জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর

২০ জুলাই, ২০২১ ২০:৪৪

নিজের ঘরে প্রথম ঈদ তাদের

এবার নিজের ঘরে প্রথম ঈদ করবেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া পরিবারগুলো। এজন্য প্রতিটি পরিবার খুবই আনন্দিত উচ্ছ্বসিত। তবে এসব পরিবারের মধ্যে কেউই কোরবানি দিবে না। তারা রুটি সেমাই রান্না করে পরিবার নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন বলে জানান।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে ৭০টি ও ঘাগটিয়া গ্রামে নির্মিত ৭৬টি আশ্রয়ণ প্রকল্প করা হয়েছে।

সরজমিনে দেখা যায়, নিজের ঘরে প্রথম ঈদ পালনের আনন্দে ভাসছে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাওয়া পরিবারগুলো।শিশুরা ছুটাছুটি করছে ঘরে ঘরে। আবার অনেকেই নিজের কাজ করছেন। নারীরা নিজ নিজ ঘর গোছাতে ব্যস্ত।

কথা হয় শিশু সখিনার সাথে। সখিনা বলে, এখানে এসে আমার ভালো লাগছে। জায়গাটি খুব সুন্দর। অন্যদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। সবার সঙ্গে মিলে মিশে খেলাধুলা করতে পারি। আমাদের লেখা পড়া করার জন্য স্কুল নাই এখানে একটি স্কুল ও মসজিদ হলে আরও ভাল হত।

আব্দুল মতিন (৭০)বলেন, আমাদের কোরবানি দেয়ার তৌফিক নাই। এজন্য কোরবানি দিব না। তবুও আমরা খুশি। খাই আর না খাই নিজের একটা ঘর পাইছি। এইটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ। এবার ঈদটা নিজের ঘরেই পালন করতে পারমু। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

শিরিন বেগম (৫৫) বলেন, অন্যের বাড়িতে থাকতাম, কোনো স্বাধীনতা ছিল না। ছেলে মেয়েরা প্রাণ খুলে হাসতে পারতো না, খেলতে পারতো না। নিজের কোনো জমি জমা নাই, ঘরও ছিল না। যখন তখন মালিক ঘর ছেড়ে দিতে বলতো। মালিকের মন যোগীয়ে থাকতে হত। মনে বড় কষ্ট ছিল,চিন্তায় থাকতাম একটা নিজের বাড়ি নিয়ে। এখন আর কোন চিন্তা নাই ঘর পাইছি এই বার নিজের ঘরেই ঈদ করমু।

হোসনা বেগম বলেন, এখন নিজের একটি ঘর হইছে। কেউ আর চোখ রাঙাতে পারব না। শেখ হাসিনা ঘর দিয়া আমরার বাপ-মার কাম করছে। তারে সামনে পাইলে পায়ে হাত ধরে সালাম করতাম। ঘর পাইয়া আরও বেশি দিন বাচার ইচ্ছা করতাছে। আমার ছেলে মেয়েদেরও কোন চিন্তা নাই। এই বার নিজের ঘরে প্রথম ঈদ পালনের আনন্দে এভাবে বলছিলেন হোসনা বেগম।

আব্দুল মন্নাফ(৮০)বলেন, ঘর পেয়ে অনেক শান্তি লাগতেছে। আগে মানুষের বাড়ি বাড়ি থাকছি। এই বাড়ি থেকে হেই বাড়ি গেছি। মালিকের মন জোগায়া থাকতে না পারলে বাইর কইরা দিছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে ঘর দিয়েছেন। আমাদের মা-বাপ যা করতে পারে নাই শেখ হাসিনা আমাদের জন্য তা করেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। জায়গাটি তাদের খুব পছন্দ হয়েছে বলে জানান তিনি।

পাশে শিমুল বাগান আর যাদুকাটা নদী পাশেই বাঁশ বাগান আর গাছ গাছালি ঘেরা মনোরম পরিবেশে এখানে ৭০ভ‚মিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পাকা ঘর দেয়া হয়েছে। আব্দুল মন্নাফ(৮০), হোসনা বেগমেই নয় শিরিন বেগম, আয়েশা বেগম, রাবেয়া বেগম,সাফিয়া খাতুনসহ ঘর পাওয়া প্রত্যেকটি পরিবারের রয়েছে এমন দুঃখ দুর্দশার করুণ কাহিনী। ঘর পেয়ে ফেলে আসা সব দুঃখ দুর্দশার করুণ কাহিনী ভুলে আনন্দে আছে সবাই।

প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে হতদরিদ্র, ভ‚মিহীন ও গৃহহীনদের দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ (‘ক’ শ্রেণি) পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রথম ধাপে ৭০টি একেকটি সেমি-পাকা দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘরে,একটি রান্নাঘর ও শৌচাগার রয়েছে। নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১হাজার টাকা। চলতি বছরের ২৩জানুয়ারি এবং বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামে দ্বিতীয় পর্যায়ের ৭৬টি ঘর ১লাখ ৯০হাজার টাকা ব্যয়ে ২০জুন উপকারভোগীদের কাছে এই ঘর গুলো প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর তাদের হাতে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত