নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ২১:০৮

‘শেখ হাসিনার কারণে আইজ জায়গার মালিক, ঘরর মালিক’

মো. শাহাব উদ্দিন (৫৫)। দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। বাজারে পান বিক্রি করে সংসার চালান। নিজের বলতে কিছুই নেই। সওজের (সড়ক ও জনপথ বিভাগ) জায়গায় জরাজীর্ণ মাটির ঘরে পরিবার নিয়ে তার বসবাস। স্ত্রী, ১ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের একজনের বয়স পাঁচ আরেক জনের নয় বছর। রোজগার করার বয়স হয়নি তাদের। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে জীবিকার দায় মেটাতে তার সংগ্রাম। তবুও অভাব-অনটন তার নিত্যসঙ্গী। এরমধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক নিয়ে সওজের জায়গায় কেটে গেছে বহু বছর।

রোজগার করে একখণ্ড ভূমি ও একটি ভালো ঘর করবেন এমন আশা করতেন সব সময়। কিন্তু পান বিক্রির আয়ে যেখানে সংসার চলে না, সেখানে জমি ও ঘর করা তো তার কাছে অসম্ভব কল্পনা। আশার আলো নেই, তাই জীর্ণ কুটিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বহুরাত কেটেছে তার।

তবে জীর্ণ বাড়ি ও উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকার দিন এখন অতীত হয়েছে শাহাব উদ্দিনের। সরকার তাকে ২ শতাংশ জমির সাথে একটি পাকা বাড়ি করে দিয়েছে। জমি-বাড়ি পেয়ে শাহাব উদ্দিনের পরিবার কষ্টের কথা ভুলেছেন। রঙিন পাকা বাড়িতে এখন তাদের স্বস্তির জীবন।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) নতুন পাকা বাড়ি বুঝে পান মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সিঅ্যান্ডবির জায়গায় বসবাস করতাম। প্রতিদিন উচ্ছদ আতঙ্কে থাকতাম। এই বুঝি ঘর ভেঙে ফেলে। অসুস্থ মানুষ আমি বাজারে পান বিক্রি করি কোনোমতে চলি। ঘর বানানোর সামর্থ্য নেই। একটা ঘর বাচ্চাইনতর লাগি বানাইমু অতা চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমারে দেখাত গিয়া এলাকার এক ভাতিজার কষ্ট লাগে। তানোর মাধ্যমে ইউএনও স্যার যে সরকারি ঘর দিরা খবর পাই। এরপর আর আমার চিন্তা করা লাগেনি। একটা টাকাও খরচ হয়নি। একটা পাকা ঘর অইছে। এখন মরি গেলেও বাচ্চাইনতরে (ছেলেদের) আর কষ্ট করা লাগত নায়। শেখ হাসিনার কারণে আইজ ঘরের মালিক, জায়গার মালিক হইছি। না হলে জীবনে তো জাগার মালিক হইতে পারলাম না অনে।’

শনিবার সকালে বড়লেখা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ ও ইউএনও শামীম আল ইমরান ৫০ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের হাতে জমির দলিলসহ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ির চাবি হস্তাস্তর করেন। এর আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের ভূমিহীন-গৃহহীনদের দুই ঘর বিশিষ্ট ৬৬ হাজার পাকা বাড়ির চাবি হস্তাস্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

বড়লেখা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান। উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তাজ উদ্দিনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি। তিনি ঢাকাস্থ বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বড়লেখার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত লায়লা নীরা।

আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এলাকায় ৫০টি ঘর নির্মাণে সরকারে ব্যয় হয়েছে ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এছাড়া পরিবার প্রতি ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে কবুলিয়ত সম্পন্ন করে দেওয়া হয়েছে। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে কাবিটা কর্মসূচির আওতায় বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন কাজ বাস্তাবায়ন করেছে।

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আব্দুল মালিক (৪৫) বলেন, ‘আমার নিজের কোনো জায়গা ছিল না। খাস জায়গায় ভাঙা একটা ঘরে থাকতাম। জীবনে ঘর তৈরি করে বসবাস করতে পারব তা কখনো ভাবিনি। সারা জীবনের চেষ্টায়ও মাথা গোজার ঠাঁই করতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঋণশোধ করা সম্ভব অইত নায়। তাইন জাগার মালিক বানাইলা, ঘরও দিলা আমরারে।’

জমির সঙ্গে নতুন ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের ফাতির আলী (৭০)। ফাতির আলী বলেন, ‘আল্লাহ ও হাছিনার (হাসিনা) উছিলায় ঘর পাইছি। শেখ হাসিনা নিজের ঘরে থাকার অধিকার দিছইন। তাই না দিলে কোনো দিন ঘর আর জমি অইল না নে। মরার সময় এখন শান্তিতে মরতে পারব।’

আরেক উপকারভোগী দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের কাশেমনগর গ্রামের বাসিন্দা রুনু বেগম (৫৫) বলেন, ‘ঘর না থাকায় অসহায় ছিলাম। ঘর তৈরি করার ক্ষমতা আমার ছিল না। শেখ হাসিনার দেওয়া ঘর পেয়ে আমি খুশি। হাসিনার জন্য দোয়া করমু যতদিন বাঁচমু।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান বলেন, ‘দুই কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ঘরের সাথে আছে রান্নাঘর, বারান্দা ও বাথরুম। সুপেয় পানির জন্য রয়েছে টিউবওয়েল।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘যারা ঘর পেয়েছেন, তারা খুব গরিব। নিজেদের জায়গা ছিল না। কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে, কেউ বা খাস ভূমিতে একটি জরাজীর্ণ ঘর তৈরি করে থাকতেন। সেখানে একটি ভালো ঘর তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। মুজিববর্ষে দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে বড়লেখায় স্থানীয় সাংসদ ও পরিবেশমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং পরামর্শে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে আমরা ঘর দিয়েছি। পাকা ঘর তৈরি ও পরিবার প্রতি ২ শতাংশ করে খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে কবুলিয়ত সম্পন্ন করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পিআইওসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন। পরিবারগুলো পাকা ঘর পেয়ে খুব খুশি। তাদের মুখের হাসি দেখে আমাদের ভালো লাগছে।’

অনুষ্ঠানে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, বড়লেখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান, বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এপিপি গোপল দত্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফ, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন, দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন, বড়লেখা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত