নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ জুলাই, ২০২১ ০০:২৩

পুলিশের ওপর হামলা, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার, পরিবারের ভিন্ন দাবি

আহত এসআই শাহ আলী

সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার এক উপপরিদর্শকের (এসআই) ওপর হামলার অভিযোগে এক যুবলীগ নেতাসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে গ্রেপ্তারকৃত যুবলীগ নেতার পরিবারের দাবি, তিনি সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চক্রান্তের শিকার।

গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা অরিন্দম চৌধুরী অপু (৩৮) শাল্লা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক এবং উপজেলার নাইন্দা গ্রামের বাসিন্দা। গ্রেপ্তারকৃত অপরজন হলেন--ঘুঙ্গিয়ারগাও গ্রামের বাসিন্দা রতন রায় (২৮)।

শাল্লা থানার উপপরিদর্শক শাহ আলীর ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার বরাত দিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আলম বলেন, ‘সোমবার মধ্যরাতে ডিউটি শেষ করে থানা থেকে বের হয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে কয়েকজন যুবক এসআই শাহ আলীর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে আহত করে। আহত শাহ আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।’

তিনি জানান, ‘এ ঘটনায় জড়িত অপুসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দুই জনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে, কী কারণে এ হামলা হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি তদন্ত শেষে জানা যাবে।’

এদিকে, অরিন্দম চৌধুরী অপুর ভাই এডভোকেট অমিতাভ চৌধুরী রাহুল বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই উপপরিদর্শকের প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেন।

গ্রেপ্তারের পর থানায় পুলিশ হেফাজতে তার ভাইকে নির্যাতন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি জানান, গত ৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতা মাওলানা মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে বেড়াতে গিয়ে জনরোষে পড়ার ঘটনার পরদিন তার স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও একাত্তর টিভিতে ফাঁস হলে সেটির লিংক ফেসবুকে শেয়ার করেন অরিন্দম অপু।

এরপর থেকে টানা কয়েকদিন এই পোস্টে এবং ফেসবুকে নানাভাবে সাম্প্রদায়িক হামলার হুমকি দিতে থাকেন স্থানীয় কয়েকজন।

১৭ মার্চ একই উপজেলার নোয়াগাঁওয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার কারণে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে হুমকি দেওয়া ১৩ ব্যক্তির নাম উল্লেখ ১০ এপ্রিল শাল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন অরিন্দমের ভাই অমিতাভ।

অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরও থানা থেকে হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে আমার ভাইয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। এসআই শাহ আলী আমার ভাইকে বলেন যে এ ধরণের পোস্ট শেয়ার করা ঠিক হয়নি। নোয়াগাঁওয়ের ঝুমনের গ্রেপ্তারের বিষয়টা মনে রাখা উচিত ছিল।’

অমিতাভ বলেন, ‘এসআই শাহ আলী তারপর স্ট্যাটাস মুছে ফেলার কথা বলেন এবং সাধারণ ডায়েরি পরিবর্তন করে তা থেকে হেফাজতে ইসলামের নাম ও সাম্প্রদায়িক হামলা সংক্রান্ত বিষয় সরিয়ে দিতেও চাপ প্রয়োগ করেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এসআই শাহ আলীর চাপ প্রয়োগের বিষয়টি গত ১৪ এপ্রিল পুলিশ সুপারকে জানালে সার্কেল এএসপি বিষয়টি অনুসন্ধান করেন এবং এসআই শাহ আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দেওয়ার ঘটনায় শাহ আলী আমার ভাইয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হন।’

‘হামলার অভিযোগ তুলে আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করার পেছনে এটিই মূল কারণ বলে আমরা মনে করছি,’ যোগ করেন তিনি।

এছাড়াও, গ্রেপ্তারের পর থানা হেফাজতে অরিন্দমকে নির্যাতন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর থানায় আমার ভাইকে মারধর করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি থানায় আমার ভাইয়ের গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন। আমরা এ বিষয়ে আদালতে অভিযোগ করব।’

যোগাযোগ করা হলে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুকে দেওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে সাধারণ ডায়েরি এবং পরবর্তীতে আমাদের কাছে এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার বিষয়টি তখনই নিষ্পত্তি করা হয়।আমরা সেই এসআইকে সাধারণ ডায়েরি পরিবর্তনে চাপ প্রয়োগ না করতে নির্দেশ দেই এবং বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেই। পরবর্তীতে এসআই বিষয়টি তদন্ত করে জানায় যে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিষয়টি সে জায়গাতেই থেকে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগী কেউ পুলিশের কাজে খুশি না হতেই পারেন। কিন্তু, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই যে এখন হামলার ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে, বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষ এবং আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখব।’

হেফাজতে নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘থানা হাজতে যদি নির্যাতন করা হয়ে থাকে, তাহলে এটি অবশ্যই গুরুতর অপরাধ। ভুক্তভোগীকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হেফাজতে নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডাক্তারি পরীক্ষার পর অভিযোগের সত্যতা পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত