নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ১৮:৫৭

সিলেটে ব্যাংকার হত্যা : তিন দিন কোথায় ছিলেন অভিযুক্ত অটোরিকশা চালক?

সিলেটে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মারধরে ব্যাংক কর্মকর্তা মওদুদ আহমদ মারা যান গত শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি)। ওই রাতেই মওদুদের ভাই বাদী হয়ে অটোরিকশা চালক নোমান হাছনুরকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তবে তিনদিনেও হাছনুরকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে হঠাৎ আদালতে এসে আত্মসমর্পন করেন পুলিশ। এসময় তার সাথে অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রশ্ন ওঠেছে এতোদিন কোথায় লুকিয়ে ছিলেন হাছনুর? কেনো তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ?

সিলেট কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ঘটনার রাতেই নোমান হাছনুর সিলেট ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। তাকে ধরতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় াভিযান চালিয়েছি। বাড়ি থেকে তার সিএনজি অটোরিকশাও ধরে নিয়ে এসেছি।

তিনি বলেন, জোর অভিযানের কারণে হাছনুর বুঝতে পেরেছে সে পালিয়ে থাকতে পারবে না। তাই আজ আদালতে আত্মসমর্পন করেছে।

তবে হাছনুর কোথায় লুকিয়ে ছিলেন তা নিশ্চিত হতে পারেননি জানিয়ে ওসি বলেন, আমরা তার ৭দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এসব ব্যাপারে জানা যাবে।

বুধবার সকাল ১১ টার দিকে সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পন করেন হাছনুর। এসময় তার সাথে ছিলেন সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা গলি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ আলী।

তিনি বলেন, হাছনুর ঢাকার কাছাকাছি জায়গায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। কাল (মঙ্গলবার) রাতে আমরা তার খোঁজ পাই। রাতেই হাছনুরকে আদালতে আত্মসমর্পনের জন্য আমরা চাপ দেই। আজ সকালে তার আত্মীয়দের মাধ্যমে হাছনুরকে সিলেট নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন



আদালতে আত্মসমর্পনের পর হাছনুরের জামিন প্রার্থণা করেন তার আইনজীবী। তবে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানান তার আইনজীবী এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন দিলু।

এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসনুরের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।তবে বুধবার আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয় নি।

হাছনুর সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের টুকেরগাঁও পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকালে জৈন্তাপুরের হরিপুর থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় নগরীর বন্দরবাজারে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা মওদুদ আহমেদ (৩৫)। সেখানে চালক নোমান হাছনুরের (২৮) সাথে ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয় মওদুদের। তখন হাছনুরসহ সিএনজি অটোরিকশা চালকরা মওদুদ আহমেদকে বেধড়ক মারধর করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর পর হত্যাকাণ্ডকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে প্রচার চালায় পরিবহন শ্রমিকরা।

নিহত মওদুদের বড়ভাই আব্দুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের টুকেরগাঁও পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে সিএনজি অটোরিকশাচালক নোমান হাছনুর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এদিকে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসেন তারা। সিলেটের সর্বস্তরের ব্যাংক কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ, ব্যাংক কর্মচারী ফেডারেশন, অগ্রণী ব্যাংক কর্মচারী সংসদ, সোনালী ব্যাংক, তরুণ পেশাজীবি সমিতি ও অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স সমিতি সিলেট এরকম কয়েকটি সংগঠন এই  আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে।

আন্দোলনকারীরা জানান, মওদুদ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত ও এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বেন না। একইসঙ্গে ব্যাংকারদের নিরাপত্তারও দাবি করেন তারা। এছাড়া সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য চলছে এমন দাবি তুলে তারা জানান এই নৈরাজ্য ও দৌরাত্ম বন্ধ করতে হবে। নতুবা আরও অনেককে এভাবে প্রাণ দিতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত