প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, কমলগঞ্জ :

২২ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ১৭:৩২

চা বাগানের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ইংরেজিতে অভিযোগপত্র!

সবক্ষেত্রে বাংলা ব্যবহারের নির্দেশনা উপেক্ষিত

সবক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারে উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকলেও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বিভিন্ন চা বাগানে তা মানা হচ্ছে না।

আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চা বাগানের নিরক্ষর শ্রমিকদের কাছে এখনও ইংরেজিতে লেখা অভিযোগপত্র ও চিঠি পাঠানো হচ্ছে। ফলে শ্রমিকরা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।

কমলগঞ্জ উপজেলায় ডানকান ব্রাদার্স লিমিটেড কোম্পানির পরিচালনাধীন আলীনগর চা বাগানের স্থায়ী নারী শ্রমিক অর্চনা গোয়ালা এবং শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক সবিতা রিকিয়াশন। সবিতা, অর্চনার মতো চা শ্রমিকরা প্রতিদিন ২৩ কেজি কাঁচা চাপাতা উত্তোলনের বিনিময়ে ১০২ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন। এই দিয়েই তাদের সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানের লেখাপড়া, চিকিৎসাসহ যাবতীয় খরচ নির্বাহ করতে হয়। বাগান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অথবা কোম্পানির কোনো নিয়ম পালনে ব্যত্যয় ঘটলে বা কোনো কারণে কর্তৃপক্ষ কোনো শ্রমিকের ওপর অসন্তুষ্ট হলেই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই অভিযোগপত্রের জবাব শ্রমিককে দিতে হয়।

সবিতা, অর্চনা, সরস্বতীসহ চা বাগানের শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই আমরা চা শ্রমিকরা পড়ালেখা তেমন একটা জানি না। এসব অভিযোগপত্রের জন্যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব দিতে হয়। তখন আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন লোকের কাছে ধরনা দিয়ে অনেক ভোগান্তি পোহানোর পর চিঠির উত্তর দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।

শমশেরনগর ইউপি সদস্য ও মাসিক চা মজদুর সম্পাদক সীতারাম বীন বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এখন পর্যন্ত তাদের ইংরেজিতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হচ্ছে। তারা ইংরেজি পড়তে ও লিখতে পারেন না। ফলে ইংরেজিতে দেওয়া অভিযোগপত্রের জবাব লিখতে বাগানের বাইরের শিক্ষিত লোকদের কাছে গিয়ে ধরনা দিতে হয়।

অথচ ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন চা বাগানগুলোতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর এখনও ইংরেজিতে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে।

সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, 'বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উচ্চ আদালতের সব আদেশ অধীনস্থ আদালতসহ সব ক্ষেত্রে মান্য করতে হবে। কমলগঞ্জের শমশেরনগরসহ দেশের বিভিন্ন চা বাগানে ঔপনিবেশিক আমল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইচ্ছে করে এই ধারা অব্যাহত রেখেছে।'

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, ইংরেজিতে চার্জশিটের ফলে চা শ্রমিকদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে বার বার চেষ্টা করেও শমশেরনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগানের একজন স্টাফ জানান, দীর্ঘ সময় ধরে প্রচলিত হয়ে আসা ইংরেজিতে অভিযোগপত্রসহ সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর পরিবর্তন কিছুটা সময়সাপেক্ষ। শ্রীমঙ্গলের কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহবুবুল হাসান বলেন, কিছু কিছু চা বাগান কর্তৃপক্ষ ইংরেজিতে অভিযোগ ও চিঠিপত্র প্রদান করছে। আশা করা হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে সব ক্ষেত্রে বাংলা ব্যবহার হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত