এস আলম সুমন, কুলাউড়া

১৪ জুলাই, ২০২১ ২৩:০৪

বিদ্যুতের অপেক্ষায় ৫০ পরিবার

একটা নিজস্ব ঘর পাবেন এমনটি কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি তারা। দীর্ঘদিন তারা অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন। মুজিববর্ষে ঘর পেয়ে যেনো হাতে আকাশের চাঁদ পেয়েছেন  তারা। এখন তারা অনেকে উঠেছেন নিজেদের স্বপ্নের নীড়ে। অনেকে ওঠার অপেক্ষায়।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২১০ গৃহহীন পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে ঘর পেয়েছিল ১১০ পরিবার। দ্বিতীয় পর্যায়ের ১০০ ঘরের মধ্যে অর্ধেকের কাজইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সবাইকেই ইতিমধ্যে চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের ৫০টি ঘরে এখনো বিদ্যুৎসংযোগ দেওয়া হয়নি।

বিদ্যুৎ সংযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন ওই ৫০ পরিবার। রয়েছে সুপেয় পানির সংকটও।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত ৪৪০ ভূমিহীন পরিবাররয়েছে। কুলাউড়া উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২–এর আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০০টি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রতিটি ঘরের খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১১০ ভূমিহীন পরিবার পেয়েছিলপ্রধানমন্ত্রীর এসব উপহার। প্রথম পর্যায়ের প্রতিটি ঘরের খরচ ধরা হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

প্রকল্পের ৫০টি ঘরে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে উপজেলার রাউৎগাঁওয়ের মুকন্দপুরে ১২টি, টিলাগাঁওয়ে লংলা খাস এলাকায় ১৬, হাজীপুরে ৮, ভাটেরার কড়ইতলার ৪ ও কর্মধার বুধপাশার ১০টি ঘরে বিদ্যুৎসংযোগ দেওয়া হয়নি। তবে তাঁদের অনেকের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের লাইন টানা হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শিমুল আলী জানান, আশ্রয়ণের কয়েকটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগেরলাইন টানা হয়েছে। সংযোগের জন্য পল্লী বিদ্যুতের কাছে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। শুধু ভাটেরার কড়ইতলারচারটি ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। ওই এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের আওতা নিয়ে বিভ্রান্তিথাকায় এই সমস্যা হচ্ছে। এখন দ্রুত সেটিও সমাধান হয়ে যাবে।

সুপেয় পানির বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, প্রতি ১০ ঘরের জন্য একটি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়াহয়। এ জন্য যেখানে একসঙ্গে কয়েকটি ঘর রয়েছে, সেখানে একটি করে গভীর নলকূপ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটিনলকূপ বসানোর কাজ চলছে। শুধু এক স্থানে একটি ঘর পৃথক থাকায় সেখানে নলকূপ দেওয়া সম্ভব হবে না।

শিমুল আলী আরও জানান, প্রথম পর্যায়ের ১১০টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষে ইতিমধ্যে উপকারভোগীদের কাছেহস্তান্তর করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১০০টি ঘরের মধ্যে ৪২টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৫৮টির কাজ শেষপর্যায়ে।

কুলাউড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া গৌরি দাস (৪০), কৃতিষ দাস (৬০), সবজান বিবি (৫৫), নির্মল দাস (৬০), মো. শুকুর মিয়া (৪৫), নিপালী রাণী দাস (৩২), গোলাপ মিয়া (৭০), জাবেদ মিয়া (৩৮), ফিরুজমিয়া (৪৫), রীণা বেগম (৫০) ও আজিরুন বেগম (৪৫) সহ একাধিক উপকারভোগী জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যারপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ঘর দিয়েছেন।দীর্ঘদিন অন্যের বাড়িতে ভাড়া ও আশ্রিত ছিলাম। কখনো স্বপ্নেওভাবিনি একটি পাকা ঘর পাবো। কিন্তুু প্রধামন্ত্রীর কারণে আজ আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। সন্তানদেরনিয়ে নিশ্চিন্তে ঘরে ঘুমাতে পারছি।

তাঁরা আরো জানান, খবর শুনি অনেক জায়গায় ঘর ভেঙে গেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ঘরগুলো এখনো কিছুহয়নি। বিদ্যুৎ সংযোগ ও নলকূপের পানির জন্য ভোগান্তিতে আছি। বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবস্থা হয়ে গেলে শান্তিতেথাকবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যার আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা খোঁজখবরনেন। বিদ্যুৎয়ের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারকে জানাই। তিনি সব দ্রত সমস্যা সমাধান করা হবেজানিয়েছেন।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুহসিন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে গভীর নলকূপস্থাপনের কাজ চলছে।

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, কুলাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের যেঘরগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি, সেগুলোতে সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, বেশির ভাগ উপকারভোগীর বিদ্যুৎ ওনলকূপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত বিদ্যুৎ ও পানিরসমস্যার সমাধানে কাজ চলছে।

তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর প্রত্যেকউপকারভোগীদের হাতে ইতিমধ্যে কবুলিয়ত, নামজারি খতিয়ান, গৃহ হস্তান্তরের সনদপত্র প্রদান করা হয়।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজু গত ১৯ জুন উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলীএলাকায় প্রকল্পের ঘর সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ঘরের কাজের মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত