নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ২৩:৫০

শাবি ফটকের ব্যারিকেড ও উপাচার্য ভবনের অবস্থান তুলে নিলেন শিক্ষার্থীরা

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দােলনরত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তবে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের আহমদের বাসার সামনে যে যে মানববপ্রাচীর তৈরি করা হয়েছিলো তা তুলে নেওয়া হবে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে যে ব্যারিকেড দিয়েছিলেন আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তা তুলে নিয়েছেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৬ জানুয়ারি আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। গত ১৯ জানুয়াির থেকে এই দাবিতে অনশন শুরু করেন ২৮ শিক্ষার্থী। তবে বুধবার সকালে অধ্যাপক মুহম্সদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের অনুরোধে অনশন প্রত্যাহার করেন তারা।

একটি হলের প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামেন ছাত্রীরা। ১৬ জানয়ারি থেকে উপাচার্য পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা।

এদিকে, টানা ১০ দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্যাম্পাস উত্তাল থাকলেও বুধবার দুপুরের পর থেকেই অনেকটাই নীরব ছিলো ক্যাম্পাস। পুরো ক্যাম্পাসে দিনভর আন্দোলনকারীদের তেমন উপস্থিতি ছিলো না। ১০ দিনরে উত্তাল ক্যাম্পাস বুধবার ছিলো একেবারেই শান্ত সুনসান। কোথাও কোন কর্মসূচী ছিলো না।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী উমর ফারুক বলেন, বুধবার সকালে অনশন ভাঙ্গার পর সকলেই বিশ্রামে চলে যায়। এরপর অনশনকারীদের মধ্যে হগাসপাতালে থাকা ২০ জনকে দেখতে যান কয়েকজন। একারণে দিনে আমাদের কো্ন কর্মসূচী ছিলো না। বিকেলে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে কয়েকজন শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন। এরপর আমরা নিজেরা বৈঠক করি।

জানা যায়, সন্ধ্যার পর নিজেের নিয়ে বৈঠক করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে পরবর্তী করণীয় নিয়ে কথা বলেন। এরআগে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের মধ্যস্ততায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনির সাথে বৈঠক করেন তারা।

করণীয় নির্ধারণে নিজেদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, আপনারা অবগত আছেন যে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে কেয়কজন শিক্ষার্থী ১৬৩ ঘণ্টা ১৭ মিনিট যাবত অনশনরত থাকার পর মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এবং ইয়াসমিন হক ম্যামের অনুরোধে অনশন থেকে সরে আসে। আমরণ অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসার মূল কারণ ছিল আমাদের এক দফা দাবি মেনে নেয়া হবে এ আশ্বাস। তবে সাথে সাথে আন্দোলনকারীরা এও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে আপাতত অনশন থেকে সরে আসা হলেও উপাচার্যের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, আজ দুপুরে শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে জাফর ইকবালকে লিখিতভাবে তাদের দাবিগুলো হস্তান্তর করা হয়।

রাজ বলেন, আমাদের ৫ টি দাবির মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অর্থদানের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত ৫ জন সাবেক শাবি শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর হয়েছে, অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের নামে করা মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে, অনশনকারী শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা খরচ মিটিয়ে দেয়া হয়েছে এবং ১৬ জানুয়ারি উপাচার্যের মদদে সংঘটিত পুলিশী হামলায় গুরুতর আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

রাজ আরও বলেন, আমাদের মূল দাবি উপাচায় ফরিদ উদ্দিন প্রত্যাহার এবং ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণের ব্যাপারে এখনও কোন সিদব্ধান্ত হয়নি। তবে জাফর স্যার এবং ইয়াসমিন ম্যাম শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই দাবি পুরণে দায়িত্বশীলদের সাথে আলাপ করার দায়িত্ব নিয়েছেন। একই সাথে ক্যাম্পাসের সমস্ত আবাসিক হল যা বর্তমানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে সচল রেখেছে সেগুলোও পুরোদমে চালু হবে বলে জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাজ বলেন, জাফর স্যার এবং ইয়াসমিন ম্যামের অনুরোধে শীঘ্রই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক এবং উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বরাবরের মত ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের দখলে থাকবে এবং উপাচার্যের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও আগামীতে কী কর্মসূচী থাকবে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু বলেননি রাজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত