নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:১৩

আরও সবুজ হচ্ছে এমসি কলেজ ক্যাম্পাস

লাগানো হয়েছে ৭০ হাজার গাছ

মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজে এখন আর কোনো খালি জায়গা নেই। যেদিকে তাকাবেন শুধু গাছ আর গাছ।  টিলার উপরে লাগানো হয়েছে বনজ গাছ। কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা যেন ফল খেতে পারে সেজন্য হোস্টেলের পাশে লাগানো হয়েছে ফলদ ও ওষধি গাছ। কলেজের ভিতরে মন্দিরের টিলা, প্রিন্সিপালের টিলা, কেমিস্ট্রি বিভাগের পাশের টিলাতে লাগানো হয়েছে বনজ গাছ। একাডেমি ভবনের পাশে কলেজ ক্যাম্পাসে ও বোটানি জিওলজি ডিপার্টমেন্টের মাঝখানে করা হয়েছে ফলবাগান । খালি নেই কলেজের সমতল ভূমিও। যথাযথ পরিকল্পনা করে ৭০ হাজার গাছের চারা লাগানো হয়েছে এমসি কলেজে।   

সবুজ গাছগাছালি আর টিলায়ঘেরা সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজ। শতবর্ষী এই কলেজের ক্যাম্পাস খুব সহজেই সবার নজর কাঁড়ে। এবার এই ক্যাম্পাসকে আরও সবুজময় ও নান্দনিক করতে রোপণ করা হয়েছে ৭০ হাজার ফলদ, বনজ ও ওষধি গাছ। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধন করতে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ফুলের গাছ। বনায়নের উদ্দেশ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ বন বিভাগের সাথে পরিকল্পনা করে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই গাছের চারাগুলো রোপণ করেছেন।

জানা যায়, কলেজর অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সালেহ আহমদের ঐকান্তিক বনায়নের প্রচেষ্টায় বিশাল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। পাশাপাশি এমসি কলেজের ইতিহাসে এর আগে এতো বড় পরিসরে কখনো বৃক্ষ রোপণ হয়নি বলে জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ।
 
সিলেট এমসি কলেজ সূত্রে জানা যায়, বনায়ন করার লক্ষে কলেজ অধ্যক্ষ মো. সালেহ আহমদ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী সিলেট বনবিভাগের সাথে যোগাযোগ করেন। ‘দেশের বায়ু দেশের মাটি, গাছ লাগিয়ে করবো খাঁটি’ স্লোগানকে সামনে রেখে গতবছর অক্টোবর মাসে বনবিভাগের সাথে এ সম্পর্কিত একটি চুক্তি করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপর কলেজ ছাত্রাবাসে প্রায় ৮০ হাজার বীজ বপন করে নার্সারি করে বনবিভাগ। এর মধ্য থেকে ৭০ হাজারের মতো চারা পাওয়া যায়। এই ৭০ হাজার চারা গাছ কলেজের বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা হয়।  চলতি বছর জুলাই মাসের শেষের দিকে ১৪৪ একরেরে এই ক্যাম্পাসটিতে গাছ লাগানো শুরু হয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব ও নিয়ম মেনে গাছের চারাগুলো রোপণ করা হয়। চলতি মাসে শেষ হয় গাছ লাগানোর কাজ। আগামী দুই বছর বনবিভাগ গাছগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করবে।

এই বনায়ন ছাড়াও বিগত কয়েক বছর যাবত কলেজ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। মূলত কলেজের সৌন্দর্য বর্ধন ও নান্দনিক করতে বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মিশফাক আহমেদ মিশুর নেতৃত্বে ‘জন্মভূমি সবুজের অগ্রযাত্রা’ এই গ্রুপের কয়েকজন  হোস্টেলে প্রবেশের দুই পাশে রাধাচূড়া, ও মাঠে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগিয়েছেন। এছাড়াও কদম কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ার মত নান্দনিক ১হাজার গাছ কলেজ কর্তৃপক্ষ লাগিয়েছেন।

এ ব্যাপারে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সালেহ আহমদ বলেন, কলেজে বনায়নের এই পরিকল্পনা মাথায় আসার পর মূল কাজ করার আগে প্রায় ১০ মাস লেগেছে এর প্রসেস করতে। মন্ত্রণালয়ে আবেদন, প্রস্তাবনা প্রদান, পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এরপর বনবিভাগ আমাদের সাথে চুক্তি করে। চুক্তির পর বন বিভাগ বললো সেকেন্ডারি চারা লাগালে গাছ বৃদ্ধি পাবে কম । কিন্তু প্রাইমারি চারা (বিচি থেকে যে চারা হয়) সেটা লাগালে গ্রোথ ভাল হয়। তাই প্রথমে প্রাইমারি চারা করার জন্য কলেজ হোস্টেলের পাশে নার্সারি করে বনবিভাগ। এরপর গত জুলাই থেকে গাছ লাগানো শুরু করে বনবিভাগ। কোনো ক্যাম্পাসের কোনো টিলা খালি নেই। সব টিলায় গাছ লাগানো হয়েছে পরিকল্পনা করে। উঁচু টিলাগুলোতে বনজ গাছ, ক্যাম্পাসে ফলদ ও ওষুধি গাছ। হোস্টেলে আশপাশে ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। মূলত দুই ভাবে গাছ লাগানো হয়েছে। যার একটি হচ্ছে বনায়ন। এটা বনবিভাগের সাথে চুক্তি করে ৭০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এর বাইরে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে।  

অধ্যক্ষ মো. সালেহ আহমদ বলেন, এই বনায়ন প্রকল্প সম্পন্ন করতে বনবিভাগ ও বন মন্ত্রণালয়ের একদিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সহায়তায় করেছেন। এর ফলে এমসি কলেজ ক্যাম্পাস এখন একটি অক্সিজেন ফ্যাক্টরি। আগাছায় ভরা টিলাগুলোতে এখন সবুজের সমারোহ। একটা সময় আমি আর কলেজের দায়িত্বে থাকবো না। কিন্তু এই গাছগুলো থাকবে। গাছগুলো আমার কলেজের শিক্ষার্থীদের বিশুদ্ধ অক্সিজেন দেবে, ছায়া দেবে। এতেই আমার মনে প্রশান্তি আসবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত