নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:৩২

জনতার কাছে ‘স্বীকারোক্তি’, আদালতে চুপ আকবর

রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ

গত ৯ নভেম্বর আটক হয়েছিলেন পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদকে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বহিস্কৃত উপ পরদির্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূইয়া। তাকে আটকের কিছু ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়েছিলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।

এসব ভিডিওতে দেখা গিয়েছিলো আটকের পর আকবরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন কয়েকজন যুবক।  সেখানে রায়হানকে হত্যা সম্পর্কিত তাদের একটি প্রশ্নের জবাবে আকবরকে বলতে শোনা যায়- ‘আমি খুনি না, আমি ইচ্ছা করে আমি একা মারিনি। ইচ্ছা করে একা মারিনি। মাইর দিছিল পাঁচ ছয় জন। এ জন্য মরে গেছে ভাই।’

জনতার কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিলেও রিমান্ড শেষে আদালতে এসে স্বীকারোক্তি দিতে রাজী হননি আকবর হোসেন ভূইয়া।

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) আকবরের রিমান্ড শেষ হওয়ায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা পুণরায় তার রিমান্ড না চওয়ায় আদালত আকবরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনে আকবর আবার রিমান্ডে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এরআগে এই ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য এএসআই আশেক এলাহি, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস এবং হারুনুর রশীদকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ড নেয় পিবিআই। তবে রিমান্ড শেষে তারাও আদালতে স্বীকারোক্তিমলক জবানবন্দি দেননি।

রায়হানের মা সালমা বেগম অবশ্য প্রথম থেকেই পিবিআই’র তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। তার দাবি, পিবিআই পুলিশেরই একটি সংস্থা। তাদের দ্বারা পুলিশের অভিযেঙাগে সুষ্ট তদন্ত সম্ভব নয়। এজন্য এই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে আসছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন



৯ নভেম্বর আকবরকে গ্রেপ্তারের পর সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, আকবর হোসেনকে ৯ নভেম্বর কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী ডোনা এলাকা থেকে জেলা পুলিশের একটি দল গ্রেপ্তার করে। ভারতে পালানোর সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।

তবে সীমান্তবর্তী এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আকবরকে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের ওপারে খাসিয়া পল্লির বাসিন্দারা আটক করে বাংলাদেশে পাঠালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

পরদিন ১০ নভেম্বর আকবরকে আদালতের মাধ্যমে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হয়।

নগরীর আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর রাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরের দিন ১১ অক্টোবর সকালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে নির্যাতনের সত্যতা পায়। এই ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞাসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর আকবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দেন।

অপরদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় মামলাটির তদন্ত পিবিআইয়ের ওপর ন্যস্ত হলে ১৯ অক্টোবর ফাঁড়ির তিন কনস্টেবল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের বর্ণনা ও নির্যাতনকরীদের নাম বলেন। রায়হানকে নির্যাতনের মূল হোতা হিসেবে উপপরিদর্শক (এসআই) আকবরের নাম বলেন তারা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত