জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ

১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:৪৯

উৎসবের নাম ‘পলো বাওয়া’

প্রায় ৩শ’ বছর ধরে মাঘ মাসের প্রথম দিনে পলো বাওয়া হয় আমাদের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের বড়-বিলে। প্রায় ৩৫বছর ধরে আমি এই বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরছি। বিলে নেমে এবার মাছ ধরতে না পারলেও পাড়ে দাঁড়িয়ে সেকালের আনন্দ উপভোগ করছি।

-এমনটি বলেন, বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ৮০ বছর বয়সী প্রবীণ আব্দুল তাহিদ। এসময় পলো বাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি হারিয়ে যান স্মৃতিতে। তিনি বলেন, ১৯৭৪-৭৫ সালের দিকে অনেক বড় বড় বোয়াল মাছ ধরা পড়তো, তখন কি আনন্দই না হতো। কিন্তু এখন আর সেই মাছ নেই।

তবে বড় মাছ থাকুক বা না থাকুক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এখনও পলো বাওয়া উৎসব পালন করে আসছেন সিলেটের বিশ্বনাথের গোয়াহরি গ্রামবাসী। তবে এবছর পহেলা মাঘ শুক্রবার হওয়ায় শনিবার (২ মাঘ) ‘বড়-বিলে’ হয়ে গেলো ‘পলো বাওয়া’ উৎসব।

সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ঘন্টা বিলে মাছ ধরায় মেতেছিলেন গ্রামের নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়োসহ সকলেই। বাদ পড়েননি গ্রামের প্রবাসীরাও। আহা কী আনন্দ! দলবেঁধে সকলের অংশগ্রহণে ওই মাছ ধরা উৎসব জানিয়ে দিয়েছেন বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ‘পলো বাওয়া’ উৎসব আজো হারিয়ে যায়নি।

তবে করোনা মহামারীর কারণে এ বছর অধিকাংশ (যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্য) প্রবাসীরা দেশে ফিরেননি। অংশ নিতে পারেন নি ঐতিহ্যের পলো বাওয়ায়।

যদিও ‘পলো বাইছ’ কিন্তু পলো ছাড়াও, ঠেলা জাল, হাতা জাল, উড়াল-জাল ইত্যাদি নিয়ে মাছ ধরায় মেতেছিলেন গ্রামবাসী। বোয়াল, ষোল, কার্ফু, ঘাসকার্পসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ধরে হাঁস মুখে বাড়ি ফিরেছেন গোলাম গোসেন (৪৩), কাওসার আহমদ (২২), রাখন মিয়া (২০), জুয়েল আহমদ (২৫), আপ্তাব উদ্দিন জুয়েল (৩২), ইকবাল হোসেন (৪২), আরশ আলীসহ (৬০) আরও অনেকে।

বিলের পাড়ে কথা হলে গোয়াহরি গ্রামের প্রবীণ মুরব্বী ষাটোর্ধ আলকাছ আলী ও আরশ আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রায় ৩৫বছর ধরে তারা এই বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরে আসছেন। বিলে নেমে এবারও তারা মাছ ধরেছেন। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার মাছের সংখ্যা কম। বোয়াল মাছ কেউ কেউ ধরলেও আগেকারদিনের মতো বড়বড় বোয়াল কিংবা আইড় মাছ কেউ ধরতে তারা দেখেননি।

গ্রামের ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন ও অ্যধক্ষ হাসমত উল্লাহ বলেন, প্রায় ৩’শ বছর ধরে এ বিলে পহেলা মাঘ তারিখে ‘পলো বাওয়া’ হয়ে থাকে। ঐতিহ্যের রেওয়াজ হিসেবে বংশ পরমপরায় একই তারিখে এ উৎসব পালন করা হয়। প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর গ্রামবাসীর উদ্যোগে বিলটি খননও করা হয়। কারো মৃত্যু, প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা মাঘ মাসের পহেলা তারিখে শুক্রবার হলে কেবল তারিখ পরিবর্তন করা হয়ে থাকে বলেও জানান তারা।

বিলের পাড়ে হাজেরা বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পলো দিয়ে মাছ ধরা দেখা তার শখ। তাই পলো বাওয়া উৎসব উপভোগ করতেই কেবল তিনি ঢাকা থেকে গোয়াহরি গ্রামে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত