বড়লেখা প্রতিনিধি:

০৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ২২:৩০

ফলাফলে কারসাজির অভিযোগ, পুণরায় ভোট গণনার দাবি ৬ প্রার্থীর

মৌলভীবাজারের বড়লেখায়

বড়লেখায় সদ্য সমাপ্ত তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ভোট গণনায় নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ছয়জন পরাজিত সদস্য প্রার্থীরা এই অভিযোগ তুলেছেন। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে পুনরায় ভোট গণনার দাবিতে তারা পৃথকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করেছেন। তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে বড়লেখার ১০ ইউপিতে গত ২৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোট গণনায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুনরায় গণনার দাবি জানিয়েছেন নিজবাহাদুরপুর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত সদস্যপ্রার্থী রশীদ আহমদ সোনাম, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী ছলিম উদ্দিন, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্যপ্রার্থী নীলা রানী দাস, সুজানগর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী দেলওয়ার হোসেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম ও তালিমপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী মো. মামুনুর রশীদ।

নিজবাহাদুরপুর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী রশিদ আহমদ সোনাম লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, নিজবাহাদুরপুর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গল্লাসাঙ্গন দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। ভোট গণনার সময় প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসাররা তার ৫৩টি ব্যালট অবৈধ বলে জানান। এসময় তার এজেন্ট ভোট বাতিল করার বিষয়টি নিয়ে কথা বললে প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসাররা এজেন্টের কথার গুরত্ব না দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেন। এতে তার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীকে ৫ ভোটে বিজয়ী দেখানো হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার জোরপূর্বক ফলাফল শীটে তার এজেন্টের স্বাক্ষর নেন। কিন্তু তাকে দেওয়া ফলাফল শীটে কোনো স্বাক্ষর দেননি। ওই কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদের ফলাফল শীটে ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয় ১৩৩৫টি এবং মেম্বার পদে দেখানো হয় ১৩৪৬টি। এই বড় ব্যবধান হওয়ায় ভোট গণনায় কারসাজির বিষয়টি স্পষ্ট হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্যপ্রার্থী রশিদ আহমদ সোনাম বলেন, ‘ভোট গণনায় আমার ৫৩টি ভোট বাতিল দেখানো হয়। আমার এজেন্ট প্রতিবাদ করলে জোরে তার স্বাক্ষর নিয়ে বের করে দেওয়া হয় গণনা কক্ষ থেকে। পরে আমাকে ৫ ভোটে পরাজিত ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলাফল ঘোষণার পর দিন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বার পদেও রেজাল্ট শীট মিলিয়ে দেখি বড় ধরণের অসংগতি। একই কেন্দ্রে তিন শীটে তিন রকম ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয়। তারা আমাকে পরাজিত করতেই এতটি ভোট বাতিল দেখিয়েছে। নানা কৌশল নিয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন দিয়েছি। এখানে না হলে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করব। আমার বিশ্বাস আদালতের মাধ্যমে ভোট গণনা হলে আমি বিজয়ী হব।’

একই ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী ছলিম উদ্দিন লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, তিনি টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করেন। নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ চলাকালীন ভাগাডহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তার পোলিং এজেন্ট বদরুল ইসলামকে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর এজেন্টরা জোরপূর্বক কেন্দ্র থেকে বের করে জালভোট প্রদান করেন। ভোট গণনার সময়ও তার এজেন্টতে থাকতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল শীটও প্রদান করা হয়নি। ভোট চলাকালীন অনিয়মের বিষয়ে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে মৌখিক অভিযোগ করলে তিনি প্রতিকারের আশ্বাস দেন। জাল ভোট প্রদান ও গণনার অনিয়মে তাকে পরাজিত করা হয়। এজন্য তিনি ভোট পুনরায় গণনা ও গেজেট প্রকাশ স্থগিতের দাবি জানান। নির্বাচন কমিশনে প্রতিকার না পেলে তিনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী ছলিম উদ্দিন বলেন, ‘নানা কৌশলে আমাকে পরাজিত দেখানো হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন দিয়েছি। এসব দপ্তরের মাধ্যমে গণনা না হলে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করব। আদালতের মাধ্যমে ভোট গণনা হলে আমি বিজয়ী হব বিশ্বাস করি।’

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম সাদিকুর রহমান বলেন, পুনরায় নির্বাচন কিংবা ভোট পুনরায় গণনার ক্ষমতা তার হাতে নেই। পরাজিত সদস্যপ্রার্থীরা ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। আদালতের নির্দেশ পেলে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত