এস আলম সুমন , কুলাউড়া

০৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৭:২৭

কুলাউড়ায় আন্তঃনগর ট্রেনে আসন সংকট চরমে

কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী ট্রেনে আসন সংকট চরম আকার ধারণ করছে।

প্রতিদিন বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া এই ৩ উপজেলার দুই সহস্রাধিক যাত্রী এ রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় ট্রেনে যাতায়াতের চাহিদা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু বগি সংকটসহ নানা কারণে চাহিদার বিপরীতে পাল্লা দিয়ে কমছে আসন সংখ্যা।

বগি সংস্কারের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী সবকটি আন্তঃনগর ট্রেনের বগি কমানোয় আসন সংকট আরো তীব্রতর হয়ে উঠেছে।

গত দুই বছর থেকে প্রতিটি ট্রেনেই আগের চেয়ে আসনসংখ্যা কমেছে অর্ধেকের চেয়ে বেশি এবং সেই সাথে কমেছে যাত্রীসেবার মান। নানা সমস্যার পাশাপাশি কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট যাত্রীদের কাছ থেকেও হাতিয়ে নিচ্ছে দিগুণ টাকা।

ফলে কুলাউড়া স্টেশন থেকে যাতায়াতকারী ট্রেন যাত্রীরা প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হন অসুস্থ, বৃদ্ধ ও মহিলা যাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ে টিকেট কাউন্টারে গিয়ে টিকেট চাইলেই হরহামেশা শুনতে হয় সীট খালি নাই!

এদিকে এশিয়ার বৃহৎ হাকালুকি হাওর, মাধবকুন্ড ও চা বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসা দেশ বিদেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার পর্যটকদেরও ফেরার পথে টিকেট সংকটে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত।

কুলাউড়া রেল স্টেশন সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিন ৬ টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে।

এ স্টেশন থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনী এক্সপ্রেসে ঢাকা পর্যন্ত আসন ছিলো ৯০টি। বর্তমানে প্রথম শ্রেণির সিট ৪টি, শোভন চেয়ার ২০টি ও শোভন ৫০টি মিলিয়ে মোট ৭৪টি  আসন রয়েছে।

আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে ঢাকা পর্যন্ত আসন ছিলো ৭২টি। বর্তমানে আসন রয়েছে প্রথম চেয়ার ৯টি, শোভন চেয়ার ১৮টি মিলিয়ে মোট ২৭টি।

আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেসে ঢাকা পর্যন্ত ১১১টি আসন ছিলো। বর্তমানে আসন রয়েছে প্রথম সিট ৩টি ও শোভন চেয়ার ৩০টি মিলিয়ে মোট ৩৩টি।

আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেসে ঢাকা পর্যন্ত আসন ছিলো ৯৪টি। বর্তমানে আসন রয়েছে প্রথম বার্থ ৬টি, প্রথম চেয়ার ১০টি, শোভন চেয়ার ২০টি ও শোভন ২০টি মিলিয়ে মোট ৬১টি।

চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসন ছিলো ২৬টি। বর্তমানে আসন রয়েছে এসি চেয়ার ৪টি, প্রথম সিট ২টি, শোভন ১৩টি মিলিয়ে মোট ১৯টি। এ রুটে আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসন ছিলো ৩৫টি। বর্তমানে আসন রয়েছে মোট ২৫টি।

সরেজমিনে গেলে জানা যায়, অন্যান্য রুটের মত কুলাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত প্রতিটি ট্রেনে আসন সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেসে প্রতিদিনই  প্রায় ৪ সহস্রাধিক যাত্রী কুলাউড়া থেকে সিলেট যাতায়াত করেন। এ ট্রেনে আসন রয়েছে মাত্র ৩০টি।

পারাবতে সিলেট যাওয়ার জন্য দু’দিন আগে কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যায়নি, কিন্তু ট্রেন ছাড়ার ঘন্টাখনেক আগে ব্ল্যাকারের মাধ্যমে ৫৫ টাকার টিকিট ৯০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে বলে জানান শাকির হোসেন নামে এক যাত্রী।

ভোগান্তির শিকার বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, টিকেট চাইতে গেলে কাউন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তি বলেন সিট নাই শেষ। স্ট্যান্ডিং টিকেট করেও ট্রেনে ওঠে হকার, ভিক্ষুক ও টোকাইদের উপদ্রবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

রাসেল আহমদ ও মাসুক আহমদ নামে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্ধারিত সময়ে কাউন্টারে টিকেট চাইতে গেলে টিকেটের হদিস পাওয়া যায়না। কিন্তু প্লাটফর্মে কালোবাজারি সিন্ডিকেট সদস্যরা কাউন্টার থেকে ভোরে টিকেট কেটে রাখেন। পরে নির্ধারিত ট্রেন স্টেশনে পৌঁছলে টিকেট ব্ল্যাকাররা সোর্সের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে টিকেট দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেন। বিষয়টির ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে একটা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।

আসন সংকটের সত্যতা স্বীকার করে কুলাউড়া স্টেশন মাস্টার মির্জা শামছুল আলম বলেন, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যাত্রীর আসনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। আসন বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে  রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

টিকেট কালোবাজারির ব্যাপারে তিনি বলেন, সবার সহযোগিতা পেলে স্টেশনের প্রফেশনাল টিকেট ব্ল্যাকারদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত