শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

০২ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৮:৫২

এতোবড় শহরে ঋষিদের বসার কোনো জায়গা নেই

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চৌমুহনা সংলগ্ন এলাকার ড্রেনের উপরে বসে কাজ করা দলিত সম্প্রদায়ের ঋষি (মুচি)দের উচ্ছেদ করেছে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা। গত মঙ্গলবার সকালে এদের উচ্ছেদ করা হয়। এতে করে দীর্ঘদিন থেকে এই জায়গায় কাজ করে যাওয়া ঋষিরা (মুচি) বেকায়দায় পড়েছেন।

জুতা সেলাই করার সরঞ্চাম নিয়ে কাজ করতে না পারায় বুধবার দুপুরে চৌমুহনা এলাকায় অবস্থান কর্মসূচী করে তারা।

দলিত সম্প্রদায়ের নগর ঋষি বলেন, এখানে আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে জুতা সেলাইয়ের কাজ করছি। আমাদের বাপ দাদাও এখানে বসে জুতা সেলাই করেছেন। এখন হঠাৎ করে পৌরসভার লোকজন আমাদের এখান থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। আমরা রাস্তার পাশের ঢাকনা বিহীন ড্রেনের উপরে কাঠ দিয়ে মাচা করে বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করি। এখানে আমাদের জন্য রাস্তায় চলাচলে কিংবা যানজট লাগছে না। আমাদের এভাবে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করার ফলে আমরা দুই দিন ধরে কাজ না করে আছি। আমরা এখন কোথা বসে কাজ করবো বুঝতে পারছি না।

বুধবার শ্রীমঙ্গল শহরের স্টেশন সড়ক, মৌলভীবাজার সড়ক, হবিগঞ্জ সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে পুরো শহরের ফুতপাত দখল হয়ে আছে ভ্রাম্যমান বিক্রেতা ও বিভিন্ন দোকানদের মালামাল দিয়ে। এ কারনে শহরের আসা লোকজন হাটাচলা করতে পারেন না। এসব দোকানপাট কয়েকবার উচ্ছেদ করেছিলো পৌরসভা। তবে উচ্ছেদের কয়েকদিন পরই আবার তা দকল হয়ে যায়।

মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক এসকে দাশ সুমন বলেন, ঋষি বা দলিত যাই বলি না কেন এরা এমনিতেই বৈষম্যের শিকার। তারা তাদের মৌলিক অধিকারের অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। তারা ভালো কোন জায়গায় চাকরিও পায় না। পুরো শহরেই তো ফুতপাত দখল করে অবৈধ ব্যবসা হচ্ছে। পৌরসভা এসব বিষয় না দেখে শুধুমাত্র তাদেরই কেন উচ্ছেদ করলো সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। যদি তাদের এই জায়গা থেকে উচ্ছেদই করার হয় তাহলে তাদের নতুন জায়গায় বসিয়ে তা করা হোক। না হলে এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে বলে আমরা মনে করি।

শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসিন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, চৌমুহনা এলাকাটিতে ঋষিদের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। লোকজন গাড়ি থামিয়ে এখানে জুতা সেলাই করান। তারা এখানে অবৈধভাবে বসে ছিলো। আমরা তাই উচ্ছেদ করছি। পুরো শহরেই আমাদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে উচ্ছেদ করার পর তারা আবার বসে যায়। আমাদের লোকবল কম থাকায় নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান করা সম্ভব হয় না।

ঋষি সম্প্রদায়ের পূর্নবাসনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তারা তো এখানে ছিলোই অবৈধভাবে, এখানে তো তাদের বসার কথাই নেই।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজন আমার কাছে এসেছিলো। বিষয়টি পৌরসভার দায়িত্ব। তবে এটি বলবো পৌরসভা যদি এই জায়গা থেকে এদের উচ্ছেদই করে তাহলে তাদেরকে নতুন একটি জায়গা দিক। এই দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনকে এভাবে উচ্ছেদ করা ঠিক হবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত