তাহিরপুর প্রতিনিধি

২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ২২:৩৫

যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই রোগী!

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র্দীঘদিন ধরেই কোন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যায় না। এছাড়াও চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা, কর্মচারীর পদ শূন্যতার কারনে হাসপাতালটি যেন নিজেই রোগী হয়ে লাইফ সার্পোটে আছে। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ২৫২টি গ্রামের ৩লক্ষাধিক মানুষ।

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে মেশিন নষ্ট, এমনকি রক্ত পরীক্ষাও করানো যায় না এখানে। টেকশিয়ানের অভাবে কোনো পরীক্ষাই হয় না এখানে।

২০১৯ সালের ২৫জানুয়ারি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও সুনামগঞ্জ-১এর সাংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ৫০শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। তবে প্রয়োজনীয় আসবাব ও লোকবল সংকটের কারণে উন্নীতকরণের সুফল পাচ্ছে না উপজেলাবাসী। ফলে পুরনো ভবনেই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকগন।

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, হাসপাতালে কর্মকর্তা, ডাক্তার যোগদানের পর থেকেই অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার জন্য তদবির শুরু করেন। কিছুদিন পর তারা বদলিও হয়ে যান। বর্তমানে ৫জন ডাক্তার থাকলেও হাসপাতালের বিশেষ রোগে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোন ডাক্তার নেই। গত ১০বছরের বেশী সময় ধরে ডেন্টাল, ল্যাব টেকনোলজিষ্ট, রেডিওগ্রাফার পদগুলো শূন্য রয়েছে। ফলে কোন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য যেতে হচ্ছে বাইরে।

এছাড়াও গত ৫বছর পূর্বে একটি এক্সরে মেশিন আসলে অব্যবহারের কারণে এটি নষ্ট হয়ে পড়েছে। এদিকে হাসপাতালে ৩টি জেনারেটার গত ১১বছর যাবৎ নষ্ট হয়ে পরে আছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীরা গরমে ছটফট করে।

হাওর বেষ্টিত দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা গ্রাম থেকে আসা জাহিদ মিয়া জানান, হাসপাতালের জন্য একটি নৌ এ্যাম্বোল্যান্স দিলেও চালক না থাকায় কোন কাজে আসনি। নৌ এম্বোল্যান্সটি নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের পুকুরে পড়ে থেকেই। এদিকে গত বছর নতুন একটি এম্বোল্যান্স দেওয়ায় জরুরী প্রয়োজনের তা ব্যবহার করতে পারছে আগত রোগীরা।

উপজেলা থেকে ১০কিলোমিটার দূর বাদাঘাট ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আলীনুর মিয়া জানান, এক্সরে করানো যায় না। এছাড়াও বিভিন্ন পদে শূন্যতার কারনে বাহিরে গিয়ে সময় নষ্ট করে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পরীক্ষার করে রিপোর্ট আনতে হয় আমাদের।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, অনেকদিন হলো নতুন ভবন উদ্বোধন হয়েছে কিন্তু নতুন ভবনে কোনো কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। নতুন ভবনে কাজ শুরু করলে ভর্তি রোগীরা একটু আরামে থাকতে পারবে। আর গুরুত্বপুর্ন শুন্য পদে জনবল নিয়োগ দিলে অসহায় রোগীরা উপকৃত হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, লোকবল ও প্রয়োজনীয় আসবাব সংকটের কারণে নতুন ভবনে কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালু করার জন্য আবেদন করা হলে জনবল না থাকায় কোন কাজ হচ্ছে না। আর ল্যাব থাকলেও টেকনিশিয়ান না থাকার কারণে রক্ত পরীক্ষার করা সম্ভব হচ্ছে না। শূন্য পদ গুলোর বিষয়ে উর্ধবতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নতির জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ ও ল্যাব টেকনিশিয়ান পদায়নসহ প্রতিটি পদে নিয়োগ দিয়ে জনসাধারনের সুচিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে এই সমাধান করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত