নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ১৮:৪১

মুজাহিদকে ‘শহীদ’ আখ্যা, সিলেটের ডাক’র ‘ধৃষ্ঠতা’

সর্বোচ্চ আদালতে রায়ে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে 'শহীদ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে সিলেটের সবার্ধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্র 'সিলেটের ডাক'। এনিয়ে সিলেটের সচেতন ও প্রগতিশীল নাগরিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষােভের সৃষ্টি হয়েছে।

অনেকেই ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে 'শহীদ' বিশেষণে আখ্যায়িতকে 'ধৃষ্ঠতা' ও 'যুদ্ধাপরাধের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পায়তারা' বলে উল্লেখ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রকে এ জন্য বিচারের মুখোমুখি করারও দাবি তাঁদের।

সোমবার (২৩ নভেম্বর) সিলেটের ডাক'র প্রথম পৃষ্ঠায় 'সিলেট আলীয়া মাদরাসা মাঠে গায়েবানা জানাযা/ বাংলার জমিনে কোরআন ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল হত্যার বদলা নেওয়া হবে' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রথম লাইনেই লেখা রয়েছে- 'জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের গায়েবানা জানাযা গতকাল রোববার ২টায় সিলেট সরকারী আলীয়া মাদরাসা ময়দানে সম্পন্ন হয়েছে।'

সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী মনে করেন সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে কারো সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের পর তার নামের পাশে 'শহীদ' বিশেষণ লাগানোর কোনো সুযোগ নেই। সিলেটের ডাক'র এমনটি লেখা ঠিক হয়নি। একে 'বিভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশল' বলে উল্লেখ করেন ইকবাল সিদ্দিকী।

এ ব্যাপারে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক লোকমান আহমদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুজাহিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির রায় প্রদানের পর সর্বোচ্চ আদালতেও তা বহাল রয়েছে। এমনকি মুজাহিদ দোষ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষাও করেছে। এ অবস্থায় একটি গণমাধ্যমে তাকে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত সংবিধান ও আদালতের প্রতি ধৃষ্ঠতার শামিল। এমন ধৃষ্ঠতাপূর্ণ আচরণের জন্য তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। এই পত্রিকার ডিক্লেয়ারেশন বন্ধ করা উচিত।

লোকমান বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্যই এমনটি করা হতে পারে।

সোমবার সিলেটের আরো কয়েকটি স্থানীয় দৈনিকে জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের নামের আগে 'শহীদ' বিশেষণ ব্যবহার করা হয়। সিলেট থেকে প্রকাশিত ‌'জালালাবাদ', 'শ্যামল সিলেট'-এও মুজাহিদের নামের আগে শহীদ ব্যবহার করা হয়। তবে এসব পত্রিকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি হিসেবে মুজাহিদের গায়েবানা জানাযার সংবাদটি প্রকাশ করা হয়। কেবল সিলেটের ডাক'র প্রতিবেদনটি তাদের 'স্টাফ রিপার্টার' তৈরি করেন। যেখানে যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদকে 'শহীদ' আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

তবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর কারো নামের শেষে শহীদ বা এরকম কোনো বিশেষণ ব্যবহারের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গণমাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদকে শহীদ আখ্যা দেওয়া ধৃষ্ঠতার শামিল। কোনোভাবেই এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

তিনি বলেন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারেও এমনটি প্রকাশের সুযোগ নেই। কারণ আইন, আদালত ও সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এমন কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ করার এখতিয়ার নেই।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশেনর সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, সর্বোচ্চ আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এই ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। এমনকি মুজাহিদ অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষাও চেয়েছে। এ অবস্থায় সিলেটের ডাক পত্রিকায় মুজাহিদকে শহীদ আখ্যা দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি জনগনের প্রতি অমর্যাদা।

এ ব্যাপারে সিলেটের ডাক'র নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল হামিদ মানিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত