নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০২:০৮

প্রশ্রয়দাতারা ধরা পড়বে কি?

এমসি কলেজে ধর্ষণ

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার এজাহারভূক্ত সব আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজাহারে নাম না থাকলেও জড়িতসন্দেহে আরও দুজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। দ্রুতসময় সময়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলার সব আসামিদের গ্রেপ্তার করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব অপরাধীদের প্রশ্রয়দাতাদের খুঁজে বের করে ধরতে না পারলে অপরাধ বন্ধ হবে না বলেও মনে করেন তারা।

গত শুক্রবার এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায়ও উঠে এসেছে ছাত্রলীগের নাম। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সকলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তবে এবার ছাত্রলীগের এই ক্যাডারদের প্রশ্রয়দাতা কারা তাদের খোঁজে বের করার দাবি ওঠেছে জোরেশোরে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জোর্তিময় সরকার সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, আমাদের প্রথম টার্গেট ছিলো এজাহারভূক্ত সব আসামিদের গ্রেপ্তার করা। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আমরা এতে সফল হয়েছি। এখন মামলার তদন্তে এই অপরাধীদের প্রশ্রয়দাতা হিসেবে কারো নাম উঠে আসলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিলেট নগরের একটি আতঙ্কজাগানিয়া এলাকার নাম টিলাগড়। সিলেট এমসি কলেজ, সরকারি কলেজ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মতো বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান এই এলাকায়। নগরের যে এলাকাটি শিক্ষা অঞ্চল হওয়ার কথা সেটি হয়ে ওঠেছে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য।  একের পর এক অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটে চলছে এই এলাকায়। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডও ঘটেছে এখানে। বিভিন্ন ঘটনার পর জড়িত কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও আড়ালেই থেকে যান এই অপরাধীদের প্রশ্রয়াদাতারা। ছাত্রলীগের এ্ই সন্ত্রাসীদের কারা মদদ দেন তাদের খোঁজে বের করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা আওয়ামী লীগেরের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে দিন দিন আরও বেপেরোয়া হয়ে ওঠেছে অপরাধীরা।

বিজ্ঞাপন



শুক্রবার সন্ধ্যায় ছাত্রাবাসের ভেতরে স্বামীকে বেঁধে রেখে ধর্ষণ করা হয় ওই তরুণীকে। ধর্ষণের খবর পেয়ে ছাত্রাবাসে হাজির হয়ে সরকারদলীয় কয়েকজন নেতা বিষয়টি সমঝোতার মাধ্যমে শেষ করার চেষ্টা চালান বলে অভিযোগ ওঠেছে।

সে রাতে নির্যাতিত দম্পতির সহায়তায় প্রথম এগিয়ে আসেন টিলাগড় এলাকার বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিহিরগুহ চৌধুরী (বাবলা চৌধুরী)।

সমঝোতার চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই রাতে পুলিশ আসার আগেই মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ মিঠু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জাহাঙ্গির আলম ছাত্রাবাসে হাজির হন। তারা প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা চালান।

বাবলা চৌধুরী বলেন, পুলিশের আগেই তারা (মিঠু ও জাহাঙ্গির) কিভাবে এ ঘটনার খবর পেলেন? নিশ্চয়ই অপরাধীরা তাদের জানিয়েছে। অপরাধীরা তাদের অনুসারী না হলে তাদেরকে জানাবে কেনো?

এ ব্যাপারে আলাপ করতে দেবাংশু দাশ মিঠুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা কলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আর জাহাঙ্গির আলম এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে আমার দলেরই কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে।

ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তদের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে জাহাঙ্গির আলম বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি আমিও জানাচ্ছি।

অভিযুক্তদের প্রশ্রয়দাতা হিসেবে আলোচনায় এসেছে ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল ইসলামের নামও। নাজমুল জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সদস্য। তিনি আগামী কমিটির সভাপতি প্রার্থী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্তরা আত্মগোপনে যাওয়ার পরও একাধিকবার নাজমুলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে।

বিজ্ঞাপন



তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে নাজমুল হোসেন বলেন, অভিযুক্তদের আমি চিনি। তবে এমন ঘটনা যারাই ঘটাক আমি তাদের শাস্তি চাই। তাদের প্রশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।


প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ ঘটনায় তরুণীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।

এই মামলার এজাহারভূক্ত আসামি তারেকুল ইসলাম তারেককে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরআগে সোমবার রাত ১১ টায় জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর থেকে এই মামলার আসামি মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। এরআগে রোববার সকালে ছাতক থেকে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও মাধবুপর থেকে অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোবার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

একই রাতে হবিগঞ্জ সদর থেকে মামলার এজাহারভূক্ত আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ওই রাতেই সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে  মো. আইনুল ও মো. রাজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৯। এজাহারে নাম না থাকলেও এই ঘটনার পর থেকে আইনুল ও রাজনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আসামিরাও এ ঘটনায় আইনুল ও রাজন জড়িত বলে জানিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাইফুর, অর্জুন, রবিউল, রণি, আইনুল ও রাজনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত