সিলেটটুডে ডেস্ক:

১৫ জুলাই, ২০২১ ০০:৩৮

বালু মহালে বোমা মেশিন বন্ধের দাবি

সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে বালু ব্যবসায়ী সমিতি

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার চেলা ও মরা চেলা নদীর বালু মহালে ড্রেজার, বোমা ও শ্যালো মশিন বন্ধের দাবি জানিয়েছে ছাতক বাজার একতা বালু উত্তোলন ও সরবরাহকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি। পাশাপাশি সমিতির নেতারা বালু উত্তোলনে নিয়োজিত ১৫ হাজার শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা সচল রাখার দাবি জনিয়েছেন।

বুধবার সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির পক্ষে এ অভিযোগ ও দাবি করেন সমিতির সভাপতি বাবলু হোসেন শাহেদ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে ৫৬৬ একর জায়গার চেলা ও মরা চেলা নদী বালুমহাল ১৪২৮ বাংলা সনের সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইজারা দেন। ইজারা শর্তমতে, কোনো ড্রেজার মেশিন বা অন্য কোনো যন্ত্র ব্যবহার করে বালু এমনকি পাথর উত্তোলন করার কথা নয়। কিন্তু ইজারা গ্রহণের পর ইজারাদার গোপনে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ড্রেজার মেশিন ব্যবহারের অনুমতি নেন। যা নদী আইনের পরিপন্থী। বেআইনীভাবে ড্রেজারের পাশাপাশি শ্যালো ও বোমা মেশিন দিয়ে বালুমহালের ৫০-৬০ ফুট নীচ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ইজারা চুক্তি ৪ নম্বার শর্ত ভঙ্গ করে ইজারাদার অবৈধ বোমা ও শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় বারকি, বেলচা, বালু ও বালতি শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে চরম মানবেতন জীবন-জীবিকা যাপন করছেন।  

বক্তব্যে বলা হয়, অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূত বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকার দৌলতপুর গ্রামে একটি মসজিদ ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নাছিমপুর, শারপিননগর, রহিমের পাড়া, সোনাপুর, কাজিরগাওসহ ২০টি গ্রামের রাস্তা ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রায় ৩ শতাধিক বাড়িঘর নদী ভাঙ্গন ও হুমকির মুখে পড়েছে।

২০১৪ সাল থেকে নদীর বালু মহালের ইজারাদাসহ বিভিন্ন সংগঠন অতিরিক্ত রয়্যালিটি আদায় ও শ্রমিকদের ওপর হামলা, অমানবিক নির্যাতন করে চলন্ত নৌপথের অন্তত ৩০টি স্থানে চাঁদাবাজি করত উল্লেখ করে সমিতির নেতারা জানান, গত কয়েক বছরে শ্রমিকরা এসব কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘ছাতক বাজার একতা বালু উত্তোলন ও সরবরাহকারী ক্ষুদ্র ব্যবায়ী সমবায় সমিতি (রেজিষ্টার নং-০৮১/সুনাম১৫) গঠন করা হয়। অত্যাচার ও অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ না হওয়ায় সমিতির পক্ষ থেকে হাইকোটে রিট পিটিশন মামলা (নং ১০৬১৭/২০১৭) করা হয়। এছাড়া অবৈধ বোমা, শ্যালো ও ড্রেজার মেশিন বন্ধের জন্য আরেকটি রিট পিটিশন মামলা (নং ১২৫৯৯/২০১৮ করা হয়।

বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৭ সালে ৩১ অক্টোবর ছাতক উপজেলা পরিষদ মিলনয়াতন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাবিরুল ইসলাম সভা করে সুরমা ও চেলা নদীতে অবৈধ চাদা বন্ধে সরকারিভাবে রেজুলেশন করেন। পরবর্তীতে ইজারাদার ও পৌরসভার দুটি র‌্যায়েলটিসহ ৩টি স্থান বাদে সকল প্রকার অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করা হয়। কিন্তু আবার শুরু হয়েছে একই অবস্থা। সুনামগঞ্জের বর্তমান জেলা প্রশাসক ১৪২৮ বাংলা সনে চেলা ও মরা চেলা নদী বালু মহালে ইজারা দেয়ার পর জামানতের টাকা ফেরতসহ অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলনের অনুমোদন দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। ফলে ইজারাদার ড্রেজার মেশিশের সাথে অবৈধভাবে বোমা ও শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন শুরু করেন। বালুমহাল ইজারার শর্ত লঙন করার পরও কোন ধরনের আইনী ব্যবস্থা নেন নি জেলা প্রশাসক। উল্টো তিনি অবৈধ বোমা, শ্যালো মেশিনের ব্যাপারে রয়েছেন নিরব। ইজারাদারকে দিয়েছেন অবৈধ সুযোগ। অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নৌ পুলিশ গত ৪ জুলাই অভিযান করলে তাদের উপর হামলা করা হয়।

বক্তব্যে জানানো হয়, ১৪২৬ বাংলায় চেলা ও মরা চেলা নদী বালু মহালে ইজারা দেওয়ার পর বালু শ্রমিকের উপর নির্যাতন ও অতিরিক্ত রয়্যালিটি আদায়ের কারণে তৎকালীন ইজারাদার এর কাছ থেকে ২৫% জামানত রাখা হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ১৪২৮ বাংলায় ইজারা দেওয়ার পর ইজারাদারের কাছ থেকে কোন ধরণের জামানত রাখা হয়নি। এমনকি চেলা ও মরা চেলা নদী বালু মহালটি সরকারের মহাল ব্যবস্থাপনা গেজেটের পরিশিষ্ট ‘ক’ (বিধি-১০(৬) এর বিধিমতে নদীর চর জাতীয় এলাকা থেকে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করার কথা। এ বছর একইভাবে দরপত্র আহবান করে ইজারাও দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য জেলা প্রশাসক ‘খ’ জাতীয় বালু মহালের নীতিমালায় বালু মহাল সমঝে দেন ইজরাদারকে। পরিশিষ্ট ‘খ’ (বিধি-১০(৬) দ্রষ্টব্য) জাতীয় মহালে নদীর তল দেশ থেকে বালু উত্তোলনের বিধান রয়েছে। জেলা প্রশাসক অবৈধভাবে বালু মহাল এর চিত্র ‘ক’ থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে পরিবর্তন করে ইজারা প্রদান করেছেন। যার কারণে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রী ও মন্ত্রনালয়েল সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও শ্রমিকদের জীবন জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থার পথ সুগম করার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান, সাবেক সভাপতি আব্দুস সাত্তার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মুরাদ আলী, নির্বাহী সদস্য খালেছ মিয়া, মিজানুর রহমান চৌধুরী ও জহিরুল ইসলাম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত