সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

২১ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ০১:৫৯

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিষেধাজ্ঞা, তাই ককসিটের শহীদ মিনারে এবার শ্রদ্ধাঞ্জলি

একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হওয়ার পরপরই ভাষা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর সন্তানের শ্রদ্ধা জানাতে সুনামগঞ্জ সদর পৌর শহরের ডিএস রোড এলাকায় গড়ে তোলা হয় শহীদ মিনার। সেই মিনারেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলার মুক্তিযোদ্ধাসহ পুরো সুনামগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

তবে এবার সুনামগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটির উপর আদালতে মামলায় থাকায় ও আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় এবং মামলার মাধ্যমে শহীদদের অবমাননার প্রতিবাদে নিজস্ব অর্থায়নে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ককসিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে  অস্থায়ী শহীদ মিনার।

রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭ টায় সুনামগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বদলে নিজেদের তৈরি ককসিটের শহীদ মিনারে পুষ্পাস্তবক অর্পণ করবেন জেলার সকল বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর জানান, ২০১৪ সালে শহীদ মিনারের জায়গার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় বলা হয় শহীদ মিনারের জায়গাটি জজ সাহেবের। কিন্তু আমরা যুদ্ধের সময় ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুক্ত করার পর এই স্থানেই শহীদ মিনার তৈরি করি। তাই আমরা এই জায়গাটি মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়ার জন্য অনেকবার অনুরোধ করেছি। পরে ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গা দেয়ার জন্য পক্ষভুক্তি চেয়ে একই আদালতে আমি পিটিশন দায়ের করি। সে সময় আদালত আমার পিটিশন খারিজ করে দেন। বর্তমানে আদালত এখানে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। শহীদ মিনার ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে। তাই আমরা সকল মুক্তিযোদ্ধারা শহীদদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাবো না। আমরা ছোট করে কসসিট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে শহীদ মিনার তৈরি করেছি এখানেই ফুল দিবো।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উপর আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। যেটি আমার কাছে শহীদদের অবমাননা মনে হয়েছে। আমরা আদালতের বিরুদ্ধে যেতে পারবো না কিন্তু শহীদদেরও আমরা মামলায় জড়িত শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিবো না। তাই আমরা রাতের মধ্যেই ছোট পরিসরে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে আমরা সেখানেই ফুল দিবো এবং আগামীকাল (রোববার) দুুপুরে এ বিষয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সংবাদ সম্মেলন রয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী নুরুল মোমেন বলেন, আদালতের মামলা ও নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা সেখানে ফুল দিবো না আমরাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আদালত নিষেধাজ্ঞা তুললে ও মামলাটি প্রত্যাহার হলে আমরা আবারও ফুল দিবো কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সেই দেওয়া হবে।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম বলেন, মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তুতি সভা মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানিয়েছিলেন এবং আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার জন্য কিন্তু তারা বললেন যেহেতু আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আমরা সেখানে ফুল দিবো না অস্থায়ীভাবে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ফুল দিবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত