নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ২২:৩২

আফসোস-হাহাকারে নিজামউদ্দিন লস্কর ময়নাকে স্মরণ

সিলেট নাগরিক শোকসভা

নাগরিক শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব, অভিনেতা, লেখক ও নির্দেশক মামুনুর রশীদ।

বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেছেন, ‘আমাদের নাট্যমঞ্চ গঠন হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা যারা এই দেশ স্বাধীন করেছেন। যে কারণে আজকের বাংলাদেশের সর্বত্র যেখানে যতটা অবক্ষয় হয়েছে, এখানে ততটা হয়নি। এসব কিন্তু ময়নাদের অবদান।’

নিজামউদ্দিন লস্করের অকাল প্রয়াণে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘যারা অনন্ত সম্ভবনাময় তাদের অকাল প্রয়াণ বড় বেদনার।’

শনিবার বিকেলে নগরের চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে লেখক, অনুবাদ, নাট্যকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সদ্য প্রয়াত নিজামউদ্দিন লস্কর ময়নার স্মরণে আয়োজিত নাগরিক শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ এসব কথা বলেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট, নাট্য পরিষদ সিলেট এবং সিলেট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি যৌথভাবে এই নাগরিক শোকসভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ময়না কত কিছু পারত, কত কিছু জানত। আমরা তার সবকিছু জানিও না। সে ফটোগ্রাফি জানত, আটটি ভাষা জানত। হয়তো ওভাবে দু-চারটি ভাষা জানা ছিল বাকিগুলো বলতে পারত, বুঝতে পারত।’

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার একটি নাটক জার্মান ভাষায় অনুবাদ হয়েছিল। ময়না আমাকে প্রথমদিনই অনুরোধ করেছিল আপনার লেখা নাটকের জার্মান ভাষায় অনুবাদটা আমাকে দেন। তখন আমি বুঝতে পারিনি। তবে আমি তাকে দিয়েছিলাম এবং দেওয়ার পর সে সেটা ব্যাখ্যা করে বলেছে-যে অমুক জায়গা জার্মান অনুবাদটা ঠিক হয়নি। অমুক জায়গাটায় ঠিক হয়েছে। তার মানে এই সিলেটে বসে এত বড় একজন পণ্ডিত তার কাজ করে যাচ্ছে সারাদেশ জানে না; এটা আমাদের দুর্ভাগ্য বটে।’

নিজামউদ্দিন লস্কর সেভাবে মূল্যায়িত হননি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বলতে হবে বড় দুর্ভাগ্য যে তাকে আমরা জানি না এবং আমার সৌভাগ্য যে আমি তাকে স্পর্শ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু সেই স্পর্শকাল কম, খুব দ্রুতই সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘যারা অনন্ত সম্ভবনাময় তারা যখন আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয় তখন কবি তারাশঙ্করের গানটা বড় বেশি মনে পড়ে- ‘ভালোবেসে মিটল না আশ-কুলাল না এ জীবনে/ হায়! জীবন এত ছোট কেনে!/ এ ভুবনে?’

নাগরিক শোকসভায় নিজামউদ্দিন লস্করের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের প্রাক্তন প্রধান পরিচালক ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী, প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ভবতোষ রায় বর্মণ রানা, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, দৈনিক সিলেট মিরর সম্পাদক আহমেদ নূর, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জাকির আহমদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি মন্ডলির সদস্য অভিনেতা অনন্ত হীরা, দপ্তর সম্পাদক খুরশেদুল আলম, আরণ্যাক নাট্যদল ঢাকার অভিনেতা ও নির্দশক ফয়েজ জহির, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, সিলেট ষ্টেশন ক্লাবের সহ সভাপতি আবু বকর হিরন, সম্মিলত নাট্য পরিষদ সিলেটের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন, আয়োজক সংগঠন সিলেট ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি ফরিদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন মনি।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, নিজামউদ্দিন লস্করের বিভিন্ন সময়ের সহযোদ্ধা, স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। স্মরণ সভা উপলক্ষে খোলা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন শুভাকাঙ্খিরা।

এর আগে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ‘তুমি কি কেবলই ছবি..’ গানটির মাধ্যমে নাগরিক শোকসভার সূচনায় হয়। সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রানা কুমার সিনহা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্তের সঞ্চালনায় সূচনা বক্তব্য দেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশু। শ্রদ্ধার্ঘ পাঠ করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী অধ্যাপক শামীমা চৌধুরী।

এরপর নিজামউদ্দিন লস্করের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে নিজামউদ্দিন লস্করের দুই ভাই বাহাউদ্দিন লস্কর এবং মাহবুব উদ্দিন লস্করের হাতে আয়োজক তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সমাপনি বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন। প্রতীক এন্দ টনি ও অনিমেষ বিজয় চৌধুরীর সমাপণী সংগীতের মাধ্যমে নাগরিক শোকসভার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত