আমীর হামজা, হবিগঞ্জ

১১ মে, ২০২২ ১৩:০৩

নেই পর্যাপ্ত জনবল, তবুও সেবায় সেরা

স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে দেশজুড়ে যখন নানা সমালোচনা, তখন আলো দেখাল হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেবা ও মানের দিক থেকে বোঝার উপায় নেই যে, এটি কোনো সরকারি হাসপাতাল। লোকবলসংকটের মধ্যেও শতভাগ চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলায় স্বাভাবিক প্রসূতি সেবায় রেকর্ডও গড়েছে হাসপাতালটি।

রোগীরা বলছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ। ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মাসহ যেকোনো ধরনের চিকিৎসা পাওয়া যায় হাসপাতালটিতে। হাসপাতালের এই সেবা আগামীতেও অব্যাহত রাখার দাবি তাদের।

২০১৮ সালের ১ জুলাই ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এরপর ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগ দেন ডা. আব্দুস সামাদ। ৫০ শয্যার জন্য জনবল না বাড়লে ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই আব্দুস সামাদের দক্ষ নেতৃত্বে সেবার গুণগত মান বেড়েছে কয়েক গুণ।

হাসপাতালে এনসিডি কর্নার (সংক্রমণ রোগ), এএনসি (প্রসবসেবা) ও টিএনসি (টেলিমেডিসিন সেবা) কর্নার চালু রয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ডেন্টাল কর্নার। ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা ফুল কোর্স ও উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা দেওয়া হয় হাসপাতালটিতে।

জেলার ৯টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে প্রতি মাসেই স্বাভাবিক প্রসূতি সেবায় রেকর্ডও গড়েছে হাসপাতালটি। শুধু সেবা নয়, হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে সাজানো হয়েছে নান্দনিকভাবে। হাসপাতালের বাইরে নান্দনিক ফুলের বাগান লাগিয়েছে। হাসপাতালের ভেতরেই ব্যবস্থা করা হয়েছে নারীদের নামাজের ব্যবস্থা।

উপজেলার রাজাবাদ গ্রামের মরিয়ম বেগম বলেন, ‘নবীগঞ্জ হাসপাতাল এখন আগের আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। যেকোনো রোগ নিয়া আইলে ওষুধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া হাসপাতালে আগে ময়লা-আবর্জনা ছিল। এখন সুন্দর পরিবেশ হইছে।’

দেবপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, ‘আগে আমি নবীগঞ্জ হাসপাতালে খুব একটা আইতাম না। এখন সেবা ভালো দেওয়া কোনো দরকার হলেই হাসপাতালে আসি। আমরা চাই হাসপাতালের মান আরও বাড়ুক। গরিব অসহায় মানুষেরা যাতে ভালো সেবা পায়।’

কামড়াখাই গ্রামের চম্পা রাণী বলেন, ‘আমরা সাত দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। সরকারি হাসপাতাল হলেও মান ভালো। ঘণ্টায় ঘণ্টায় চিকিৎসকেরা দেখে যান।’

আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) চম্পক কিশোর সাহা সুমন বলেন, ‘ডায়াবেটিক ও উচ্চরক্তচাপের যে রোগীরা রয়েছে তাঁদের আমরা আলাদাভাবে চিকিৎসা দিচ্ছি। অনলাইনে ডেটাবেইস তৈরি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে যখন রোগীর ওষুধ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন রোগীকে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে হাসপাতালে আসার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল বাড়েনি। তবুও যে জনবল আছে, তাঁদের আন্তরিকতার কারণে আমাদের সেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) আব্দুস সামাদ বলেন, হাসপাতালে এনসিডি, এএনসি, টিএনসি, আইএমসি কর্নার চালু রয়েছে। এখানে প্রতিদিন ৬০০ রোগী চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা ফুল কোর্স ও উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে আমি ছোট দুটি বাগান করেছি। নারীদের নামাজের ব্যবস্থা করেছি। এসব করা সম্ভব হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতার কারণে।’

নরমাল ডেলিভারির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জেলার সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ডেলিভারি করছি প্রতি মাসে। মাসে গড়ে ৯০ থেকে শতাধিক স্বাভাবিক প্রসূতি সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে জনবলসংকটের সমাধান হলে সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত