আমির হামজা, হবিগঞ্জ

২০ জুলাই, ২০২১ ১৪:০২

হাসপাতালে জনবল সঙ্কট, মিলছে না সেবা

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চলের একটি উপজেলা আজমিরিগঞ্জ। জেলা সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরত্ব। ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত উপজেলায় জনসংখ্যা প্রায় একলক্ষ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা ৩১ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যে হাসপাতালটিতে রয়েছে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট। পাশাপাশি ওষুধ সংকট থাকায় রোগীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সবকিছুই স্বাভাবিক।

সরেজমিন ঘুরে আজমিরিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট। তবে প্রস্তাবিত ৫০ শয্যার। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের কাজ চলমান রয়েছে যা প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ভবনটির কাজ আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এ উপজেলায় রয়েছে ৫টি ইউনিয়ন। বর্তমানে এ হাসপাতালে ১৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৫ জন। আবার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে এ চিকিৎসকদের। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদেরও স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রায় চার লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ উপজেলার জনগণের একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

এদিকে হাসপাতালটিতে এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ইসিজি মেশিন, ডেন্টাল চিকিৎসার সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, দারোয়ান, স্টোরকিপার, ওয়ার্ডবয়সহ লোকবল সংকটে হাসপাতালের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সামান্য জটিল রোগী হলেই নিয়ে আসতে হয় জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল বা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

তবে বর্তমানে উপজেলাজুড়ে মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালটিতে। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৫টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। যেখানে ৫টি  অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। ততে অত্র হাসপাতালে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হচ্ছে। এছাড়াও বর্তমানে করোনা টিকা প্রদান কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২১ জন নার্সের জায়গায় আছেন ১২ জন, ৫ জন অফিস সহকারি জায়গায় ১ জন, ২০ জন স্বাস্থ্য সহকারি জায়গায় ১৪ জন, ৪ জন ফার্মাসিস্টের জায়গায় রয়েছেন ১ জন, ৫ জন পরিছন্ন কর্মীর জায়গায় ৩ জন। তবে সম্প্রতি নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে আসলেও ড্রাইভারের পদটি শূন্য থাকার কারণে অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী।

আজমিরীগঞ্জের বাসিন্দা মো. সোহেল মিয়া বলেন, সামান্য গুরুতর কোন সমস্যা হলেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা করানো যায় না। আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছি যে গুরুতর রোগী হলেই জেলা সদরে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সেখানে যেতে হলে প্রায় ১ ঘণ্টার প্রয়োজন। আর রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হলেতো রাস্তাতেই মৃত্যু হয়।

এদিকে হাসপাতাল থেকে তারা চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ পান না জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে সামান্য কিছু ওষুধ পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ ওষুধ দোকান থেকে কিনে আনতে হয়। যা উপজেলার অনেকের সাধ্যের বাইরে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন সিলেটটুডে ২৪কে বলেন, রোগীর পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে, কোনো সংকট নেই। তবে জনবল ও অবকাঠামো চেয়ে আমারা সিভিল সার্জন অফিসে আবেদন করেছি। আশাকরি ৫০ শয্যার যে ভবনটি নির্মাণ কাজ চলছে এটি সম্পন্ন হলে প্রয়োজনীয় আধুনিক জিনিস পত্র ও শিগগির প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেয়া হবে। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত