নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ জুলাই, ২০২১ ০১:০৯

এবার তাদের অন্যরকম ঈদ

দিনমজুরির আয়ে চলে ফাতির আলীর সংসার। নিজের কোনো জমি ছিল না। অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে থাকতেন। ১৭ বার পরিবর্তন করতে হয়েছে জায়গা। এভাবে (আশ্রিত) কেটে গেছে প্রায় ৩৫ বছর। ঠিকানাবিহীন এমন জীবনে বহুবার ঈদ এসেছে। কিন্তু আনন্দ বলে কিছু ছিল না। তবে প্রায় ৩৫ বছর পর এবারই প্রথম পরিবার নিয়ে নিজস্ব ঠিকানায় ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পেরেছেন ফাতির আলী। আনন্দের এই উপলক্ষ এনে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। 

ফাতির আলী মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের কাশেমনগরে আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ঘর পেয়েছেন। এখানে তার মতো আরও ১৪টি পরিবার ঘর পেয়েছে। যারা জীবনে প্রথম এক অন্যরকম পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছেন। এর বাইরেও বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর, বড়লেখা সদর, উত্তর শাহবাজপুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে ঘর পেয়েছে ১৪০টি পরিবার।

ফাতির আলী বলেন, ‘পরের বাড়িতে ঈদ করতাম। মন দুর্বল থাকতো। ফুর্তি-উৎসব অইত না। সব সময় একটা চিন্তা থাকতো মনের মাঝে। পরের বাড়ি আছি। পরের বাড়ি থাকি। এই বার খুব খুশি লাগের। নিজের একটু জায়গার মাঝে আছি। ঈদ করতাম পারিয়ার। জীবনে চিন্তাও করতাম পারছি না একটা ঘর, নিজের জায়গা অইব। শেখ হাসিনার কারণে আইজ ঘরের মালিক, জায়গার মালিক অইলাম। প্রথম ঈদ করলাম নিজের ঘরে। মনে একটা শান্তি মিলের।’



ফাতির আলী জমি ও পাকা ঘর পেয়ে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।      

কাশেমনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আব্দুল বারেক বলেন, ‘ঘর পাওয়ার আগে রেল স্টেশনের পাশে থাকতাম। এখানে ১৫ বছর ছিলাম। এরআগে পরের বাড়িত থাকতাম। অনেক কষ্ট করেছি। নিজের কোনো জায়গা আছিল না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে অন্যের বাড়িতে ঈদ করাতাম। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কত ঝগড়া হয়েছে। অন্যের ঘরে যাওয়া নিয়ে। শান্তি পাইতাম না। এখন নিজের ঘরে ছেলে মেয়দের নিয়ে ঈদ করলাম। শান্তি মিলের।’

ছাদ উদ্দিন বলেন, ‘একটু জায়গা ও ঘর পাইয়া কতটুকু শান্তি পাইরাম বুঝাইতাম পারতাম নায়। আগে অন্যের জায়গায় ঈদকে ঈদ মনে হয়নি। এখন নিজের ঘরে নিজের মতো করে আমরা ঈদ করছি। আমরা গরিবের জন্য শেখ হাসিনা যেটা করছইন আমরা খুশি।’



ঘর পাওয়া মো. আল আমিন বলেন, ‘কাঠমিস্ত্রির কাজ করিয়া পরিবার চালাই কোনোমতে। নিজে জায়গা কিনিয়া ঘর করমু ইটা কোনোদিন কল্পনাও দেখছি না। কিন্তু সরকারের দেওয়া ঘর পাইয়া নিজের মতো থাকতাম পারিয়ার। নিজের জায়গায় থাকার আনন্দই আলাদা। ঈদের দিন ছেলেমেয়েরা আনন্দ করের। অন্যের বাড়িতে থাকতে ইটা করা গেছে না। ছেলেমেয়েদের আনন্দ দেখে নিজের মন খুশিতে ভরে গেছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ (‘ক’ শ্রেণি) পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বড়লেখা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে দুই দফায় ১৫৫টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। একেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ের ও ২০ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের উপকারভোগীদের মধ্যে ঘরগুলোর চাবি হস্তান্তর করা হয়।

ঈদের দিন বুধবার বিকেলে সরেজমিনে কাশেমনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা গেছে, বাড়ির আঙিনায় খেলাধুলা করছে বিভিন্ন বয়সী শিশুরা। তাদের সবার হাত মেহেদির রঙে নানা আলপনায় সাজানো। তবে বেশিরভাগের শরীরের পুরোনো পোশাক। তবুও তাদের মনে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। এই উচ্ছ্বাস নিজেদের একটি উন্মুক্ত আঙিনায় খেলাধুলা করতে পারার। স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত