নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ০১:৫৬

সিলেটে জ্বালানি তেলের সংকট কাটছেই না, ধর্মঘটের হুমকি

সিলেটের পেট্রল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেলের সংকট কিছুতেই কাটছে না। রেলওয়ের ওয়াগন সঙ্কটের কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা। গত ১৫/২০ দিন ধরেই চলছে তেলের সঙ্কট।

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বিভাগের ১১৪টি পেট্রল পাম্পের সবগুলোই কম তেল নিয়ে চলছে। সবচেয়ে বেশি সঙ্কট দেখা দিয়েছে ডিজেলের। ব্যবসায়ীদের দাবি চাহিদার অর্ধেক ডিজেলও পাচ্ছেন না তারা। অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে সিলেটের অনেক পেট্রল পাম্প বন্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।

এদিকে, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জ্বালানী তেলের সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগ না নিলে ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও পেট্রল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট বিভাগীয় কমিটি।

এই সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের চার জেলায় ১১৪টি পেট্রল পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে ৪৫টিসহ জেলায় মোট ৭০টি পাম্প রয়েছে।

সংগঠনের নেতারা জানান, সিলেট বিভাগে শুষ্ক মৌসুমে জ্বালানী তেলের চাহিদা বাড়ে। এই সময়ে হাওর এলাকাগুলোতে বোরো আবাদ হয়। বোরোর সেচের জন্য ডিজেলের চাহিদা দিগুণ বেড়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে সিলেটের পাম্পগুলোতে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেলের প্রতিদিনের চাহিদা ১০ লাখ লিটারেরও বেশি। তবে বর্ষা মৌসুমে এই চাহিদা অর্ধেকে নেমে আসে।

সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন, সিলেটের পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে। সিলেটে তেল সরবরাহ রেলের ওয়াগন নির্ভর। সিলেট রুটে তেলবাহী ট্রেনের ঘনঘন দুর্ঘটনা ও ওয়াগন সংকটের কারণে তেলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া সিলেটের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের সাথে প্রাপ্ত উপজাত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন প্রায় ৬ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে এই এলাকায় জ্বালানী তেল সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

রাষ্ট্রিয় মালিকানাধীন তেল বিপননকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সিলেটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে প্রতি সপ্তাহে ৩ থেকে ৪টি তেলবাহী ওয়াগন আসতো। প্রতিটি ওয়াগনে গড়ে ৩ লিটার করের জ্বালানী তেল আসতো। তবে গত একমাস ধরে ওয়াগন আসা কমে গেছে। বর্তমানে সপ্তাহে একটি ওয়াগনও আসছে না। ফলে তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রায় আট দিন পর সোমবার রাতে সিলেটে একটি তেলবাহী ওয়াগন আসে বলে জানান কর্মকর্তারা।

সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রেলের ওয়াগন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়ায় তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে যে কনডেনসেট পাওয়া যায় তা আগে সিলেটের বিভিন্ন প্লান্টেই জ¦ালানী তেলে রুপান্তর করা হতো। সরকারি মালিকানীধীন এই প্লান্টগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এখন চট্টগ্রামের বেসরকারি মালিকানাধীন প্লান্টে কনডেনসট থেরক জ্বালানি তেলে রুপান্তর করা হয়। এতে এখানকার সঙ্কট আরও ঘণিভূত হয়েছে।
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে জ¦ালানী তেল সরবরাহ ওয়াগন নির্ভর হওয়ায় আমাদেরকে প্রায়ই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। এছাড়া সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন প্রায় ৬ মাস থেকে বন্ধ থাকায় এ সংকট কাটিয়ে উঠা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই সমস্যা সমাধান না করা হলে পেট্রল পাম্পগুলো অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেবে।

রাষ্ট্রিয় তেল বিপননকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা ওয়েলের সিলেট কার্যালয়ের ইনচার্জ বাকী বিল্লাহ বলেন, রেলের ওয়াগন অনিয়মিত হওয়ায় তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সোমবার রাতে একটি ওয়াগনে এসেছে। তবে নিয়মিত ওয়াগন না আসলে এই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা যাবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত