মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২২:২৮

পরিবহন শ্রমিকদের চাঁদার প্রায় দুই কোটি টাকা দুই নেতার পকেটে!

মৌলভীবাজার জেলা অটো টেম্পু, অটোরিকশা, মিশুক ও সিএনজি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ।

মৌলভীবাজার জেলা অটো টেম্পু, অটোরিকশা, মিশুক ও সিএনজি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি. নং- চট্ট-২৩৫৯) সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিমের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের থেকে চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে উঠছে। টাকা আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে এই দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সিলেট শ্রম আদালতে।

বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপ পরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলার বিষয় নিশ্চিত করে তিনি জানান, ২১ সেপ্টেম্বর মামলা দায়ের করেছি। মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলার ১৭ হাজার পরিবহন শ্রমিকের থেকে নেওয়া চাঁদার টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, শ্রমিক ইউনিয়নের ২০১৮ সালের বার্ষিক রিটার্ন দাখিলের জন্য ২০১৯ সালের ২ জুলাই একটি পত্র দেয় বিভাগীয় শ্রম দপ্তর। পত্র পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বার্ষিক রিটার্ন শ্রম দপ্তরে দাখিল করতে বলা হয়। পরে একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত প্যাডে ২০১৮ সালের রিটার্ন দাখিল করেন। দাখিলকৃত ২০১৮ সালের আয় ব্যয়ের হিসেব যাচাইয়ের জন্য ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্রসহ শ্রম দপ্তরে উপস্থিত হওয়ার জন্য ডাকা হয়। পরে আবারও ২ ডিসেম্বর দপ্তরের আরেকটি স্মারকে অভিযুক্তদের উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হলে অভিযুক্তরা উপস্থিত হননি। পরে ২০১৮ সালের দাখিলকৃত বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব যাচাইয়ে সরেজমিন তদন্তের জন্য দপ্তরের দুই জন সহকারী পরিচালক মো. সোহেল আজিম ও ইউসুফ আহমদ চৌধুরী চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী সরজমিনে সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিমের উপস্থিতিতে মাঠ পর্যয়ায়ে তদন্ত করেন। এরপর ১৪ জানুয়ারি তারা প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই তদন্তে হিসেবের গড়মিল পাওয়া যায়। ২০১৮ সালে আয় দেখানো হয় ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৫০ টাকা এবং ব্যয় দেখানো হয় ৫১ লাখ ২০ হাজার ১৫০ টাকা। তদন্তকালে আয় এবং খরচের পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ তারা (অভিযুক্তরা) হাজির করতে পারেনি যা তদন্তে উঠে আসে।

বিজ্ঞাপন

তদন্তকালে কমটি মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় কম-বেশী ৯০টি সড়কে কমিটির মাধ্যমে ইউনিয়নের ১৭ হাজার সদস্যের কাছ থেকে প্রতিদিন রশিদ বহির মাধ্যমে ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয় বলে জানতে পারে। আদায়কৃত ২০ টাকা হতে ইউনিয়নের জেলা কমিটি ৩ টাকা পায়। সে অনুযায়ী প্রতিদিন জেলা কমিটির আয় প্রায় ৫১ হাজার টাকা এবং বছরে ১ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ইউনিয়নের দাখিলকৃত ২০১৮ সালের রিটার্নে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ প্রদর্শন করা হয়নি। যা অর্থ আত্মসাৎ এর অসৎ উদ্দেশ্যে বলে মনে করে তদন্ত কমিটি।

এছাড়া ইউনিয়নের দাখিলকৃত রিটার্নে সদস্য চাঁদা হতে বছরে ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৫০ টাকা আয় হয়েছে উল্লেখ করা হলেও উক্ত টাকা ব্যয়ের উপযুক্ত কোন ভাউচারাদি প্রদর্শন করা হয়নি। ব্যয়ের স্বপক্ষে কোনো রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ করা হয় নাই। ১৭ সদস্য কমিটি কাগজে কলমে থাকলেও ২০১৮ সালের রিটার্নে শুধুমাত্র ইউনিয়নের সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম স্বাক্ষরিত।

তদন্তকালে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যতীত কার্যকরী কমিটির অন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। কমিটি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় বলে প্রতিয়মান। ফলে ইউনিয়নের আর্থিক অনিয়মের সকল দায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপরই বর্তায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগের ব্যাপারে সভাপতি পাবেল মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কল না ধরায় এই বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিমের বলেন, ‘যিনি মামলার বাদী তার মামলা করার কোনো এখতিয়ার নেই। তিনি প্রভাবশালীদের চাপে এ মামলা করেছেন বলে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকের কোনো অভিযোগ নাই। সব শ্রমিক আমাদের সাথে আছেন।’

বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপ পরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম জানান, টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আমরা মামলা করেছি। আমি বর্তমানে অসুস্থ। পরে বিস্তারিত আলাপ করব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত