সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০১:১০

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পদ নিয়ে বিভক্ত বিয়ানীবাজার বিএনপি

বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপি’র পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সপ্তাহ যেতে না যেতেই দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন দ্বন্ধ। গত ২ নভেম্বর জেলা থেকে উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর শুরু হয় এই দ্বন্ধ। আর তা নতুন করে রূপ ধারণ করে জেলা থেকে গত ১১ তারিখে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে ছিদ্দিক আহমদের নাম ঘোষণার পর।

এই ঘোষণার পরই বেঁকে বসেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পদ প্রত্যাশী সহ সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন। ওই দিনই কানাডায় স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা দলটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম.এ অদুদ রুকন উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সরোয়ার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। যার কারণে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

তবে অনেকের প্রশ্ন, জেলা আহবায়ক উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিদ্দিক আহমদের নাম ঘোষণার পর কিভাবে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। আর সরোয়ারই যদি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক না হন, তাহলে জেলা কেন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

জানা যায়, গত বছর সিলেট জেলা বিএনপি বিয়ানীবাজার উপজেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলটির কমিটি নির্বাচন করে। ওই নির্বাচনে উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজমুল হোসেন পুতুল আর পৌর বিএনপির সভাপতি নজরুল হোসেন সমান ভোট পান। পরবর্তীতে লটারীর মাধ্যমে পুতুল সভাপতি নির্বাচিত হলে জেলা নেতৃবৃন্দ নজরুল হোসেনকে সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। আর ওই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন নজরুল বলয়ের নেতা মুল্লাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ অদুদ রুকন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি ছিলেন পুতুল বলয়ের নেতা ছিদ্দিক আহমদ। সম্মেলনে জেলা নেতৃবৃন্দ ছিদ্দিক আহমদকে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন।

আর এতে বেঁকে বসেন ৩য় অবস্থানে থাঁকা নজরুল বলয়ের আরেক নেতা সরোয়ার হোসেন। কিন্তু সম্মেলনের কয়েকদিন পর পুলিশের হয়রানীতে দলটির সাধারণ সম্পাদক রুকন স্বেচ্ছানির্বাসনে কানাডায় চলে গেলে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে পদাধিকার বলে ছিদ্দিক আহমদ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হলেও তাকে মানতে নারাজ সিনিয়র সহ সভাপতি ও সরোয়ার হোসেন বলয়ের নেতাকর্মীরা।

ওই সম্মেলনের দীর্ঘ ১১ মাস পর অক্টোবরে দলটির প্রথম সভা আহবান করা হলেও সভাপতির বক্তব্যচলাকালীন সময়ে দলটির সিনিয়র সহ সভাপতি নজরুল হোসেন তার বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভামঞ্চ ত্যাগ করেন। যার কারণে কোন সিদ্বান্ত ছাড়াই শেষ হয় দলটির প্রথম সভা। আর একারণেই ভেস্তে যায় দলটির ঐক্য প্রক্রিয়া। এর ফলে বিএনপিতে শুরু হয় নতুন দ্বন্ধ। যার জন্য পুতুল ও নজরুল একে অন্যকে দোষারোপ করেন। পরবর্তীতে জেলা নেতৃবৃন্দ তাদের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করে তা প্রশমিত করে।

২ নভেম্বর জেলা আহবায়ক নুরুল হক উপজেলা বিএনপি’র ১০১ সদস্য পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন। আর এর সপ্তাহখানেক পর গত ১১ তারিখ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জেলা আহবায়ক দলটির যুগ্ম সম্পাদক ছিদ্দিক আহমদকে দায়িত্ব দেয়ায় নড়েচড়ে বসেন রুকন ও সরোয়ার। আর ওইদিনই দলটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম এ অদুদ রুকন উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে সরোয়ারকে দায়িত্ব দেন। এরপরই আবারো প্রকাশ্যে চলে আসে দলটির বিরোধ। ভারপ্রাপ্ত পদ নিয়ে দলটি আবারো হয়ে পড়লো বিভক্ত। নেতাকর্মীরাও হয়ে পড়েছেন বিভ্রান্ত। কে তাদের দলের সম্পাদক এ প্রশ্ন দলটির নেতকর্মীদের।

এবিষয়ে উপজেলা ও পৌর বিএনপির দায়িত্বশীল দু’নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, উপজেলা বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করবে তত ভালো। কেননা নিজেরা যদি নিজেদের মধ্যে দ্বন্ধ সৃষ্টি করে দলের ক্ষতি করে তাহলে সরকারও সুযোগ বুঝে সেটা কাজে লাগিয়ে বিএনপিকে ধ্বংস করার পায়তারা করবে। তারা উপজেলা বিএনপির এই দ্বন্ধ দূর করে উপজেলা বিএনপিকে একটি আন্দোলনমুখী দল হিসেবে প্রতিষ্টিত করার আহবান জানান।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলা বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট নুরুল হক বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে যুগ্ম সম্পাদক ছিদ্দিক আহমদ দায়িত্ব পালন করবেন, এটা জেলার সিদ্বান্ত। এই সিদ্বান্ত পরিবর্তন হবে না।

সাধারণ সম্পাদক রুকন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সরোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান। এবিষয়ে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ারও আহবান জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত