশে মাছ চাষ ও পুকুরের পাড়ে রোপন করা নানা জাতের গাছ বিক্রি করে হুমায়ুন কবীর রেজা হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। আংশিক জায়গায় মাদ্রাসা নির্মাণ করে পুরো ১৪একর জায়গা দখল করে রেখেছন জেলা কৃষকলীগ সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজা। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমানা চিহ্নিত করার লাল নিশানা উপড়ে ফেলে দিয়েছেন হুমায়ুন কবীর রেজা।

বিজ্ঞাপন



সরকারের এ খাস ভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা কৃষকলীগ নেতার বিভিন্ন স্থাপনা পরবর্তীতে উচ্ছেদ করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা। পাশাপাশি এই ভূমি এখন থেকে সকল ধরণের কার্যক্রম বন্ধেরও নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। তবে অদ্যবধি কোনো ধরণের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, সরকারি খাস ভূমি দখল প্রসঙ্গে গত বছরের ২৫ নভেম্বর মক্রমপুর ইউনিয়নের কচুয়ার আব্দা গ্রামবাসীর পক্ষে জ্যোতির্ময় দাস নামে এক ব্যক্তি ভূমি মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর বরাবরে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও মক্রমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রেজার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্তকরে রেকর্ড পত্রাদি আলোকে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ডেপুটি কালেক্টর রেভিনিউ (হবিগঞ্জ) ইয়াছিন আরাফাত রানা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে পত্রাদি প্রেরণ করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সেবাস্টিন রেমা। এরই প্রেক্ষিতে গত ২১ জানুয়ারি তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানার উপস্থিতিতে দখলকৃত ভূমি উদ্ধার করে ৫ টি দাগে মোট ১৮.৪৩ একর জায়গায় লাল নিশান দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জেলা কৃষকলীগ সভাপতি ও বানিয়াচং ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রেজার সাথে। তিনি জানান, এই ভূমি এখনো ভূমিহীনদের নামেই আছে। এলাকাবাসী হিসেবে আমি শুধু জনস্বার্থে এতিমখানা ও মাদ্রাসা করে দিয়েছি। সরকারের কোনো ভূমি আমি দখল করে রাখিনি। আমি এসব দেখাশুনা করি।

এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইফফতা আরা জামান ঊর্মি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, এটা নিয়ে আদালতে মামলা আছে। আমরা বিষয়টা জেলা প্রশাসককে চিঠির মাধ্যমে জবাব পাঠিয়েছি। উপর মহল থেকে যদি নির্দেশনা না আসে তাহলে এই ভূমিতে পরবর্তীতে কোনো ধরণের কার্যক্রম চালাতে পারছি না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত