মোসাইদ আহমেদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

১৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:১৬

নদী ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রাম অচিন্তপুর

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার একটি গ্রাম অচিন্তপুর, কাগজে কলমে অচিন্তপুর হলেও মানুষের কাছে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধার গ্রাম হিসেবেই। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় সুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ হওয়া ব্যক্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনের জন্মস্থানও সেখানেই। একে একে এ গ্রাম থেকে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে গেলেও বর্তমানে নদী ভাঙনের ফলে গ্রামটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। সুরমা নদী তীরবর্তী গ্রাম হওয়ার নদী ভাঙনের ফলে প্রতিনিয়ত তাদের দিন কাটছে আতঙ্কে।

সরজমিনে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা গৌরারং ইউনিয়নের অচিন্তপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নদী ভাঙনের ফলে ভেঙে গিয়েছে অনেক বাড়িঘর। কয়েকটি ঘরবাড়ি নদীর তীরে এখনো থাকলেও সেগুলোও ফাটল ধরে গিয়েছে। যেকোন সময় সেই জায়গাটুকুও চলে যাবে নদী গর্ভে।

গ্রামবাসীর সাথে কথা হলে তারা জানান, ২০০২ সাল থেকে নদী ভাঙনমাত্রা বাড়লেও নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। গ্রামটিতে ১ হাজার পরিবারের বসবাস হলেও প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনমাত্রা বেড়ে যাওয়া হুমকির মুখে রয়েছে গ্রামটির একমাত্র যাতায়াতের সড়কটিও। ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নদী গর্ভে গিয়েছে ৭ একর ভূমি। সেই সাথে গিয়েছে অনেকের বসতি। কেউ কেউ নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে চলে গিয়েছেন অন্যত্র আবার কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন নদীর পাশেই কোন স্থানে।

তবে নদী ভাঙন থেমে যায়নি গেল এক সপ্তাহেও মধ্যে নতুন করে আরও ৬টি ঘর তলিয়ে গিয়েছে পানির নিচে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকার থেকে কোন রকমের সহযোগিতা না করা হলেও সকলের দাবি নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান। যার জন্য গ্রামবাসীরা মিলে মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ প্রশাসনের কর্তাদের জানালে তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্থ করেছেন অনেকবার।

নদীগর্ভে বসতভিটা হারানো সুরজা মিয়া বলেন, কয়েকদিন আগেই আমার ঘরবাড়ি সব নিয়া নিছে। এখন যেখানে আশ্রয় নিছি এইটাও দুইদিন পর ভাঙিয়া যাইবো। বউ সন্তান নিয়া আমরা কই যাইমু জানি না। অনেক কষ্ট করি একটা ঘর বানাইসলাম ঘরটা আজকে নাই।

অচিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মুক্তাদুল হক মুহিত বলেন, আমার ভাইয়ের ঘর নদী ভাঙনের ফলে তলিয়ে গিয়েছে। সে এখন আমার বাসাই থাকে। দুইদিন আগে আমার ঘরেরও মেঝেও ফেটে গিয়েছে যেকোন সময় আমার ঘরটিও পানির নিচে তলিয়ে যাবে। আমি ছোট দোকানদার ঘরবাড়ি এরকম নিলে আমরা যাইমু কই খাইমু কি।

কয়েকদিন আগে নিজের কষ্টের তৈরি ঘর পানি নিচে তলিয়ে গিয়েছে জিয়াউল হকের। পেশায় অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে চললেও ঘর পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় এখন আশ্রয় নিয়েছেন ভাইয়ের বাড়িতে। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, রাতে বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ পানিতে কিছু পড়তেছে এমন শব্দে ঘুম ভাঙলে উঠে দেখেন তার ঘরে অধিকাংশ জায়গা ভেঙে সুরমা নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। সেই সময় বউ বাচ্চা জীবন বাঁচলেও চলে গিয়েছে নিজের স্বপ্নে সাজানো ঘরটি।

অচিন্তপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, অচিন্তপুর গ্রামটি নদীর পাড়ে এই নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন চূড়ান্ত সীমায় চলে গিয়েছে। ঘরবাড়ি সব কিছু নদী নিয়া নিছে এখন আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন আমাদের গ্রামটি রক্ষায় দ্রুত নদী ভাঙন রোধে একটি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তা না হলে একটু একটু করে অচিন্তপুর গ্রামটি হারিয়ে যাবে নদীর গর্ভে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সহ-সভাপতি ও অচিন্তপুরের বাসিন্দা আজিজুল হক আজিম বলেন, অচিন্তপুর গ্রামটি অনেক বড় ছিল কিন্তু নদী ভাঙনের ফলে গ্রামটি ভাঙতে ভাঙতে এখন সরকারি রাস্তায় এসে পড়েছে। নদীতে অনেকের ঘরবাড়ি তলিয়ে গিয়েছে সাথে নিয়ে গেছে অনেকের স্বপ্ন। আমরা প্রশাসন ও সরকারের কাছে অবেদন অচিন্তপুর গ্রামটি রক্ষায় নদী ভাঙন থেকে বাঁচাতে অন্তত বøক দিয়ে আমাদের রক্ষা করা হয়।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন, অচিন্তপুর গ্রামে আমি গিয়েছি এবং সেই গ্রামের নদী ভাঙনের ফলে ঘরবাড়ি হারানো পরিবারকে নতুন ঘর দেওয়া হবে এবং নদী ভাঙন রোধে কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমি তাদের বিষয়টির জানিয়েছি।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, সদর উপজেলার অচিন্তপুর গ্রামটির বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি এবং গ্রামটি রক্ষায় নদী ভাঙন রোধে আমরা একটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি সেখান থেকে অনুমোদন আসলে আমরা নদী ভাঙন রোধে কাজ শুরু করতে পারবো।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত