হৃদয় শুভ

২২ জানুয়ারি, ২০২১ ১৬:৩৪

চায়ের উৎপাদন কমেছে প্রায় ৯৭ লাখ কেজি

২০১৯ সালে চায়ের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয়। উৎপাদন হয় ৯৬ দশমিক ০৭ মিলিয়ন কেজি বা ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি। তবে এর পরের বছরেই (২০২০ সালে) এসে কমে গেছে চা উৎপাদন। উৎপাদন কমেছে ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার কেজি। ২০২০ সালে দেশো চা উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার কেজি।

তবে ২০২০ সালে লক্ষ্যমাত্রাও ছিলো কম। গত বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি। ফলে উৎপাদন কমলেও লক্ষ্যামাত্রা পূর্ণ হয়েছে।

চা বোর্ড জানায়, গত বছর দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সাত কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি। প্রথম পাঁচ মাসে (মে পর্যন্ত) চা উৎপাদন ব্যাহত হয় আবওয়ার কারণে। করোনার জন্য চা উৎপাদনে শংকা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সব বাগান চালু রাখতে পারার চা উৎপাদন অব্যহত ছিল। তাই লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশী চা উৎপাদন হয়ে মোট উতপাদন ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার কেজি।

গত বছরে উৎপাদিত চায়ের মধ্যে জানুয়ারী মাসে ১ লাখ ৭৫ হাজার কেজি, ফেব্রুয়ারিতে ২৬ হাজার কেজি, মার্চে ১৬ লাখ ২৫ হাজার কেজি, এপ্রিলে ২৩ লাখ ৬৫ হাজার কেজি, মে তে ৮৬ লাখ ৫৫ হাজার কেজি, জুনে ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার কেজি, জুলাইয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার কেজি, আগস্টে ১ কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার কেজি, সেপ্টেম্বরে ১ কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার, অক্টোবরে ১ কোটি ১৪ লাখ ৬৮ হাজার , নভেম্বরে ১ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ও ডিসেম্বরে ৬৯ লাখ ৬১ হাজার কেজি চা উতপন্ন হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রথম পাচ মাসে চা উৎপাদন কম ছিল তাই কমেছে চায়ের উতপাদন। কারণ হিসেবে বলছেন আবওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যহত হয়।

কুলাউড়ার গাজীপুর চা বাগান বাগানের উর্ধতন ব্যবস্থাপক শেখ কাজল মাহমুদ জানান, ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ এ উৎপাদন কমেছে ১২ শতাংশ। তার বাগানে ২০১৯ চা উৎপাদন হয় ১১ লাখ ৯৬ হাজার কেজি এবং ২০২০ সালে ১২ লাখ কেজি টার্গেট থাকলেও উৎপাদন হয় ১০ লাখ ৪৭ হাজার। ২০২০ এ টার্গেট পুরণ না করতে পারায় ২০২১ সালে আবারও ১২ লাখ কেজি ধরা হয়েছে।

তবে আবওয়া খারাপ হলেও বছরের মধ্যভাগ থেকে আবওয়া চা বান্ধব হওয়ায় সেই সুযোগে কোন কোন বাগান রেকর্ড উতপাদন বছর ২০১৯ থেকে ২০২০ সালে আরো বেশী উতপাদন করেছে। তাদের একটি নাহার চা বাগান।

নাহার চা বাগানের ব্যবস্থাপক পীযুষ কান্তি জানান, বালিশিরা ভ্যালিতে মোট ৩২ টি বাগান আছে তার মধ্যে আমাদের বাগানসহ ৩টি বাগান চা উতপাদনের রেকর্ড ইয়ার ২০১৯ সাল থেকেও বেশী উতপাদন করেছে। ২০১৯ সালে আমাদের বাগানে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৩৮৭ কেজি চা উতপাদন হয় কিন্তু ২০২০ সালে প্রায় ৫ হাজার কেজি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ এ উতপাদন হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার কেজি।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অক্টোবরে দিকে যে বৃষ্টি হয়েছে তা চায়ের উপকার করেছে। ২০২০ সালে চায়ের দাম এর আগের বছরের চেয়ে ভাল ছিল।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের বিপনন কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, ২০২০-২১ নিলাম বর্ষে (এপ্রিল ২০২০ থেকে জানুয়ারী ২০২১) পর্যন্ত চট্রগ্রামে ৩৪ টি নিলাম অনুষ্টিত হয়েছে এতে ১৮৮.০৮ টাকা কেজি ধরে ৭কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার কেজি বিক্রি হয়েছে  এবং শ্রীমঙ্গলে ১৫টি নিলাম অনুষ্টিত হয়েছে এতে ১৭১.৭৮ টাকা কেজি দরে ৭ লাখ ৯৫ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে।

২০১৯-২০ (এপ্রিল ২০১৯ থেকে মার্চ ২০২০) নিলাম বর্ষে চট্রগ্রাম এবং শ্রীমঙ্গলে মোট ৪৪টি নিলাম অনুষ্টিত হয় এতে ১৭৬.০৮ টাকা দরে ৯কোটি ৪৩ লক্ষ কেজি চা বিক্রি হয়।

টি প্লান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিপিটিএবি) সদস্য সচিব জহর তরফদার বলেন, ২০২০ এ শ্রীমঙ্গল নিলাম কেন্দ্রে করোনার শুরুতে গ্রাহকের উপস্থিতি খুব কম ছিল তাই নিলাম অনুষ্ঠান নিয়ে আমরা সমস্যায় ছিলাম এবং চা বিক্রিও কমেছিল, কিন্তু লকডাউন তুলে নেওয়ার পর আস্তে আস্তে গ্রাহকের হার বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে নিলামে আগের থেকে অনেক বেশি চা বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বেড়েছে বলে অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যাপকভাবে চা বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমেদ জানান, আমদানি নির্ভর চা খাত গত তিন বছর ধরে রপ্তানিমুখী হয়েছে। করোনাভাইরাসের মধ্যে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে সব বাগানে কীটনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছিল তাই করোনার সময়েও আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী চা উতপাদন করেছি। চলতি বছরে আরও বেশী উতপাদন হবে।

বছরের শুরুর দিকে আবহাওয়া খারাপ থাকলেও পরে ভালোর দিকে যায় তাই বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চা উৎপাদন বেশী হয়েছে।

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট শাখার চেয়ারম্যান জিএম শিবলি জানান, ২০২০ এ চা কম উৎপাদন হওয়ার কারণ আবওয়া ভাল ছিলনা তার উপর প্রথম দিকে করোনার কারণে আমরা চিন্তিত ছিলাম। তবে চলতি বছরের গত বছর থেকে বেশী চা উৎপাদন হবে। সে লক্ষ্যা আমরা কাজ করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত