নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ মে, ২০২২ ১৩:২৭

গোয়াইঘাটে ইউএনও’র পাঞ্জাবি বিতরণ নিয়ে তোলপাড়, তদন্তের দাবি

ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে পাঞ্জাবি বিতরণ করেছিলেন সিলেটে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান। তবে, এই পাঞ্জাবি বিতরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ লোকমুখে চলছে সমালোচনার ঝড়।

ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এক হাজার পাঞ্জাবি বিতরণের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লেও “ঈদ উপঢৌকন” হিসেবে অর্ধ শতাধিক পাঞ্জাবি বিতরণের কথা স্বীকার করেন ইউএনও তাহমিলুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, তিনি “সাইবার বুলিং”-এর শিকার।

পাঞ্জাবি উপহার পেয়েছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঈদে উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব, আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা ও পর্যটন কেন্দ্রসমূহে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদের পাঞ্জাবি উপহার দেন তাহমিলুর রহমান।

ইউএনও’র দেওয়া পাঞ্জাবি ফেরত দিয়েছেন মন্তব্য করে গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১০ নম্বর আলীরগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া হেলাল জানান, কার টাকায় কী উদ্দেশ্যে এই পাঞ্জাবি বিতরণের মহোৎসব পালন করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। তাই এ ঘটনা তদন্তও দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘কত বছর ধরে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছি, কিন্তু এভাবে কখনো কোনো ইউএনও বা সরকারি কর্মকর্তাকে গণহারে উপঢৌকন বা উপহার বিতরণ করতে দেখিনি। তার কার্যক্রমে বোঝা যাচ্ছে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের মাঝে ঈদের উপহার বিতরণ করছেন। তবে, কার টাকায়, কী উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ পাঞ্জাবি বিতরণ করা হলো তা সবার জানা দরকার।’

‘ইউএনও’র কর্মকাণ্ডে সরকারের বদনাম হচ্ছে, আমাদের দলেরও বদনাম হচ্ছে,’ তিনি বলেন।

ডৌবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিজাম উদ্দিনও ইউএনও’র পাঞ্জাবি ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ইউএনও তাহমিলুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ঈদের সৌজন্য হিসেবে ৩০ থেকে ৩৫টি পাঞ্জাবি দেওয়া হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এখানে তো দোষের কিছু নেই। তাদেরকে নিয়েই তো আমরা কাজ করছি। সারা বছর যাদের সঙ্গে কাজ করি তাদেরকে সৌজন্য হিসেবে ঈদের সময় শুধুমাত্র কিছু উপহার দিয়েছি।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এক হাজার পাঞ্জাবি বিতরণ করা হয়েছে’ এমন একটি কথা ছড়ানো হয়েছে। যা সত্য নয়। এক হাজার পাঞ্জাবির দাম দাঁড়ায় ৩৬ লাখ টাকা। এ ধরণের মিথ্যাচার সরকারি কর্মকর্তা ও প্রশাসনের ওপর বড় আঘাত। এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তবে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের পাঞ্জাবি ফেরতের বিষয়টি জানেন না মন্তব্য করে ইউএনও জানান, তিনি পাঞ্জাবি কোথায় ফেরত পাঠিয়েছেন-আমার জানা নেই।

উল্লেখ্য, গত ৩ মে ঈদ-উল-ফিতরের আগে রমজানের শেষ সপ্তাহে সিলেট নগরীর কয়েকটি ফ্যাশন হাউজ থেকে তাহমিলুর রহমান পক্ষে বেশ কিছু পাঞ্জাবি কেনা হয়। আকর্ষণীয় কারুকাজের সুদৃশ্য পাঞ্জাবিগুলো বেশ দামী বলে জানা গেছে। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে “ঈদ উপঢৌকন” লেখা পাঞ্জাবির প্যাকেট তুলে দেন ইউএনও।

পরে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক সাহাব উদ্দিন শিহাব “ঈদ উপঢৌকন হিসেবে এক হাজার পাঞ্জাবি বিতরণ করলেন গোয়াইনঘাটের ইউএনও” শিরোনামে দীর্ঘ পোস্ট দিলে সমালোচনা শুরু হয়ে যায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত